যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে.ডি. ভ্যান্স সোমবার চার দিনের সফরে ভারত পৌঁছেছেন। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এই বৈঠক এমন এক সময়ে হবে যখন বাণিজ্যিক শুল্ক ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে এবং দ্রুত বাণিজ্য চুক্তি নিশ্চিত করতেই এই সফরকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
ভ্যান্স তার পরিবার নিয়ে মূলত ব্যক্তিগত সফরে ভারত এসেছেন। তাজমহল পরিদর্শন এবং জয়পুরে বক্তৃতা দেওয়ার পাশাপাশি প্রথম দিনেই মোদির সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, ভ্যান্সের স্ত্রী উষা ভারতীয় বংশোদ্ভূত।
রোমে পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে ইস্টার সানডে ব্যক্তিগত বৈঠকের পর ভ্যান্স সোমবার নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দরে পৌঁছান। ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটনে ট্রাম্প-মোদি বৈঠকে যে দ্বিপাক্ষিক এজেন্ডা ঠিক হয়েছিল, তার অগ্রগতি পর্যালোচনা করবেন দুই নেতা। এতে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যে ‘ন্যায্যতা’ এবং প্রতিরক্ষা অংশীদারত্ব বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয় থাকবে।
ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম দিকেই তার সঙ্গে বৈঠক করা বিশ্বনেতাদের একজন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাণিজ্য চুক্তির অংশ হিসেবে ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত পণ্যের অর্ধেকেরও বেশি পণ্যের শুল্ক কমাতে রাজি হয়েছে। ২০২৪ সালে এই আমদানির পরিমাণ ছিল ৪১.৮ বিলিয়ন ডলার।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনও ভারতকে ‘শুল্ক অপব্যবহারকারী’ এবং ‘শুল্ক রাজা’ বলে অভিহিত করে আসছেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল গত বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, ভ্যান্সের এই সফর আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও গতিশীল করবে বলে আমরা আশাবাদী।
মার্কিন সরকারের বাণিজ্য তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। ২০২৪ সালে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১২৯ বিলিয়ন ডলার, যেখানে ভারতের উদ্বৃত্ত ছিল ৪৫.৭ বিলিয়ন ডলার।
নয়াদিল্লির কর্মকর্তারা আশা করছেন, ৯ এপ্রিল ট্রাম্প যে ৯০ দিনের জন্য ভারতসহ প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারদের বিরুদ্ধে শুল্ক বৃদ্ধি স্থগিত ঘোষণা করেছেন, তার মধ্যেই দুই দেশ একটি বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছাবে।
ভ্যান্সের এই সফরকে ট্রাম্পের আসন্ন ভারত সফরের প্রস্তুতি হিসেবেও দেখা হচ্ছে। কোয়াড গ্রুপিংয়ের শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে ট্রাম্প বছরের শেষদিকে ভারত আসতে পারেন। এই গ্রুপে রয়েছে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র।
দিল্লিভিত্তিক থিংক ট্যাংক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান হর্ষ পন্ত বলেন, মার্কিন-চীন উত্তেজনা বৃদ্ধির এই সময়ে ভ্যান্সের সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, মার্কিন কূটনীতিতে ভ্যান্সের হাই-প্রোফাইল ভূমিকার কারণে এই সফরের তাৎপর্য আরও বেড়েছে।
মার্কিন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে এসেছেন ভ্যান্স, তবে এই সফরে কোনও চুক্তি সই হবে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ফেব্রুয়ারির বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, এই বছরই দুই দেশ প্রতিরক্ষা অংশীদারত্বের কাঠামো চুক্তি সই করতে পারে। এছাড়া ট্যাংকবিধ্বংসী জ্যাভেলিন মিসাইল ও স্ট্রাইকার ইনফ্যান্ট্রি কমব্যাট ভেহিকলসহ বিভিন্ন অস্ত্র ক্রয় ও যৌথ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথের আগামী কয়েক মাসে ভারত সফরের সময় এসব ক্রয় প্রসঙ্গে আরও আলোচনা হবে।