বিশ্ববাণিজ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যে শুল্কহার ১২৫ শতাংশে উন্নীত করেছে চীন। শুক্রবার বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর কয়েক ঘণ্টা আগেই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা একত্রে ‘একতরফা দাদাগিরির’ বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।
এই ‘দাদাগিরি’ বলতে শি ইঙ্গিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের ধারাবাহিক শুল্ক বৃদ্ধির দিকে। ট্রাম্প চীনা পণ্যে শুল্কহার ১৪৫ শতাংশে উন্নীত করার পরেই চীন পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে এ ঘোষণা দেয়। নতুন শুল্ক শনিবার থেকে কার্যকর হবে।
চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বর্তমান শুল্কের মাত্রা বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা প্রায় শূন্যে নামিয়ে এনেছে। তাই এই পর্যায়ের পর আর প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজন নেই।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র এখন কেবল সংখ্যার খেলা খেলছে। এর আর কোনও বাস্তব অর্থনৈতিক তাৎপর্য নেই। ওয়াশিংটন যদি এই খেলা চালিয়েই যায়, বেইজিং সেটিকে আর গুরুত্ব দেবে না।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরও বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের লাগাতার শুল্কবৃদ্ধির জন্যই বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা, বাজারে ধস এবং বহুপক্ষীয় বাণিজ্যব্যবস্থায় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এর পূর্ণ দায় যুক্তরাষ্ট্রকে নিতে হবে।
চীনের দাবি, অন্যান্য দেশের ওপর শুল্ক সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত ট্রাম্প নিয়েছেন আংশিকভাবে চীনের চাপেই। তবে চীনের প্রতি ‘অশ্রদ্ধার’ কারণ দেখিয়ে তিনি চীনা পণ্যে শুল্ক আরও বাড়িয়েছেন বলে জানান।
এর আগে বুধবার চীনা পণ্যে শুল্ক ১২৫ শতাংশে উন্নীত করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। জবাবে বৃহস্পতিবার চীনও ৩৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল। শুক্রবারের সিদ্ধান্তে সেটিই ১২৫ শতাংশে উন্নীত হলো।
শি জিনপিং শুক্রবার বেইজিংয়ে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি বলেন, শুল্ক যুদ্ধে কেউ জয়ী হবে না। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অনুরোধ করেন চীনের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে, যেন যুক্তরাষ্ট্রের চাপ মোকাবিলা করা যায়।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া শিকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, চীন ও ইউরোপের উচিত যৌথভাবে আন্তর্জাতিক দায়িত্ব পালন করা এবং একতরফা দমনমূলক নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। এতে কেবল নিজেদের বৈধ অধিকার রক্ষা হবে না, বরং বৈশ্বিক ন্যায্যতা ও সুবিচারও রক্ষা পাবে।
একই সময় হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, আমি প্রেসিডেন্ট শিকে ভালো করেই চিনি। তিনি নিজের দেশের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। আমি নিশ্চিত, আমরা একটা চুক্তিতে পৌঁছাতে পারব।
তিনি আরও বলেন, এই চুক্তি কেবল যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের জন্য নয়, বরং সারা বিশ্বের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে।
বিশ্লেষকদের মতে, বাণিজ্যযুদ্ধ এখন শুধু শুল্ক নিয়ে নয়, বরং ভূ-রাজনৈতিক প্রতিপত্তি, জোটের কৌশল এবং বৈশ্বিক নেতৃত্বের প্রশ্নেও রূপ নিচ্ছে। ট্রাম্প এবং শি জিনপিংয়ের কথাবার্তায় আপাত শান্তির ইঙ্গিত থাকলেও বাস্তবে উত্তেজনা কমার কোনও লক্ষণ এখনই দেখা যাচ্ছে না।