যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতির জবাবে পাল্টা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। বুধবার ইইউভুক্ত দেশগুলো এ সিদ্ধান্ত নেয়। আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে এ শুল্ক কার্যকর হবে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ব বাণিজ্যযুদ্ধ নতুন মাত্রা পেতে যাচ্ছে।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প ইইউর পণ্যে ২০ শতাংশ এবং চীনের পণ্যে ১০৪ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেন। এর জবাবে ইইউ যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালুমিনিয়াম, ইস্পাত ও কৃষিপণ্য (বিশেষ করে সয়াবিন) লক্ষ্য করে শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে।
সয়াবিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ?
সয়াবিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিখাতের অন্যতম প্রধান উৎপাদন। দানা শস্য, পশুখাদ্য বা তেল—সব ধরনের সয়াবিন পণ্য দেশটির জিডিপির প্রায় শূন্য দশমিক ৬ শতাংশের যোগানদাতা। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ৫ লাখের বেশি সয়াবিন উৎপাদনকারী রয়েছে। ২০২৩ সালের এক প্রতিবেদন বলছে, এই খাতে ২ লাখ ২৩ হাজার পূর্ণকালীন চাকরি সৃষ্টি হয়েছে।
সয়াবিন শিল্পের আকার ১২৪ বিলিয়ন ডলার—যা কেনিয়া বা বুলগেরিয়ার পুরো অর্থনীতির চেয়ে বড়। উৎপাদনের অর্ধেকের বেশি ৮০টি দেশে রফতানি করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সয়াবিন রফতানিকারক।
যুক্তরাষ্ট্র কোথায় সয়াবিন রফতানি করে?
২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ২৭ বিলিয়ন ডলারের সয়াবিন রফতানি করেছে। এর মধ্যে চীন একাই কিনেছে ১৫ বিলিয়ন ডলারের সয়াবিন। এরপরই রয়েছে ইইউ—বিশেষ করে জার্মানি, স্পেন ও নেদারল্যান্ডস, যারা প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের সয়াবিন আমদানি করে।
ইউএস সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিলের প্রধান জিম সাটার বলেন, ৩৪ শতাংশ শুল্ক মার্কিন সয়াবিনের ওপর বিশাল ক্ষতির কারণ হতে পারে। এতে করে চীনে মার্কিন সয়াবিন রফতানি কার্যত বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালের প্রথম বাণিজ্যযুদ্ধের পর থেকেই দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো, বিশেষ করে ব্রাজিল, চীনে সয়াবিন রফতানিতে যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে দেয়।
তবে দ্রুতই একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তি হবে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন জিম সাটার।
চীন ও ইইউ কী সয়াবিনে শুল্ক বাড়াবে?
ইইউ ২৮ বিলিয়ন ডলারের যুক্তরাষ্ট্রি পণ্যে শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে সয়াবিনও রয়েছে। আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে প্রথম ধাপে শুল্ক কার্যকর হবে।
অন্যদিকে, চীন ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রি সয়াবিনে ১০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে। শনিবার তারা সব মার্কিন পণ্যে অতিরিক্ত ৩৪ শতাংশ শুল্ক যোগ করে, যা সয়াবিনের ক্ষেত্রে দাঁড়ায় ৪৪ শতাংশ। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ায় চীনে যুক্তরাষ্ট্রি সয়াবিনের শুল্ক দাঁড়াবে ৯৪ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকদের প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন চাষিরা ট্রাম্পকে চীন, ইইউ ও মেক্সিকোর ওপর শুল্ক প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। আমেরিকান সয়াবিন অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান অর্থনীতিবিদ স্কট গেরল্ট বলেছেন, ২০২৪ সালে আমাদের রফতানির ৫২ শতাংশই চীন কিনেছে। তাদের বিকল্প খুঁজে পাওয়া সহজ নয়।
কৃষক ডেভিড ওয়ালটন বলেছেন, বাণিজ্যযুদ্ধ যদি শরৎ পর্যন্ত চলতে থাকে, তাহলে অনেক কৃষক ব্যবসা গুটিয়ে নেবেন।
রাজনৈতিক প্রভাব
সয়াবিন যুদ্ধের রাজনৈতিক প্রভাবও থাকতে পারে। ট্রাম্প এ পর্যন্ত নির্বাহী আদেশে শুল্ক বসিয়েছেন, কংগ্রেসকে এ বিষয়ে মতামত দিতে দেননি। তবে রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ডন বেকন ও চাক গ্র্যাসলি এবং ডেমোক্র্যাট সিনেটর মারিয়া ক্যান্টওয়েল নতুন আইন প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন, যা ট্রাম্পকে যেকোনো নতুন শুল্কের আগে কংগ্রেসকে জানাতে বাধ্য করবে।
রিপাবলিকান হাউজ স্পিকার মাইক জনসনের রাজ্য লুইজিয়ানা থেকে ইইউতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব সয়াবিন রফতানি হয়। তিনি শুল্ক বৃদ্ধির পক্ষে মত দিয়েছেন। গত সপ্তাহে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, অর্থনীতিতে প্রেসিডেন্টের সহজাত প্রবৃত্তিতে বিশ্বাস রাখা উচিত। শুরুতে কিছু সমস্যা হতে পারে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব আমেরিকানের জন্যই এটি ভালো হবে।
সূত্র: আল জাজিরা