চার বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধ, তীব্র খাদ্য সংকট ও অর্থনৈতিক মন্দার পর এবার শক্তিশালী ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত মিয়ানমার। শুক্রবার সাগাইং শহরে ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানার পর ধ্বংসযজ্ঞের খবর পাওয়া গেছে মান্ডালয় ও রাজধানী নেপিদোতেও।
ভূমিকম্পপ্রবণ এই দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ নতুন নয়, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তা ছয়টি অঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারি করেছে এবং আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে। তবে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে উদ্ধার তৎপরতা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা।
১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতার পর থেকেই মিয়ানমার অস্থিরতায় ভুগছে। ২০১১ সালে গণতান্ত্রিক সংস্কারের আভাস দেখা গেলেও ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে। ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) নেত্রী অং সান সু চিকে গ্রেফতার করা হয়।
সেনাবাহিনীর দমনপীড়নের বিরুদ্ধে শুরু হয় বিক্ষোভ, যা রূপ নেয় গৃহযুদ্ধে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এ যুদ্ধে ৩৫ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। খাদ্য সংকট নজিরবিহীন স্তরে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)।
সাগাইং অঞ্চলে আঘাত হানা ভূমিকম্পটি এসেছে এমন সময়ে, যখন এই এলাকা বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও সেনাবাহিনীর মধ্যে তুমুল লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দু। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী নেপিদোর একটি হাসপাতাল গণহতাহতের এলাকাতে পরিণত হয়েছে।
হাসপাতালের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা এএফপিকে বলেছেন, শত শত আহত আসছেন, কিন্তু জরুরি ভবনটিও ধসে পড়েছে। মান্ডালয়ে ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে লোকজনকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
জাতিসংঘ ইতোমধ্যে জানিয়েছে, অর্থায়নের অভাবে আগামী মাস থেকে মিয়ানমারে ১০ লাখের বেশি মানুষকে সাহায্য বন্ধ করা হবে। এমন পরিস্থিতিতে ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করা আরও কঠিন হবে বলে মনে করছেন মানবাধিকার কর্মীরা।
সেনা অভ্যুত্থানের নেতা জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। ভূমিকম্প পরিস্থিতি সামাল দিতে তাদের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
এদিকে, বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো ভূমিকম্পপীড়িত এলাকায় নিজেদের ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছে। তবে সংঘর্ষের কারণে অনেক এলাকায় সাহায্য পৌঁছানো যাচ্ছে না।
যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ত্রিমুখী সংকটে পড়া মিয়ানমারের সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ দিন দিন বাড়ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ ছাড়া এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয় বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
সূত্র: বিবিসি