ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে সহিংস বিক্ষোভের পর ২৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রবিবার (১৭ নভেম্বর) তাদের গ্রেফতার করা হয়। এর আগের দিন বিক্ষোভকারীরা রাজ্যের বিধায়ক ও মন্ত্রীদের বাড়িতে তাণ্ডব চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনায় শত শত মানুষ কারফিউ অমান্য করে রাস্তায় নেমে আসেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
এ সহিংসতা রাজ্যটির রাজধানী ইম্ফলে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এটি ছিল টানা দ্বিতীয় দিনের সহিংসতা। রাজ্যের একজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, আজ পরিস্থিতি আপাতত শান্ত থাকলেও এটি অস্থির হয়ে উঠতে পারে। আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।
শনিবারের ঘটনার পর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীরা বেশ কয়েকজন বিধায়ক ও মন্ত্রীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছুঁড়ে, এতে আটজন আহত হন।
শনিবারই মণিপুরে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয় এবং ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিক্ষোভকারীরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংসহ বেশ কয়েকজন বিধায়কের বাড়ি আক্রমণের চেষ্টা চালান।
বিক্ষোভকারীরা সাম্প্রতিক সহিংস হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। সর্বশেষ ঘটনায় অন্তত দুই নারী ও দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
২০২৩ সালের মে মাস থেকে মণিপুরে মেইতেই ও কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে কমপক্ষে ২৫০ জন নিহত এবং ৬০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
রবিবার সকালে একটি নদীতে মেইতেই সম্প্রদায়ের নিখোঁজ পরিবারের এক নারীর মৃতদেহ পাওয়া যায়। এর আগে শুক্রবার আরও তিনটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। জিরিবাম জেলার এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, মৃতদেহগুলো নিখোঁজ পরিবারের সদস্য হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ ছাড়া রবিবার কুকি সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তির মৃতদেহ পাওয়া যায়। যদিও তার মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত নয়, কর্তৃপক্ষ মনে করছে এটি সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।
গত সপ্তাহে কুকি সম্প্রদায়ের ৩১ বছর বয়সী এক নারীকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। কুকি গোষ্ঠীগুলো এই হত্যার জন্য মেইতেই মিলিশিয়াদের দায়ী করেছে।
বর্তমানে মণিপুর মূলত দুটি জাতিগোষ্ঠীর ভূখণ্ডে বিভক্ত হয়ে গেছে—মেইতেইদের নিয়ন্ত্রণাধীন উপত্যকা এবং কুকিদের নিয়ন্ত্রণে থাকা পাহাড়ি অঞ্চল। এ দুই অঞ্চলের মাঝে রয়েছে একটি এলাকা, যা কেন্দ্রীয় বাহিনী দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।