ওড়িশা রাজ্যে বৃহস্পতিবার রাত ১১ টার পর শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় দানার তাণ্ডব শুরু হয়। এর প্রভাবে রাত থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে কলকাতাসহ দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে। মধ্যরাতে প্রবল জলোচ্ছ্বাসও দেখা গেছে দিঘায়। আবহাওয়া পূর্বাভাসকে সত্যি করে শুক্রবার সকাল থেকেই ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এ প্রভাবে কোথাও কোথাও গাছ ভেঙে পড়েছে তো, কোথাও জমেছে এক হাঁটু জল।
জলাবদ্ধতায় হলদিরাম-কৈখালি-চিনার পার্কে প্রায় হাঁটু সমান পানি জমেছে। নিকাশি নালার কঙ্কালচারের চেহারাও সামনে এলো। বিধাননগর কর্পোরেশন বৈঠক শেষে একাধিক পাম্পের মাধ্যমে জল সরানোর ব্যবস্থা করে। তবে এতেও কোনও সুরাহা হচ্ছে না। সল্টলেকের আইএ ব্লকের রাস্তার ওপর গাছ ভেঙে পড়ে যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। একটি লেনই এখন চালকদের ভরসা।
ঠনঠনিয়াসহ একাধিক স্থানে পানি জমেছে। বৃষ্টির পানি জমেছে কলকাতা পৌরসভার ভিতরেও। রাস্তায় বেরিয়ে নাজেহাল দশায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত লোকাল ট্রেন পরিষেবা বন্ধ থাকার কথা ছিল। তবে শুক্রবার সকালে শিয়ালদহ ডিভিশনে নির্ধারিত সময়ের ১০ মিনিট আগেই রেল পরিষেবা স্বাভাবিক হলো। এদিন সকাল থেকেই সব লাইনের লোকাল ট্রেন চালু হয়েছে। তবে যাত্রীর সংখ্যা অনেক কম। একই ছবি হাওড়া স্টেশনেও। সকাল ১০টার আগেই নামখানা, সোনারপুর, ডায়মন্ড হারবার, ক্যানিংসহ বিভিন্ন স্থানে ট্রেন পরিষেবা চালু হয়েছে।
তবে কোনও কোনও ট্রেন পৌঁছাতে ৩০ মিনিট দেরি হয়েছে। স্টেশনে জমেছে অপেক্ষারত যাত্রীদের ভীড়।
এদিকে, পশ্চিমবঙ্গের সমুদ্র নগরী দিঘায় মধ্যরাতে জলোচ্ছ্বাসও বেড়েছে। শুক্রবার সকালে সৈকতে পর্যটকদের যেতে দিচ্ছে না প্রশাসন। ঝড়টি ওড়িশা রাজ্যের ভিতরকণিকা, বালেস্বর, ভদ্রকসহ পুরো এলাকায় অবস্থান করেছিল। এর জেরে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সৈকত উপকূলে বইছে ঝড়ো হাওয়া। সঙ্গে শুরু হয়েছে প্রবল বৃষ্টিও।
বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটায় ঝড়টি আছড়ে পড়ার সঙ্গে প্রবল জলোচ্ছ্বাসও দেখা যায়। দিঘার আবহাওয়া ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদলাচ্ছে। কখনও আকাশ পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে তো কখনও আবার ঢেকে যাচ্ছে কালো মেঘে। রাতে ঝড়ের দাপট সবচেয়ে বেশি ছিল সুন্দরবন এলাকায়। সাগর, নামখানা, পাথরপ্রতিমায় বেশ কিছু গাছের ডাল ভেঙেছে। রাতেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেই গাছ কেটে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে।
শুক্রবারও পশ্চিমবঙ্গের জেলা জুড়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি রয়েছে। শুক্রবারও জেলার সব ফেরি পরিষেবা বন্ধ থাকবে।
দুর্যোগের জেরে নদী ও সমুদ্রের পানির উচ্চতার বেড়েছে। জলোচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে বকখালি ও মৌসুনী দ্বীপে। বৃষ্টির জেরে এমনিতেই বেহাল বাঁধের মাটি নরম হয়ে রয়েছে। আর এই উত্তাল নদী ও সমুদ্রের ঢেউয়ে নতুন করে বাঁধ ভেঙে প্লাবনের আশঙ্কা তৈরি করেছে। দানার প্রভাবে চরম ক্ষতি হল ধান চাষে। বিঘার পর বিঘা কৃষি জমির ধান মাটিতে মিশে গেছে। পাকা ধান ডুবেছে জলে।
চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা। কৃষকদের দাবি, কয়েকদিন আগে বন্যায় চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল তারা। এবার আঘাত হানলো এই দানা। শুধু ধান চাষ নয়, দানার প্রভাবে আলু চাষও অনেকটা পিছিয়ে যাবে। ক্ষতি হয়েছে সব ধরণের ফসলের। সব মিলিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় জেলার কৃষকেরা।