ভারতের রাজস্থানের পূর্বাঞ্চল ও সংলগ্ন মধ্যপ্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলে গভীর নিম্নচাপের কারণে গুজরাট, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে ফ্লাশ বন্যার আশঙ্কায় রেড অ্যালার্ট জারি করেছে ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর (আইএমডি)। সংস্থাটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই নিম্নচাপটি পশ্চিম দিকে সরে সৌরাষ্ট্র অঞ্চল এবং পার্শ্ববর্তী পাকিস্তানের এলাকায় পৌঁছাতে পারে। যা ২৯ আগস্টের মধ্যে উত্তর-পূর্ব আরব সাগরে অবস্থান করবে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ডিএনএ ইন্ডিয়া ও বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এ খবর জানিয়েছে।
আইএমডি জানিয়েছে, পূর্ব রাজস্থান, পশ্চিম মধ্যপ্রদেশ এবং গুজরাটের আবহাওয়া অধিদফতরের সাব-ডিভিশনের কিছু অঞ্চলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় তীব্র ফ্লাশ বন্যার ঝুঁকি রয়েছে।
সোমবার পশ্চিম মধ্যপ্রদেশ, গঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ, উপকূলীয় কর্ণাটক, ঝাড়খণ্ড, কনকন ও গোয়া, এবং দক্ষিণ অভ্যন্তরীণ কর্ণাটকের কিছু এলাকায় অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার রাজস্থান, মধ্য মহারাষ্ট্র, উপকূলীয় কর্ণাটক এবং কনকন ও গোয়া অঞ্চলেও একই ধরনের আবহাওয়া পরিস্থিতি বিরাজ করবে। বুধবার সৌরাষ্ট্র ও কচ্ছ অঞ্চলে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া গুজরাট, মধ্য মহারাষ্ট্র, উপকূলীয় কর্ণাটক এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।
গুজরাটের কিছু অংশে চলমান ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে ইতোমধ্যে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। শত শত বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। নওসারি জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে আইএমডি ২৬ আগস্টের জন্য এলাকায় ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করেছে।
এছাড়া, উড়িষ্যার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ময়ূরভঞ্জ, কেনঝর, ধেনকানাল, অঙ্গুল, জাজপুর, কেন্দ্রপাড়া, কটক এবং জগৎসিংহপুর জেলা সমূহে আইএমডি কমলা সতর্কতা জারি করেছে।
গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল কর্মকর্তাদের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে নিম্নাঞ্চল থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। দক্ষিণ গুজরাটের যে জেলাগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো হলো ভলসাদ, তাপি, নওসারি, সুরাত, নর্মদা ও পঞ্চমহল। অতিবৃষ্টির ফলে দৈনন্দিন জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছে এবং অনেক এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
রাজ্যের জরুরি পরিচালনা কেন্দ্র (এসইওসি) থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সোমবার সকাল ৬টায় পরিমাপ অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় নওসারি জেলার খেরগাম তালুকায় সর্বোচ্চ ৩৫৬ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। একই সময়ে, নর্মদা, সৌরাষ্ট্র, রাজকোট, তাপি, মহিসাগর, মোরবি, দাহোদ, এবং বড়োদরা সহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি জেলায় ১০০ মিমিরও বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
ক্রমাগত ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে গুজরাটে পানির স্তর উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্দার সরোবর নর্মদা বাঁধের জলস্তর ১৩৫.৩০ মিটার পর্যন্ত পৌঁছেছে। রাজ্যের ২০৬টি জলাধার বর্তমানে ৩ লাখ ৬৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট পানি ধারণ করছে। যা তাদের মোট ধারণক্ষমতার ৬৫ শতাংশ। ফলে, ৭২টি জলাধারে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং ১৫টি জলাধারকে নিয়মিত সতর্কতার মধ্যে রাখা হয়েছে।
পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্রভাই প্যাটেল এবং রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষ সাংভীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। এই কথোপকথনে শাহ তার উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন।