ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের সোয়াত জেলায় ৩৬ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। এমনকি তার মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগও উঠেছে। বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সন্ধ্যায় জেলার একটি মাদিয়ান শহরে এ ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে ২৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শহরটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। সেখানকার এক হোটেলে অবস্থানের সময় ওই পর্যটকের বিরুদ্ধে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন অবমাননার অভিযোগ আনা হয়।
সোয়াত পুলিশ জানিয়েছে, ওই ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। তবে তিনি পাঞ্জাবের শিয়ালকোট থেকে এসেছিলেন। তার বিরুদ্ধে কুরআন অবমাননার অভিযোগ আনা হলেও, তিনি কী করেছেন তা স্পষ্ট নয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ বলেছে, মাদিয়ানের প্রধান বাজার থেকে ওই পর্যটককে গ্রেফতার করে থানায় নেওয়া হয়। কিন্তু বিক্ষুব্ধ জনতা ওই পর্যটককে তাদের হাতে হস্তান্তরের দাবি জানায়। পর্যটককে তাদের হাতে তুলে দিতে অস্বীকৃতি জানালে একসময় পুলিশ স্টেশন ঘেরাও করে জনতা। এ সময় পুলিশ ও জনতার মধ্যে সংঘর্ষ ও গুলি বিমিময় হয়। এতে আট পুলিশ আহত হন।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, এক পর্যায়ে পুলিশ স্টেশন ও পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পর্যটককে টেনে হিঁচড়ে বের করে নিয়ে যায় উত্তপ্ত জনতা। তাকে সবাই মিলে নির্যাতন করে হত্যা করে বলেও জানান তারা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি জ্বলন্ত লাশ ঘিরে বিশাল জনতা ধর্মীয় স্লোগান দিচ্ছে।
ভয়াবহ এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন এফআইআর দায়ের বা কাউকে আটক করা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করেনি পুলিশ। ঘটনার পর শহরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল।
পর্যটনের মৃত্যুর নিন্দা জানিয়েছে খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী আলি আমিন গন্ডাপুর। প্রাদেশিক পুলিশ প্রধানকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলিম সংঘাত বন্ধ করতে ১৮৬০ সালে ধর্ম অবমাননা (ব্লাসফেমি) আইন জারি করেছিল তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ভারত আইনটি বাতিল করলেও পাকিস্তান করেনি। বরং ১৯৭৭ সালে ক্ষমতায় এসে পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়া-উল-হক আইনটি আরও শক্তিশালী করেন। ১৯৮৭ সাল থেকে দুই হাজারের বেশি মানুষের ওপর ব্লাসফেমির অভিযোগ আনা হয়। এদের মধ্যে অন্তত ৮৮ জনকে হত্যা করা হয়।