ভারতের চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ভালো ফলাফল করলেও দলের ৮ মন্ত্রী নিজের কেন্দ্রেই হেরে বসে আছেন! এরমধ্যে ৭ জন বিজেপির কাছে আর একজন কংগ্রেসের কাছে হেরেছেন। পাশাপাশি গেরুয়া শিবির থেকে দলবদল করে তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়ানো ২ প্রার্থী লোকসভা ভোটে শুধু বিজেপির কাছে হারেননি,নিজের বিধানসভা কেন্দ্রেও হেরেছেন।
মালদা জেলার মালদা উত্তর লোকসভা কেন্দ্রে হরিশ্চন্দ্রপুর বিধানসভার বিধায়ক তাজমুল হোসেন রাজ্যের ক্ষুদ্র, মাঝারি উদ্যোগ ও বস্ত্র এবং সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী। তার এলাকায় পিছিয়ে গিয়েছে তৃণমূল।
ওই জেলারই মালদা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রর মোথাবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূলের বিধায়ক সাবিনা ইয়াসমিন সেচ এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী। তার এলাকাতেও পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল।
উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ লোকসভার হেমতাবাদ বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বর্মন রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী। তার এলাকাতেও পিছিয়ে পড়েছে জোড়াফুল।
পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি লোকসভার রামনগর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল গিরির এলাকাতেও পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল।
ওই জেলারই তমলুক লোকসভা আসনে রাজ্যের মৎস্য প্রতিমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরীর বিধানসভা এলাকা পূর্ব পাঁশকুড়ায় পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল।
নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগর লোকসভার কৃষ্ণনগর দক্ষিণ বিধানসভার বিধায়ক রাজ্যের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং জৈব-প্রযুক্তি দফতরের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের কেন্দ্রেও পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল। বিজেপি প্রার্থী অমৃতা রায় লোকসভা আসনটি হারলেও তৃণমূলের থেকে এখানে ৯ হাজার ভোটে এগিয়ে আছেন।
একইভাবে বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের দমদম বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু নিজের কেন্দ্রে দলকে এগিয়ে দিতে পারেনি। এখানে বিজেপি প্রার্থী স্বপন মজুমদার হারলেও এই বিধানসভায় তিনি তৃণমূলের থেকে ১১হাজার ভোটে এগিয়ে আছেন।
উত্তর কলকাতা লোকসভা আসনে শ্যামপুকুর কেন্দ্রে তৃণমূল বিধায়ক রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী শশী পাঁজাও দলকে লিড দিতে পারেননি। তার আসনেও পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল।
ওই লোকসভার জোড়াসাঁকো বিধানসভাতেও সামান্য ভোটে এগিয়ে ছিল বিজেপি। জোড়াসাঁকো বিধানসভায় তৃণমূল পেয়েছে ৪১৮৯৩ টি ভোট, বিজেপি পেয়েছে ৪৯২৯৪ টি ভোট।
কলকাতা পৌরসভা এলাকার তথ্য অনুযায়ী, এবারে ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪৯টি ওয়ার্ডে পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল। এর মধ্যে ৪৫ জনই শাসক দলের কাউন্সিলার। রয়েছেন পাঁচ মেয়র পরিষদ সদস্যও। দক্ষিণ কলকাতার ৮৪ টি ওয়ার্ডের মধ্যে এবারে ২১টিতে পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে এরমধ্যে ৮১টি ওয়ার্ড দখলে রেখেছিল তারা। কলকাতা উত্তরের ৬০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৮টি ওয়ার্ডে জোড়াফুল শিবির পিছিয়ে পড়েছে। এ নিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে দাবি করেছেন, ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ৫৭৯৮ আর তৃণমূলের ৪৩৩০। ৭০ নম্বর ওয়ার্ডে, বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ৬৭১৫ আর তৃণমূলের ৩১৩৮। বাকি ৭১, ৭২ এবং ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডেও দেড় থেকে দু’হাজার ভোটে দক্ষিণ কলকাতার বিজেপি প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরি তুলনায় পিছিয়ে রয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়। আবার রাজ্যের বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা ঝাড়গ্রাম শহরে তাঁর নিজের ওয়ার্ডে দলকে লিড দিতে পারেননি।
বিজেপির প্রার্থী ডা. প্রণত টুডুকে ১ লক্ষ ৭৪ হাজার ৪৮ ভোটে হারিয়ে ঝাড়গ্রাম আসনে জয়ী হয়েছেন তৃণমূলের প্রার্থী কালীপদ সোরেন। কিন্তু ঝাড়গ্রাম পৌরসভায় ১১ টি ওয়ার্ডে হার হয়েছে তার। এরমধ্যে রয়েছে মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদার বাসস্থান ১৮ নম্বর ওয়ার্ডও।
এবার বিজেপির থেকে দলবদল করে যে দু’জন লোকসভায় প্রার্থী হয়েছিলেন তাঁরা যেমন পরাজিত হয়েছেন। তেমনই একজন বিজেপি বিধায়ক নির্দল হয়ে লোকসভা ভোটে দাঁড়িয়ে হেরে গিয়েছেন। রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক মুকুটমনি অধিকারী এবার তৃণমূলের টিকিটে রানাঘাট লোকসভায় দাঁড়িয়ে শুধু হারেননি, নিজের বিধানসভাতেও তিনি বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকারের কাছে ২৭ হাজার ভোটে হেরেছেন। একইভাবে একুশের বিধানসভা ভোটের পর উত্তরবঙ্গের রায়গঞ্জের বিজেপি বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী দলবদল করে তৃণমূলে যান। তিনি এবার তৃণমূলের প্রার্থী হন রায়গঞ্জে। তিনিও শুধু লোকসভায় বিজেপির কাছে হারেননি,নিজের বিধানসভাতেও বিজেপি প্রার্থী কার্তিক পালের কাছে ৪৭ হাজার ভোটে হেরেছেন।
অপরদিকে, দার্জিলিং লোকসভার প্রার্থী বদলের দাবিতে বিদ্রোহ করে নির্দল হয়ে লোকসভা ভোটে দাঁড়ানো বিজেপির কার্সিয়াংয়ের বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তিনি দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে ভোট পেয়েছেন মাত্র ১৮৬৯ ভোট।