যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় অভিযোগ করেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন অনুমোদনহীন পাঠানো একটি চিঠির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে চাপ বাড়াচ্ছে। গত ১১ এপ্রিল সরকারি আইনজীবীদের পাঠানো ওই চিঠিতে হার্ভার্ডের নিয়োগ, ভর্তি ও শিক্ষাক্রমে নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে বলা হয়েছিল। তবে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিঠিটি ট্রাম্প প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমোদন ছাড়াই পাঠানো হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
চিঠি পাওয়ার তিন দিন পর হার্ভার্ড এতে দেওয়া বিভিন্ন শর্ত প্রত্যাখ্যান করে। এরপর ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডের ২৩০ কোটি ডলারের ফেডারেল তহবিল জব্দ করে এবং প্রতিষ্ঠানটির করমুক্ত মর্যাদা ও বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ বাতিলের হুমকি দেয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি সংযোগ, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হয়।
হার্ভার্ডের একজন মুখপাত্র বলেন, প্রশাসন যদি এখন তাদের অতিমাত্রায় হস্তক্ষেপমূলক দাবিগুলো ফিরিয়ে নিতে চায়, তবু সাম্প্রতিক দিনগুলোর কর্মকাণ্ডে তারা বরং সেই দাবিগুলোকে আরও জোরদার করেছে।
জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর কঠোর নজরদারি চালাচ্ছেন। তার দাবি, গত বছরের ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভগুলো ভুলভাবে পরিচালনা করা হয়েছে এবং ক্যাম্পাসে ইহুদিবিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়তে দেওয়া হয়েছে। তবে বিক্ষোভকারীরা, যাদের মধ্যে কিছু ইহুদি গোষ্ঠীও রয়েছে, বলছেন যে গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের সমালোচনাকে ভুলভাবে ইহুদিবিদ্বেষের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রথমে টার্গেট করলেও সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্প প্রশাসনের নজর হার্ভার্ডের দিকে। সেখানে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও পাঠ্যক্রমের ওপর নজরদারি চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদারপন্থি অবস্থানকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে প্রশাসন।
১১ এপ্রিলের চিঠির বিষয়বস্তু সঠিক হলেও ট্রাম্প প্রশাসনের ভেতরে এটি কীভাবে ভুলভাবে পাঠানো হলো তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, হোয়াইট হাউজের কিছু কর্মকর্তা মনে করেন চিঠিটি আগেভাগে পাঠানো হয়েছে, আবার কেউ কেউ মনে করেন এটি প্রথমে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনার জন্য পাঠানো হয়েছিল।
এর আগে, ৩ এপ্রিল হার্ভার্ডকে ফেডারেল তহবিল পেতে আরও কিছু শর্ত পূরণের তালিকা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ছিল মাস্ক নিষিদ্ধ করা, ডাইভার্সিটি, ইক্যুইটি ও ইনক্লুশন প্রোগ্রাম বন্ধ করা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানো। ১১ এপ্রিলের চিঠিতে সেই তালিকা আরও বিস্তৃত করা হয়। এতে কিছু ফিলিস্তিনপন্থি গ্রুপকে স্বীকৃতি না দেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি ভঙ্গকারী বিদেশি শিক্ষার্থীদের কর্তৃপক্ষকে জানানোসহ আরও কিছু দাবি জানানো হয়।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হার্ভার্ড ধারণা করেছিল যে তারা ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংঘাত এড়াতে পারবে। কিন্তু চিঠিটি পাওয়ার পর তারা বুঝতে পারে যে কোনও সমঝোতা সম্ভব নয়। হার্ভার্ড চিঠিটির সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেনি তবে এর দাবিগুলোকে ‘অতিমাত্রায় হস্তক্ষেপকারী’ বলে উল্লেখ করেছে।
হোয়াইট হাউজ এখনও এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।