মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে তার শুল্ক যুদ্ধ ‘ভালোই চলছে’। তবে একই সময়ে মন্দার আশঙ্কা বাড়ছে এবং চীন মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশে উন্নীত করেছে। শুক্রবার ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, আমাদের শুল্ক নীতি খুব ভালো চলছে। এটি আমেরিকা ও বিশ্বের জন্য উত্তেজনাকর! সব দ্রুত এগোচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বিনিয়োগকারী ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিতে মন্দার লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের এই নতুন পর্বে উভয় দেশই কঠোর অবস্থান নিয়েছে। চীনের অর্থমন্ত্রী বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি আরও শুল্ক বাড়ায়, তা অর্থনৈতিকভাবে কোনও প্রভাব ফেলবে না। বরং এটি বিশ্ব অর্থনীতির ইতিহাসে একটি রসিকতা হিসেবেই থেকে যাবে।
মার্কিন শুল্ক নীতির প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ববাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সাধারণত নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত মার্কিন সরকারি বন্ড বিক্রির হার গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ডলারের মানও ইউরো ও পাউন্ডের বিপরীতে কমেছে।
ব্ল্যাকরকের প্রধান নির্বাহী ল্যারি ফিঙ্ক সিএনবিসিকে বলেছেন, আমরা ইতোমধ্যে মন্দার খুব কাছাকাছি, যদি না এর মধ্যে ঢুকে থাকি।
জেপি মরগ্যান চেজের সিইও জেমি ডিমনও সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, অর্থনীতিতে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে দেখা গেছে, মার্কিন ভোক্তাদের মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ১৯৮১ সালের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। আগামী এক বছরে মূল্যস্ফীতি ৬.৭ শতাংশ হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।
ট্রাম্প শুল্ক নীতি শিথিল করার ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছিলেন, এখনই কেনার সেরা সময়! এ নিয়ে ডেমোক্র্যাট নেতারা অভিযোগ তুলেছেন যে, ট্রাম্প ও তার সহযোগীরা বাজার অস্থিরতা থেকে লাভবান হচ্ছেন। সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন ও চাক শুমার সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)-কে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইলন মাস্কের কোম্পানি টেসলা চীনে আমদানিকৃত দুটি মডেলের অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। শুল্ক বাড়ার কারণে মার্কিন গাড়ির দাম চীনে আকর্ষণীয় নয় বলে মনে করা হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিবিদরাও সতর্ক করেছেন, ফেব্রুয়ারিতে ০.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক মনে হলেও ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাবে তা স্থায়ী হবে না।
হোয়াইট হাউজের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লিভিট বলেছেন, অনেক দেশই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করতে আগ্রহী।
ট্রাম্পের সমর্থকরা বিশ্বাস করেন, তার শুল্ক নীতি দীর্ঘমেয়াদে মার্কিন অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে। কিন্তু অর্থনীতিবিদ ও বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ এখনই হতাশ। তারা বলছেন, ট্রাম্পের নীতির কারণে বাজার ও ভোক্তাদের আস্থা কমছে, যা মন্দাকে আরও তীব্র করতে পারে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান