দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূত ইব্রাহিম রাসুলকে ‘জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানো রাজনীতিবিদ’ আখ্যা দিয়ে দেশটিতে তার অবস্থানকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক টুইটে রাসুলের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, রাসুল যুক্তরাষ্ট্র ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেন, তাই তিনি আর যুক্তরাষ্ট্রে স্বাগত নন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট কার্যালয় শনিবার এই সিদ্ধান্তকে ‘অনুশোচনীয়’ বলে অভিহিত করে জানায়, দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারস্পরিক সুবিধাজনক সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি বজায় রেখেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই বিরল পদক্ষেপ দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির সর্বশেষ ঘটনা। সাধারণত নিম্নপদস্থ কূটনীতিকদের বহিষ্কার করা হলেও একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রে অত্যন্ত অস্বাভাবিক।
শুক্রবার এক টুইটে রুবিও ডানপন্থি মিডিয়া আউটলেট ব্রেইটবার্টের একটি নিবন্ধের লিংক শেয়ার করেন। ওই নিবন্ধে রাসুলের কিছু সাম্প্রতিক মন্তব্য উদ্ধৃত করা হয়, যেখানে তিনি ট্রাম্প প্রশাসনকে ‘শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী’ আখ্যা দিয়েছিলেন। রাসুল বলেছিলেন, ট্রাম্প ‘শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদকে জাগ্রত করছেন’ এবং যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠী সংখ্যালঘু হয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে ‘শ্বেতাঙ্গ মানুষের ভুক্তভোগী হওয়ার অনুভূতি তৈরি করছেন’।
রাসুল আরও বলেছিলেন, দক্ষিণ আফ্রিকা আক্রমণের শিকার হচ্ছে কারণ ‘আমরা ঐতিহাসিকভাবে আধিপত্যবাদের প্রতিষেধক’। এর জবাবে রুবিও রাসুলকে ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’ (অবাঞ্ছিত ব্যক্তি) আখ্যা দেন।
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ আফ্রিকার সম্পর্কের অবনতি ঘটছে। গত মাসে এক নির্বাহী আদেশে দক্ষিণ আফ্রিকায় যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই আদেশে দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানারদের বিরুদ্ধে ‘অন্যায্য জাতিগত বৈষম্য’-এর কথা উল্লেখ করা হয়। আফ্রিকানারা মূলত ডাচ বংশোদ্ভূত, যারা ১৭ শতকে প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকায় বসতি স্থাপন করে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন জমি অধিগ্রহণ আইন আফ্রিকানারদের লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়েছে, যা সরকারকে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি কেড়ে নেওয়ার অনুমতি দেয়। ওয়াশিংটনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা যতদিন বিশ্ব মঞ্চে খারাপ অভিনেতাদের সমর্থন করবে এবং নিরীহ সংখ্যালঘু কৃষকদের ওপর সহিংস হামলা হতে দেবে, ততদিন যুক্তরাষ্ট্র দেশটিকে সাহায্য ও সহায়তা বন্ধ রাখবে।’
দক্ষিণ আফ্রিকার ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠী (আফ্রিকানারসহ) মোট জনসংখ্যার ৭দশমিক ২ শতাংশ। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের ২০১৮ সালের জমি অডিট অনুযায়ী, শ্বেতাঙ্গ কৃষকরা দেশটির ব্যক্তিমালিকানাধীন কৃষিজমির ৭২ শতাংশের মালিক।
দক্ষিণ আফ্রিকার আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) নেতৃত্বাধীন সরকার ১০টি দলের জোট। সরকার আগেই বলেছে যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পদক্ষেপ ‘ভুল তথ্য ও প্রচারণার ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে, যা আমাদের মহান জাতিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করছে’।
সরকার জানায়, ক্ষতিপূরণ ছাড়া কোনও জমি অধিগ্রহণ করা হয়নি এবং তা কেবল বিশেষ পরিস্থিতিতেই করা হবে, যেমন জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য জমির প্রয়োজন হলে এবং জমি অর্জনের অন্যান্য সব পথ শেষ হয়ে গেলে।
যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউজের একটি ফ্যাক্ট শিটে বলা হয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকা ‘স্পষ্টভাবে বসতি স্থাপনকারী গোষ্ঠীর বংশধরদের বিরুদ্ধে বৈষম্য করে’।
ইব্রাহিম রাসুল ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি শৈশবে বর্ণবাদী সরকারের সময় কেপ টাউনের ডিস্ট্রিক্ট সিক্স থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ হন। পরবর্তীতে তিনি এই উচ্ছেদকে তার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে বর্ণনা করেন, যা তার ভবিষ্যৎ পথ নির্ধারণ করে। রাসুল ২০২৪ সালে আবারও প্রিটোরিয়ার রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত হন।
দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রগুলো অনলাইন নিউজ সাইট ডেইলি ম্যাভেরিককে জানায়, রাসুলের প্রথম মেয়াদে রাষ্ট্রদূত হিসেবে অভিজ্ঞতা ও যোগাযোগের কারণে তাকে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করার জন্য উপযুক্ত মনে করা হয়েছিল।