ডিমের সংকট ও দাম বৃদ্ধি রোধে ১ বিলিয়ন ডলারের একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) এই পরিকল্পনায় মুরগির বার্ড ফ্লু প্রতিরোধ, পোলট্রি খামারিদের আর্থিক সহায়তা এবং চিকিৎসা ও টিকা গবেষণায় বিনিয়োগের কথা বলেছে। স্বল্পমেয়াদে ডিমের চাহিদা মেটাতে আমদানি বাড়ানোর কথাও ভাবছে সংস্থাটি।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি সচিব ব্রুক রোলিনস দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে একটি সম্পাদকীয়তে লিখেছেন, আমেরিকার কৃষকদের সহায়তা প্রয়োজন এবং ভোক্তাদের সাশ্রয়ী মূল্যে খাদ্য প্রয়োজন। ডিম কিনতে সংগ্রামরত প্রতিটি পরিবারের জন্য বলছি, আমরা আপনাদের কথা শুনছি, আপনার জন্য লড়াই করছি এবং সহায়তা আসছে।
কিন্তু ডিমের সংকট কতটা ভয়াবহ? ট্রাম্পের এই পরিকল্পনার বিস্তারিত কী? আর কত দ্রুত ভোক্তারা স্বস্তি পেতে পারেন? কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে এসব প্রশ্নের জবাব অনুসন্ধান করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দাম কত?
যুক্তরাষ্ট্রে এখন এক ডজন ডিমের গড় দাম ৪ দশমিক ৯৫ ডলার। শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, এটি একটি রেকর্ড উচ্চতা। গত বছরের তুলনায় দাম প্রায় দ্বিগুণ। শিকাগো, নিউ ইয়র্ক এবং সান ফ্রান্সিসকোর মতো বড় শহরগুলোতে দাম আরও বেশি, যেখানে এক ডজন ডিম ৮ থেকে ১০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে।
দাম বৃদ্ধির কারণে অনেক ভোক্তার জন্য ডিম এখন বিলাসিতার সামগ্রীতে পরিণত হয়েছে। ডেনি’স এবং ওয়াফল হাউজের মতো কিছু জনপ্রিয় ব্রেকফাস্ট চেইন ডিমের খাবারের জন্য অতিরিক্ত চার্জ নিচ্ছে। শিকাগোর একজন মুদি দোকানের ক্রেতা জন হ্যারিস রয়টার্সকে বলেছেন, একটি সাধারণ ডিমের স্যান্ডউইচ এখন বিলাসবহুল পণ্যের মতো।
দাম বৃদ্ধির কারণ কী?
যুক্তরাষ্ট্রের পোলট্রি খামারগুলিতে এইচ৫এন১ বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়াই মূলত দাম বৃদ্ধির কারণ। ইউএসডিএ’র অ্যানিম্যাল অ্যান্ড প্ল্যান্ট হেলথ ইনস্পেকশন সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এই ভাইরাস দেশটির ৫০টি রাজ্য ও পুয়ের্তো রিকোতে ছড়িয়ে পড়েছে এবং ১ হাজার ৬০০টিরও বেশি মুরগির খামার আক্রান্ত হয়েছে।
ভাইরাসের বিস্তার রোধে আক্রান্ত খামারের সব মুরগি জবাই করা হচ্ছে। এই সংকটে ১৬ কোটিরও বেশি মুরগি জবাই করা হয়েছে, যার মধ্যে এ বছরই জবাই করা হয়েছে ৩ কোটি। এতে বাণিজ্যিক খামারগুলো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এবং ডিমের বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
আরকানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলট্রি বিশেষজ্ঞ জাদা থম্পসন বলেছেন, যদি ডিম পাড়ার মুরগি না থাকে... তাহলে সরবরাহ ঘাটতি দেখা দেবে, যা সরবরাহ ও চাহিদার কারণে দাম বাড়িয়ে দেবে।
ইউএসডিএ’র তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রে ডিম পাড়া মুরগির সংখ্যা ছিল ৩০ কোটি ৪০ লাখ, যা পাঁচ বছর আগের তুলনায় ১১ শতাংশ কম।
ট্রাম্পের পরিকল্পনায় কী আছে?
ইউএসডিএ’র প্রধান ভেটেরিনারি অফিসার রোজমেরি সিফোর্ড বলেছেন, মুরগি জবাইয়ের নীতি বদলানো হচ্ছে না। তবে ডিমের সংকট মোকাবিলায় ১ বিলিয়ন ডলারের একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সংস্থাটি। এর মধ্যে ৫০ কোটি ডলার খরচ করা হবে খামারগুলোর জৈব নিরাপত্তা প্রোটোকল শক্তিশালী করতে, যাতে বন্য পাখি থেকে মুরগিতে এইচ৫এন১ ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়। ৪০ কোটি ডলার দেওয়া হবে আক্রান্ত খামার মালিকদের। এছাড়া ১০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হবে নতুন টিকা, চিকিৎসা ও সমাধান উদ্ভাবনে।
ইউএসডিএ আরও বলেছে, দাম বাড়ানো নিয়মগুলো সরিয়ে ফেলার বিষয়ে তারা বিবেচনা করবে এবং সাময়িকভাবে আরও ডিম আমদানি করবে।
যুক্তরাষ্ট্র কোথা থেকে ডিম আমদানি করবে?
যুক্তরাষ্ট্র তার চাহিদার বেশিরভাগ ডিম নিজেরাই উৎপাদন করে। তবে দেশটিতে এখন ডিমের দাম রেকর্ড উচ্চতায় থাকায় আরও ডিম আমদানির কথা ভাবছে তারা। তুরস্ক এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে ৪২ কোটি ডিম রফতানি করার আশা করছে, যা গত বছরের তুলনায় ছয় গুণ বেশি। তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের মোট চাহিদার একটি ক্ষুদ্র অংশ।
ডিমের দাম কমবে নাকি আরও বাড়বে?
ইউএসডিএ’র পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ বছর ডিমের দাম আরও ৪১ শতাংশ বাড়তে পারে। তবে কৃষি সচিব ব্রুক রোলিনস বলেছেন, এক থেকে দুই বছরের মধ্যে দাম ১ দশমিক ৩০ থেকে ২ ডলারের মধ্যে ফিরে আসবে। তিনি বলেছেন, ভোক্তাদের জন্য শেষ কথা হলো... আমরা এটা ঠিক করব।
সূত্র: আল জাজিরা