চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে বলেছেন, তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের ‘রেড লাইন’ অতিক্রম করা যাবে না। তবে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে জানিয়েছেন, বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
পেরুতে এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলনের সাইডলাইনে শনিবার শি ও বাইডেনের মধ্যে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসময় দুই মাস পর দায়িত্ব নেওয়া ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য নীতি নিয়ে আলোচনা হয়।
তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ড দাবি করে চীন। প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমেও তা দখল করতে বেইজিং পিছপা হবে না বলে অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র তাইপের প্রধান নিরাপত্তা সহযোগী হলেও কূটনৈতিকভাবে তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দেয়নি।
চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভি জানিয়েছে, শি বাইডেনকে বলেছেন, ‘তাইওয়ান ইস্যু, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার, উন্নয়নমুখী পথ ও ব্যবস্থা এবং চীনের স্বার্থ—এই চারটি লাল রেখা অতিক্রম করা যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘এগুলো চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষার উপাদান।’
শি উল্লেখ করেন, ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতার জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রম তাইওয়ান প্রণালির শান্তি ও স্থিতিশীলতার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।’
এদিকে, তাইওয়ানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘তাইওয়ানের কাছে সামরিক উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডই আঞ্চলিক শান্তি ধ্বংস এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য বড় হুমকি।’
বৈঠকে শি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত দক্ষিণ চীন সাগরের দ্বিপাক্ষিক বিরোধে হস্তক্ষেপ না করা এবং উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড সমর্থন থেকে বিরত থাকা।
এ বছর বেইজিং দক্ষিণ চীন সাগরে তার বিস্তৃত দাবি আরও দৃঢ়ভাবে প্রকাশ করেছে। যদিও আন্তর্জাতিক আদালত এসব দাবিকে অবৈধ বলেছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে শি বলেন, ‘চীনের অবস্থান স্পষ্ট ও স্বচ্ছ।’ পাশাপাশি তিনি সতর্ক করেন, কোরীয় উপদ্বীপের উত্তেজনা যেন সংঘাত বা বিশৃঙ্খলায় রূপ না নেয়।
শি আরও জানান, চীন ২০২৬ সালে এপেক সম্মেলন আয়োজন করবে। চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার বরাতে জানা গেছে, সম্মেলনটি ‘বাণিজ্যিক সুরক্ষা এবং সংঘাতমুখী বাণিজ্য নীতি প্রত্যাখ্যান করে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের সহযোগিতা জোরদার করবে।’
শি বলেন, চীন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের মসৃণ রূপান্তর চায় এবং নতুন ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক বজায় রাখতে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা, সহযোগিতা সম্প্রসারণ এবং পার্থক্যগুলো ব্যবস্থাপনা জরুরি।’
শি সতর্ক করেন, যদি এক পক্ষ অপর পক্ষকে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করে, তবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক টানাপড়েন বা অবনতির মুখে পড়তে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিযোগিতা নয়, বরং স্থিতিশীল চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক বিশ্বে শান্তি বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে শি জোর দিয়ে বলেছেন, ‘চীন নিজের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন স্বার্থ রক্ষায় কঠোর অবস্থানে থাকবে।’