মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর একমাত্র পথ মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্তে দিন দিন অভিবাসীদের সংখ্যা বৃদ্ধির খবর এলেও এবার ঘটেছে উল্টো ঘটনা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ের পর বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) এই সীমান্তে অভিবাসীর সংখ্যা কমে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। নির্বাচনি প্রচারণার সময় ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়িত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে মেক্সিকো দিয়ে ভ্রমণকারী হাজার হাজার অভিবাসীর সংখ্যা বৃহস্পতিবার প্রায় আশ্চর্যজনকভাবে অর্ধেক কমে গিয়েছিল। রয়টার্স বলছে, মঙ্গলবারের নির্বাচনে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিজয়র খবরে অনেক অভিবাসীই এই দেশে তাদের সম্ভাবনা নিয়ে সন্দিহান।
মেক্সিকোর ন্যাশনাল মাইগ্রেশন ইনস্টিটিউটের একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দক্ষিণাঞ্চলীয় তাপাচুলা শহর থেকে যাত্রা শুরু করার সময় ওই কাফেলায় এক হাজার ৬০০ জনেরও কম অভিবাসী ছিল, যেখানে ৩ হাজার অভিবাসী থাকতে দেখা যায়।
কর্মকর্তা বলেছেন, তাদের মধ্যে শতাধিক মানুষ তাপাচুলায় ফিরে যেতে কর্তৃপক্ষের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। তবে কাফেলা ছেড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাকি অভিবাসীরা কোথায় যাচ্ছেন তা স্পষ্ট নয়।
ট্রাম্প জিতেছেন এই কথা শোনার পর ক্যারাভানের অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রে তাদের নতুন জীবনের সুযোগ নিয়ে আশা ক্ষীণ হয়ে যায়।
চিয়াপাস থেকে দক্ষিণ মেক্সিকোর ওক্সাকাতে ভ্রমণ করার সময় ভেনিজুয়েলা অভিবাসী ভ্যালেরি আন্দ্রাড রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আমি আশা করেছিলাম কমলা হ্যারিস জিতবে। তবে তা হয়নি।’
উন্নত জীবনের আশায় ৭০ লাখেরও বেশি ভেনিজুয়েলানের মতো আন্দ্রেদও তার স্বামীর সঙ্গে সঙ্কটে জর্জরিত ভেনেজেুয়েলা ত্যাগ করেছিলেন।
ট্রাম্পের প্রস্তাবিত অভিবাসন নীতিতে নথিভুক্ত নয় এমন অভিবাসীদের সন্তানদের জন্মগতভাবে পাওয়া নাগরিকত্ব সুবিধার অবসানও অন্তর্ভুক্ত।
ট্রাম্পের আগের শাসনামলে ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে তিনি এমন নীতি গ্রহণ করেছিলেন যা মার্কিন রাজনীতিকে নতুন আকার দিয়েছিল।
চিয়াপাস রাজ্যের নিরাপত্তা বিষয়ক একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন, অভিবাসীদের কাফেলাটি উত্তরের দিকে চলে যেতে দেখা যায়। এসময় কিছু পরিবার গুয়াতেমালা সীমান্তের কাছে তাপাচুলায় ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের দিকে যাত্রা অব্যাহত রাখেন।
নিরাপত্তার শঙ্কায় নামের শুধু প্রথম অংশ প্রকাশ করে ভেনিজুয়েলার অভিবাসী জেইলিমার বলেছেন, মার্কিন কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন অ্যাপ সিবিপি ওয়ানের মাধ্যমে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছিলেন তিনি। সেই অ্যাপয়েন্টমেন্টটি জানুয়ারিতে ট্রাম্পের দায়িত্ব নেওয়ার আগেই আসবে বলে আশাবাদী জেইলিমার।
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তের দিকে যেতে থাকবে। চিয়াপাসের একজন ক্যাথলিক ধর্মযাজক ও প্রো-রিফিউজি কর্মী হেইম্যান ভাজকুয়েজ বলেছেন, ‘মানুষ নতুন পথ খুঁজবে যা আরও বিপজ্জনক হবে। তবে এটি তাদের থামাতে পারবে না।’