X
সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫
৮ বৈশাখ ১৪৩২

ট্রাম্পকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চান নেতানিয়াহু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১৯:৩৯আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ২১:৪৫

এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর হোয়াইট হাউজে খুব সম্ভবত ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন আশা করছে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, শুধু নেতানিয়াহুই নন, ইসরায়েলি জনগণের কাছেও ট্রাম্প সমানভাবে জনপ্রিয়। একটি জনমত জরিপে এমনটাই দেখা গেছে। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির বরাতে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ট্রাম্পের শাসনের শেষ সময়টা নেতানিয়াহুর জন্য ভালো ছিল। এদিকে, ৫ নভেম্বরের ভোটের আগে সাবেক প্রেসিডেন্টও তার মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে মিশ্র বার্তা দিয়েছেন। তার মন্তব্যে নেতানিয়াহুকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা ফেলার উৎসাহ দেওয়া থেকে শুরু করে ইসরায়েলি নেতার সমালোচনাও করেন এই বলে যে ‘আমি প্রেসিডেন্ট হলে ৭ অক্টোবরের হামলা কখনোই হতো না’ এবং তিনি ইসরায়েলকে যুদ্ধ শেষ করতে চাপ দিতেন বলেও দাবি করেন।

এটি ট্রাম্পের সেই অস্পষ্ট নীতিগুলোর একটি যা তার নির্বাচনি প্রচারণার স্লোগান ‘আমেরিকাকে আবারও মহান করো’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। বিশ্লেষকরা বলছেন, নেতানিয়াহু নাকি তেমনটাই চান। তারা মনে করেন, একজন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিচ্ছিন্নতাবাদী ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে গাজা ও লেবাননে ক্রমাগত সংঘাতের মধ্যে আরও যা খুশি করার স্বাধীনতা দিতে পারেন।

জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক গিডন রাহাত এএফপিকে বলেছেন, ‘নেতানিয়াহুর অন্যতম মাইলফলক মার্কিন নির্বাচন। তিনি ট্রাম্পের বিজয় প্রার্থনা করছেন। তিনি মনে করেন, এই বিজয় তাকে অনেক বেশি স্বাধীনতা দেবে, তিনি যা করতে চান তা-ই করতে দেবে।

একইভাবে একজন রাজনৈতিক ভাষ্যকার ও নেতানিয়াহুর সাবেক চিফ অব স্টাফ আভিভ বুশিনস্কি বলেছিলেন, ‘রিপাবলিকানদের সঙ্গে তার (নেতানিয়াহুর) কাজের অভিজ্ঞতা খুব ভালো, তারা ডেমোক্র্যাটদের মতো তার প্রতি অনেক বেশি কঠোর না।’

ইসরায়েলপন্থি আন্দোলন

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১৭ বছরের শাসনামলে মাত্র একজন বিরোধী রিপাবলিকান নেতার সঙ্গে কাজ করেছেন নেতানিয়াহু। আর তিনি হলেন ট্রাম্প।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার শাসনামলে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে ছিলেন ট্রাম্প, যা নেতানিয়াহুর অভ্যন্তরীণ প্রভাবকে আরও প্রসারিত করেছিল। একইসঙ্গে ইসরায়েল, ফিলিস্তিন ও বৃহত্তর এই অঞ্চলের সঙ্গে দেশটির বিরোধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু দীর্ঘস্থায়ী নীতিও বাতিল করেছিল।

রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট তখন মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তরিত করেন, যেটিকে অবিভক্ত রাজধানী হিসেবে দাবি করে ইসরায়েল, অধিকৃত গোলান মালভূমিতে ইসরায়েলি সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেয় এবং তিনটি আরব রাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের তদারকি করেন।

ইসরায়েলের চিরশত্রু ইরানের সঙ্গে একটি যুগান্তকারী পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে এসেছিলেন ট্রাম্প এবং আবারও ইসলামি এই প্রজাতন্ত্রের ওপর কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।

এদিকে, ইসরায়েলের প্রতি আকুণ্ঠ সমর্থন থাকা সত্ত্বেও নেতানিয়াহুর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সম্পর্ক হিমশীতল।

ট্রাম্পের মতো উৎসাহ নয়, বরং নেতানিয়াহুকে ইরানের তেল উৎপাদন ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলার বিষয়ে সতর্ক করেছেন বাইডেন।

ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু নিজেদের মধ্যে একটি উষ্ণ ব্যক্তিগত সম্পর্ক রেখেছেন। চলতি সপ্তাহে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে ঘন ঘন আলাপ করা নিয়ে গর্ব করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

জর্জিয়ায় এক সমাবেশে ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তাদের সঙ্গে আমরা খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চলেছি।’

বুশিনস্কি বলেছেন, এই ইতিবাচক দিকগুলো যেকোনও উদ্বেগের চেয়ে বেশি।

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি নেতানিয়াহু ট্রাম্পের অনিশ্চিত মনোভাবের ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক হবেন।’

ইসরায়েলি জনগণের কাছে জনপ্রিয় ট্রাম্প

শুধু নেতানিয়াহুর কাছেই নয়, ইসরায়েলি জনগণের কাছেও জনপ্রিয় ট্রাম্প।

ইসরায়েল ইনস্টিটিউট ফর রিজিওনাল ফরেন পলিসিস সেপ্টেম্বরে মিটভিম পরিচালিত একটি মতামত জরিপের বরাতে বলেছে, ৬৮ শতাংশ ইসরায়েলি ট্রাম্পকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখেন, যিনি সর্বোত্তমভাবে ইসরায়েলের স্বার্থ রক্ষা করবেন।

ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন ও আত্মরক্ষার অধিকার থাকার কথা বারবার ঘোষণা করা সত্ত্বেও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়েছেন মাত্র ১৪ শতাংশ ইসরায়েলি।

যুক্তরাষ্ট্রে একজন সাবেক ইসরায়েলি কূটনীতিক ও মিটভিমের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য নাদাভ তামির বলেছেন, ‘ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অন্য যেকোনও উদার গণতন্ত্রের তুলনায় হ্যারিসের চেয়ে বেশি জনপ্রিয় ট্রাম্প।’

তামিরের মতে, একটি নতুন ট্রাম্প প্রশাসন চমক নিয়ে আসতে পারে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ক্রমবর্ধমানভাবে নিজেকে রিপাবলিকানদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ করেছেন, ‘যারা বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং চায় না আমেরিকা একটি মুক্তবিশ্বের বা আন্তর্জাতিক জোটের মোড়ল হোক।’

ফিলিস্তিনিদের কাছে এর চেয়ে ভালো কোনও বিকল্প নেই

একজন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং পোলস্টার খলিল শিকাকি বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের মধ্যে কোনও প্রার্থীকে নিয়েই তেমন কোনও উৎসাহ নেই।

তিনি বলছিলেন, ‘ফিলিস্তিনিরা উভয় প্রার্থীকে অবিশ্বাস করে এবং তাদের মধ্যে সামান্যই পার্থক্য দেখে।’

হামাসের এক কর্মকর্তা তাহের আল-নুনু এএফপিকে বলেছেন, তিনি মনে করেন, প্রত্যেক ‘পরবর্তী মার্কিন প্রশাসন সবসময়ই ইসরায়েলের প্রতি পক্ষপাতমূলক’ হবে।

পথিমধ্যে ফিলিস্তিনিরা বলেন, যে-ই জিতুক না কেন, তাদের অঞ্চলে জীবনযাত্রার কোনও উন্নতি হবে না।

অধিকৃত পশ্চিম তীরের বিরজেইট ইউনিভার্সিটির ২১ বছর বয়সী শিক্ষার্থী লিন বাসেম বলেন, ‘আমার মনে হয় না আমেরিকার নির্বাচন আমাদের রাজনৈতিক বাস্তবতায় ইতিবাচক কোনও প্রভাব ফেলবে।’

হাসান আনোয়ার নামের ৪২ বছর বয়সী এক সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার বলেছিলেন, তিনিও মনে করেন না কোনও পরিবর্তন আসবে। কেননা, ‘আমেরিকার নীতিতে স্পষ্টভাবে ইসরায়েলকে সমর্থন ও সহযোগিতার কথা উল্লেখ রয়েছে।’

/এএকে/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ইয়েমেনে মার্কিন হামলায় হতাহত ৪২
মার্কিন কংগ্রেস সদস্য, কর্মকর্তা ও এনজিও প্রধানদের ওপর চীনের নিষেধাজ্ঞা
সামগ্রিক যুদ্ধ সক্ষমতা যাচাই করতে ফিলিপাইন-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ মহড়া
সর্বশেষ খবর
ভারতের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে শ্রেয়াস-ইশান, উন্নতি পান্তের
ভারতের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে শ্রেয়াস-ইশান, উন্নতি পান্তের
আ.লীগের মিছিলে অংশ নেওয়ার অভিযোগে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা গ্রেফতার
আ.লীগের মিছিলে অংশ নেওয়ার অভিযোগে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা গ্রেফতার
বাংলাদেশ বিশ্বে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মডেল: ধর্ম উপদেষ্টা
বাংলাদেশ বিশ্বে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মডেল: ধর্ম উপদেষ্টা
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির অন্যতম প্রতিবন্ধকতা জনবলের ঘাটতি: গবেষণা
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির অন্যতম প্রতিবন্ধকতা জনবলের ঘাটতি: গবেষণা
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশে ঢুকে উৎসব করে গেছেন আরাকান আর্মির সদস্যরা
বাংলাদেশে ঢুকে উৎসব করে গেছেন আরাকান আর্মির সদস্যরা
অনার্সও পাস করেননি, জাল সনদে বনে গেলেন বিজ্ঞানের শিক্ষিকা
অনার্সও পাস করেননি, জাল সনদে বনে গেলেন বিজ্ঞানের শিক্ষিকা
হত্যা ও মুখ ঝলসে দেওয়ার আগে শিশুটিকে ধর্ষণ করেছিল পাঁচ জন: পুলিশ
হত্যা ও মুখ ঝলসে দেওয়ার আগে শিশুটিকে ধর্ষণ করেছিল পাঁচ জন: পুলিশ
সুদের টাকার জন্য পিটুনিতে ভবেশ চন্দ্রের মৃত্যু, তিন দিন পর জানালো পরিবার
সুদের টাকার জন্য পিটুনিতে ভবেশ চন্দ্রের মৃত্যু, তিন দিন পর জানালো পরিবার
উত্তরাঞ্চলেও জনপ্রিয় হচ্ছে উচ্চ ফলনশীল ‘ব্রি ধান-১০৩’
উত্তরাঞ্চলেও জনপ্রিয় হচ্ছে উচ্চ ফলনশীল ‘ব্রি ধান-১০৩’