পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করতে আর্জেন্টিনায় বিশেষ প্রার্থনা ও মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়েছে। আর্জেন্টাইন বংশোদ্ভূত ফ্রান্সিস ল্যাটিন আমেরিকা থেকে প্রথম নির্বাচিত পোপ হওয়ার কারণে, সেখানকার মানুষ যেন একটু বেশিই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছেন।
বুয়েনাস এইরেস ক্যাথেড্রালে এক বিশেষ জমায়েতের আয়োজন করা হয়। এখানে একসময় আর্চবিশপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ফ্রান্সিস। ক্যাথেড্রাল ভবনটি প্রয়াত পোপের স্মরণে তার ছবি, সাদা ফুলের তোড়া এবং আর্জেন্টিনার নীল-সাদা পতাকা দিয়ে সাজানো হয়েছিল।
বুয়েনাস এইরেসের আর্চবিশপ হোর্হে গার্সিয়া কুয়ের্ভা বলেন, গরিবের পোপ, প্রান্তজনের পোপ আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।
বুয়েনাস এইরেসে দায়িত্বপালনকালে শহরের দরিদ্র এলাকায় ঘুরে ঘুরে মানুষের সেবা করতেন ফ্রান্সিস। তখন লোকে ভালোবেসে তাকে নাম দেয় ‘বস্তিবাসীর পোপ’ (স্লাম পোপ)।
আর্চবিশপ কুয়ের্ভা আরও বলেন, তিনি বৈশ্বিক ভ্রাতৃত্বের কথা বলতেন, জোর দিতেন সেতুবন্ধনের জন্য। তিনি ছিলেন আমাদের অভিভাবক, গরিবের অভিভাবক, দয়ার আধার। আর্জেন্টাইনরা ঐক্যবদ্ধ থাকার মাধ্যমে তার প্রতি শ্রেষ্ঠ সম্মান প্রদর্শনের নজির স্থাপন করতে পারে।
পোপ ফ্রান্সিসের মহাপ্রয়াণে সাত দিনের শোক ঘোষণা করেছে আর্জেন্টাইন সরকার।
পোপ ফ্রান্সিসের জন্মগত নাম হোর্হে মারিও বেরগোলিও। পোপের দায়িত্ব গ্রহণের সময় ফ্রান্সিস নাম গ্রহণ করেন তিনি। ১৯৩৬ সালে ইতালি অভিবাসী পরিবারে জন্ম নেওয়া ফ্রান্সিস ছিলেন প্রথম লাতিন আমেরিকান পোপ। দরিদ্রবান্ধব মনোভাব ও উদার সংস্কারের জন্য ব্যাপক প্রশংসিত হলেও অনেকের দুঃখ ছিল যে, তিনি আর কখনও আর্জেন্টিনায় ফিরে আসেননি।
বুয়েনাস এইরেসের অধিবাসী নিকোলাস কর্দোবা বলেছেন, পোপের মৃত্যু মানুষের মনে গভীর এক ক্ষত রেখে যাবে।
পোপ ফ্রান্সিসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আর্জেন্টাইন প্রেসিডেন্টের কার্যালয় বলেছে, আন্তঃধর্মীয় সংলাপের উদ্যোগ, তরুণদের মধ্যে আধ্যাত্মিকতা গড়ে তোলার চেষ্টা, ভ্যাটিকানের ব্যয় সংকোচনে গুরুত্ব ইত্যাদি একাধিক প্রশংসনীয় কাজ করেছেন ফ্রান্সিস।
ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে ব্যক্তিগতভাবে শোক প্রকাশ করেছেন আর্জেন্টাইন প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই। মুক্ত বাজার অর্থনীতির কট্টর সমর্থক মিলেই একসময় পোপকে শয়তানের দূত এবং সমাজতান্ত্রিক বলে নিন্দা করেছেন। তবে ২০২৩ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর ফ্রান্সিসের সঙ্গে সব দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে মিলেই বলেছেন, পুরোনো মতভেদগুলো এখন খুবই নগণ্য মনে হচ্ছে। তবে তার মহত্ত্ব ও জ্ঞানের সংস্পর্শে আসার সুযোগ পেয়ে আমি সম্মানিত বোধ করেছি। আমি পুরো জাতির পক্ষ থেকে আমাদের পবিত্র পিতাকে (হোলি ফাদার, সম্মানসূচক ধর্মীয় সম্বোধন) বিদায় জানাচ্ছি। এই শোক সামলে ওঠার জন্য আমি দেশবাসীর পাশে আছি।
সকালে কাজে যাওয়ার পথে পোপের মৃত্যুর খবর পেয়ে শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন অনেক সাধারণ মানুষ। ৪২ বছর বয়সী শ্রমিক হুলিয়া ক্যাস্ত্রো দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, পোপ অনেক অধিকারের জন্য লড়েছেন।
আরেক স্থানীয় ব্যক্তি আগুস্তিন হারত্রিজ বলেছেন, গতকাল (ইস্টার সানডে) অল্প সময়ের জন্য জনসম্মুখে এসেছিলেন পোপ। তাকে অনেক দুর্বল দেখাচ্ছিল। আমি কেবল প্রার্থনা করছিলাম, তিনি ধাক্কাটা সামলে নেবেন। তার মৃত্যুতে আমরা সবাই গভীরভাবে শোকাহত।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স