মহাবিশ্বের প্রাণের অস্তিত্বের নতুন কিছু তথ্য পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কেটু বি এইটিন নামের ওই গ্রহে এমন কণা শনাক্ত হয়েছে, যা পৃথিবীতে সরল জীবদেহ থেকে উৎপন্ন হয়ে থাকে। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ দিয়ে দূরবর্তী কোনও গ্রহে প্রাণ সংক্লিষ্ট রাসায়নিক শনাক্ত হলো। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
এবারের প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে বিজ্ঞানীরা বেশি আশাবাদী হলেও, নিশ্চিত সিদ্ধান্ত দেওয়ার জন্য আরও উপাত্ত প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তারা।
গবেষণা দলের প্রধান, অধ্যাপক নিক্কু মধুসূদন জানিয়েছেন, মহাবিশ্বের প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী আলামত আমাদের হাতে এসেছে। আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়া সম্ভব বলে আমি আশাবাদী।
আমাদের থেকে প্রায় সাতশ ট্রিলিয়ন মাইল দূরে কেটু বিএইটিন গ্রহটি অবস্থিত। এটি পৃথিবী অপেক্ষা প্রায় আড়াই গুণ বড়।
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের শক্তিশালী বিশ্লেষণ ক্ষমতার মাধ্যমে গ্রহটির বায়ুমণ্ডলের রাসায়নিক গঠন নির্ণয় করা হচ্ছে। গবেষকরা বলছেন, বায়ুমণ্ডলে ডাইমিথাইল সালফাইড অথবা ডাইমিথাইল ডিজালফাইড নামের কমপক্ষে একটি অণুর উপস্থিতির ইঙ্গিত মিলেছে, যা পৃথিবীতে সামুদ্রিক ফাইটোপ্লাংকটন ও ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে উৎপন্ন হয়।
এক দফা পর্যবেক্ষণে যে পরিমাণ গ্যাসের প্রমাণ তারা পেয়েছেন, তা অবিশ্বাস্য বলে মন্তব্য করেছেন মধুসূদন। তিনি বলেছেন, পৃথিবীতে একই পরিবেশে যে পরিমাণ গ্যাস দেখা যায়, কেটু বিএইটিন এ তার হাজারগুণ বেশি গ্যাসের অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছি আমরা। এই গ্যাস যদি আসলেই প্রাণের উপস্থিতি সংশ্লিষ্ট হয়, তবে গ্রহটি প্রাণে পরিপূর্ণ।
তবে অধ্যাপক মধুসূদনের সহকর্মীদের সরল স্বীকারোক্তি, অন্য যে কোনও সময়ের চেয়ে বেশি উপাত্ত থাকা সত্ত্বেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের বিষয়ে তাদের অনেকগুলো ধাপ পেরোতে হবে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, প্রাপ্ত তথ্যের সত্যতা নিয়ে ৯৯ দশমিক ৯৯৯৯৯ শতাংশ নিশ্চয়তা, যা বিজ্ঞানীরা ফাইভ সিগমা রেজাল্ট বলে থাকেন। কেবল, এই মানদণ্ড পূরণ করতে পারলেই প্রাপ্ত উপাত্তকে তারা বিশ্বাসযোগ্য বলে মেনে নেবেন।
কেটু বিএইটিন থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে তাদের মধ্যে ৯৯ দশমিক ৭ শতাংশ নিশ্চয়তা দিতে পারবেন তারা। এই সংখ্যাটি, যা বিজ্ঞানীদের কাছে থ্রি সিগমা বলে বিবেচিত, আমাদের জন্য অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হলেও পেশাদারদের জন্য এটি পর্যাপ্ত নয়।
এছাড়া, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, শনাক্তকৃত গ্যাস প্রধানত প্রাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিবেচিত হলেও, অজৈব কারণেও গ্যাসটির উৎপত্তি হতে পারে কিনা, তা যাচাই করা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে, তাদের পুরো অনুমানই মাঠে মারা যাবে। তাই, বিজ্ঞানীরা যাচাই করে দেখছেন, গবেষণাগারে অজৈব কোনও কারণে একই গ্যাসের উৎপত্তি সম্ভব কিনা।
এছাড়া, গ্রহটির প্রকৃত গঠন নিয়েও বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলছেন এটা তরল জলাধারবিশিষ্ট বিশালকার গ্রহ। আবার কেউ বলছেন এটি পাথুরে বা গ্যাসীয় গ্রহ হতে পারে।
কেটু বিএইটিন গ্রহে প্রাণের সন্ধান পেলে দীর্ঘদিনের এক প্রশ্নের উত্তর মানবজাতির নাগালে পৌঁছাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক মধুসূদন। তিনি বলেছেন, কেটু বিএইটিনে প্রাণে অস্তিত্ব নিশ্চিত হলে ধরে নেওয়া যাবে, মহাবিশ্বের প্রাণ সৃষ্টি বিরল কোনও ঘটনা নয়।মহাজগতে আমরা ছাড়া কেউ আছে কিনা- সেই দীর্ঘ জিজ্ঞাসার অবসান ঘটানোর মতো উত্তর দেওয়ার একটা সূচনা হয়ত হতে যাচ্ছে।