ওয়াকফ বিল বাতিলের দাবিতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গজুড়ে চলছে ব্যাপক বিক্ষোভ ও সহিংসতা। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কিছু স্থানে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার মুর্শিদাবাদের সুতিতে বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া, সরকারি পরিবহনেও আগুন দিয়েছে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা। শেষ খবর অনুযায়ী, পরিস্থিতি এখনও নাগালের বাইরে।
সুতিতে ভারতীয় সংহিতার ১৬৩ নম্বর ধারা জারি হয়েছে। কিন্তু তা অমান্য করেই হচ্ছে জমায়েত। বন্ধ হয়ে গিয়েছে ট্রেল চলাচল।
এর আগে রঘুনাথগঞ্জের ওমরপুরে পুলিশের দুটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় মিছিল করছেন জনতা। সুতি এবং সামসেরগঞ্জ এলাকার কয়েক হাজার মানুষের একটি মিছিল সাজুর মোড় এলাকার কাছাকাছি ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করে। তখন কর্তৃপক্ষের আদেশ অনুযায়ী তাদের বাঁধা দেয় পুলিশ। তাদের অভিযোগ, এ সময় বিক্ষোভকারীরা তাদের দিকে বোমা ও ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। বিক্ষোভকারীদের হামলায় একাধিক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সংবাদ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে জানা গিয়েছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে একপর্যায়ে গুলি ছোঁড়ে পুলিশ। এসময় গুলিবিদ্ধ হন ২ যুবক। স্থানীয় হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আহত একজন হচ্ছেন ২১ বছর বয়সী এজাজ আহমেদ। আর এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অন্যজনের পরিচয় জানা যায়নি।
এদিকে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর থানার আমতলা চৌরাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয়রা। এতে অচল হয়ে পড়ে ১১৭টি জাতীয় সড়ক। ফলে ব্যাপক যানজট তৈরি হয় এলাকায়।
বিক্ষোভ কর্মসূচির শুরু থেকেই এলাকায় চলছিল পুলিশের টহল। কোনওরকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ছিল কড়া নজরদারি। তারমাঝেও কয়েকজন আমচকা পুলিশের গাড়িতে হামলা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিক্ষোভকারীদের আগ্রাসন থেকে রেহাই পায়নি রেলযোগাযোগব্যবস্থা। নিমতিতা স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনে পাথর ছোঁড়া হয় বলে অভিযোগ এসেছে। এমনকি স্টেশনের সম্পত্তিতেও ভাঙচুর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্টেশনে সহিংসতায় সাত থেকে দশজন পুলিশ আহত হয়েছেন বলে ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদন অনুসারে জানা গিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেখানে বিএসএফ মোতায়েন করা হয়েছে।
শুক্রবার সকাল থেকে ওয়াকফ ইস্যুতে ব্যাপক উত্তেজনার ছবি দেখা যায় হুগলির চাঁপদানিতেও। অন্যদিকে বিক্ষোভে উত্তপ্ত কলকাতাও। এদিন পার্ক সার্কাসের রাস্তা আটকে বিক্ষোভ করতে দেখা যায় আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার অভিযোগ এসেছে তাদের বিরুদ্ধে।
সহিংসতার ঘটনা নিয়ে বিবৃতি জারি করছ্ রাজ্য পুলিশ। এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করা সেই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি বর্তমানে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী জনতাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় সড়কে যানচলাচল আবার স্বাভাবিক হয়েছে।
সহিংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আইন ভঙ্গকারীদের গ্রেফতার করতে অভিযান চলছে। এমনকি যারা ভুল তথ্য দিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ওয়াকফ বিল নিয়ে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করতে পারে বলে আগেই আঁচ করেছিলেন বিজেপি বিধায়ক গৌরীশঙ্কর ঘোষ। তিনি বলেন, মানুষ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে আছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন পোস্ট দেখে আমরা আশঙ্কা করছি, ওয়াকফ বিল নিয়ে মুর্শিদাবাদে আবারও অশান্তি হতে পারে।
ওয়াকফ বিল ইস্যুর যথাযথ সুরাহা করতে তৎপর রয়েছে রাজ্য সরকার। সে উদ্দেশে ১৬ এপ্রিল নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বৈঠক ডেকেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আলোচনায় অংশ নেবেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। রাজ্যের মৌলবী ও ইমামদের ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।