মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে নাস্তানাবুদ হওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খনিজ সম্পদ সংক্রান্ত চুক্তি করতে প্রস্তুত ইউক্রেন। রবিবার (২ মার্চ) লন্ডনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাকালে এ কথা জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
তিনি বলেছেন, অতীতে যাই হয়ে থাকুক, অঙ্গীকার পূরণ করা আমাদের নীতি। আমরা চুক্তি স্বাক্ষরে প্রস্তুত ছিলাম বলেই সম্মত হয়েছিলাম। আর সত্যি বলতে আমি বিশ্বাস করি, যুক্তরাষ্ট্রও চুক্তি স্বাক্ষরে প্রস্তুত।
শুক্রবার হোয়াইট হাউজের অপ্রত্যাশিত ঘটনার পরও ট্রাম্পের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক ধরে রাখা সম্ভব বলে আশা প্রকাশ করেছেন জেলেনস্কি। মার্কিন প্রশাসন কিয়েভের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে না বলে মনে করেন তিনি।
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট বলেছেন, আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় থাকবে বলেই আমার বিশ্বাস। কারণ এই সম্পর্ক কেবল নির্দিষ্ট এক মুহূর্তের সুবিধার জন্য নয়।
ইউক্রেনের টিকে থাকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা প্রয়োজন উল্লেখ করে জেলেনস্কি বলেছেন, মার্কিন সহায়তার প্রয়োজনীয়াতা নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। সহায়তা বন্ধ হলে কেবল রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনই লাভবান হবেন। এজন্যই আমি বিশ্বাস করি, যুক্তরাষ্ট্রসহ সভ্য জগতের কোনও প্রতিনিধিই পুতিনের সহায়তা হয় এমন কোনও পদক্ষেপই নেবে না।
যুক্তরাজ্যে দুদিনের সফর শেষে এসব মন্তব্য করেছেন জেলেনস্কি। সফর চলাকালে ইউরোপীয় নেতারা আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ অবসানের পথ খুঁজে বের করতে এবং ইউক্রেনের সমর্থনে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিতে।
সফর চলাকালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ট্রাম্পের কাছে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য এক যৌথ পরিকল্পনা পেশ করবে।
ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের জন্য ট্রাম্পের প্রস্তাবের গুরুত্বপূর্ণ এক অংশ ছিল ইউক্রেনের প্রাকৃতিক সম্পদ আরোহণ করা। তবে সরাসরি সম্প্রচারিত সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কির সঙ্গে অপ্রত্যাশিত বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স।
শুক্রবার জেলেনস্কির সঙ্গে অপ্রত্যাশিত উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ে জড়ান ট্রাম্প ও ভ্যান্স। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে যথাযথ সহায়তা পাওয়ার পরও জেলেনস্কির মধ্যে কোনও কৃতজ্ঞতাবোধ নেই, এই অভিযোগ তুলে চুক্তি সইসহ সফরের বাকি অংশ বাতিল করেন তিনি। এরপর জেলেনস্কিকে হোয়াইট হাউজ থেকে একরকম বের করে দেওয়া হয়। ইউক্রেনীয় নেতা শান্তি প্রতিষ্ঠায় সম্মত হলেই কেবল হোয়াইট হাউজে ফিরতে পারবেন বলে মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প।
এই বক্তব্যের পর কয়েকজন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা জেলেনস্কিকে অগণতান্ত্রিক নেতা আখ্যায়িত করে বলেছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে সমঝোতার যোগ্যতা না থাকলে তার পদত্যাগ করা উচিত।
নিজের বিরুদ্ধে উত্থাপিত একনায়কের অভিযোগ প্রত্যাখান করলেও পদত্যাগ প্রসঙ্গে জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেন যদি পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদ পায়, তাহলে দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিতে তার উদ্দেশ্য পূরণ হবে। তখন পদ ছেড়ে দিতে তিনি দ্বিতীয়বার চিন্তা করবেন না।