যুক্তরাষ্ট্রের গুয়ানতানামো বে কারাগার থেকে দুজন মালয়েশীয় বন্দিকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ২০০২ সালে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে ভয়াবহ বোমা হামলায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে অপরাধ স্বীকার করে মূল পরিকল্পনাকারীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে সম্মত হওয়ায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয় বলে বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) মার্কিন গোয়েন্দা দফতরের প্রধান কার্যালয় পেন্টাগনের এক বিবৃতিতে জানানো হয়। মার্কিন বার্তাসংস্থা এপি এ খবর জানিয়েছে।
এছাড়া, ১৭ বছর ধরে অভিযোগ ছাড়াই আটক থাকা কেনিয়ার নাগরিক মোহাম্মদ আবদুল মালিক বাজাবুকে মঙ্গলবার মুক্তি দিয়ে কেনিয়ায় ফেরত পাঠানো হয়। বর্তমানে বিনা অভিযোগে আটক ১৫ জন বন্দি মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছেন।
প্রসিকিউটররা বলেছেন, মোহাম্মদ ফারিক বিন আমিন ও মোহাম্মদ নাজির বিন লেপ নামের মালয়েশীয় ওই দুই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট সংগঠন জেমাহ ইসলামিয়ার ইন্দোনেশীয় নেতা এনসেপ নুরজামান ওরফে হামবালির সঙ্গে কাজ করেছেন। ২০০২ সালের ১২ অক্টোবর বালির নাইটক্লাবে বোমা হামলার পর হামবালিকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছিলেন তারা।
চলতি বছর জানুয়ারিতে ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অভিযোগে দোষ স্বীকার করেছেন এই দুই বন্দি। পরে তারা হামবালির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন, যা ভবিষ্যতে আদালতে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা করছেন প্রসিকিউটররা।
নুরুজ্জামান এখন গুয়ানতানামোর কাস্টডিতে রয়েছেন।
গুয়ানতানামো বে কারাগারের শুরুর সময় শত শত মুসলিম বন্দিকে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের আওতায় আটক করা হয়েছিল। বর্তমানে কারাগারে ২৭ জন বন্দি রয়েছেন, যার মধ্যে মাত্র দুজন সাজা ভোগ করছেন। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর হামলার পর সন্ত্রাস দমনের অংশ হিসেবে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ. বুশ এই কারাগার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষের পর্যবেক্ষণে বন্দিদের পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া চলবে। নাজির বিন লেপের আইনজীবী ব্রায়ান বৌফার্ড বলেছেন, ফেরত পাঠানোতে কোনও ঝুঁকি নেই। মালয়শীয় কর্তৃপক্ষ তাদের যথাযথ নজরদারির মধ্যে রাখবে। আর আমার মক্কেল নিজেই এমন কোনও কাজে যুক্ত হতে চান না।
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুতিওন ইসমাইল জানিয়েছেন, দুই মালয়েশীয় নাগরিককে একটি ব্যাপক পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় আনা হবে। এতে সামাজিক পরিষেবা ও স্বাস্থ্য সহায়তা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তবে তারা কতটুকু স্বাধীনভাবে চলতে পারবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
দুই বন্দির পুনর্বাসনের সিদ্ধান্ত নিয়ে সবাই অবশ্য খুশি নয়। হামলায় নিহত ২০২ জনের মধ্যে ৮৮ জন ছিলেন অস্ট্রেলীয়। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি ও নিহতদের পরিবারের সদস্যগণ দুই মালয়েশীয় ব্যক্তির মুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ওই হামলায় দুই সহকর্মীকে হারিয়েছেন সাবেক অস্ট্রেলীয় রুলস ফুটবল খেলোয়াড় টিম ওয়েদারল্ড। তিনি বলেন, তারা কোনও অনুশোচনা প্রকাশ করেনি। তাদের মধ্যে সামান্য অনুশোচনা দেখলেও আমি হয়ত তাদের ক্ষমা করতে পারতাম। কিন্ত তাদের দেখে মনে হয়, নিজেদের কৃতকর্ম নিয়ে তারা গর্বিত। তারা কোনওদিন সূর্যের আলো না দেখলেও আমার কোনও আপত্তি নেই।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওয়ংয়ের কার্যালয়ে থেকে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে তাদের যোগাযোগ হয়েছে। বন্দিরা কঠোর পর্যবেক্ষণে থাকবে, মালয়েশিয়ার কাছে এমন আশ্বাস চেয়েছেন তারা।
অভিযোগ ছাড়া আটক থাকা ব্যক্তিদের মুক্তির জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তাদের দাবি, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করুক বাইডেন প্রশাসন। সেটা বাস্তবায়ন না করা গেলে, বিনা বিচারে অনির্দিষ্টকাল বন্দি থাকা ব্যক্তিদের ওপর চলা অমানবিকতার দায়ভার বাইডেনের ওপরও থেকে যাবে।