ইরানের নৈতিকতা পুলিশ হিজাব নিয়ে নারীদেরকে আর ‘উত্ত্যক্ত’ করবে না বলে জানিয়েছেন দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। পোশাক ইস্যুতে নারীদের ওপর চলা কর্তৃপক্ষের দমনমূলক আচরণ নিয়ে জাতিসংঘ (ইউএন) সতর্ক করার কিছুদিনের মধ্যেই সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এই মন্তব্য করেছেন তিনি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
একজন নারী সাংবাদিকের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এসব বিষয় উঠে আসে। ওই সাংবাদিক প্রেসিডেন্টকে বলেছেন, সম্মেলনে পৌঁছাতে তিনি অনেক ঘুরপথে এসেছেন। কারণ তিনি পুলিশের হয়রানি এড়াতে চাচ্ছিলেন। ওই সাংবাদিক শিথিলভাবে মাথায় স্কার্ফ পড়ে ছিলেন। তার কেবল কয়েক গোছা চুল দেখা যাচ্ছিল।
এ কথা শুনে পেজেশকিয়ান জানতে চান, পুলিশ কি তখনও রাস্তায় টহল দিচ্ছে কিনা। এই প্রশ্নের উত্তরে সাংবাদিক জানান, তারা এখনও আছে।
তখন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘নৈতিকতা পুলিশের তো আর (নারীদের) হয়রানি করার কথা নয়। আমি বিষয়টা দেখছি।’
হিজাব ইস্যুতে পুলিশের প্রহারে নিহত মাশা আমিনির ২য় মৃত্যুবার্ষিকীতে এ কথা বলেছেন তিনি। মিজ আমিনির মৃত্যু দেশজুড়ে ব্যাপক জনরোষ তৈরি করেছিল, যা সামলাতে গলদঘর্ম হয়েছিল কর্তৃপক্ষ।
গত সপ্তাহে প্রকাশিত জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, মাশা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যে নারী অধিকার আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, তার সম্পূর্ণ মূলোৎপাটন করতে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে সরকার।
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় আগের প্রেসিডেন্ট নিহত হলে নির্বাচিত হন মাসুদ পেজেশকিয়ান। ইরানে তিনি সংস্কারবাদী হিসেবে পরিচিত।
আইআরআইএনএন-সহ গুরুত্বপূর্ণ সব রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যমে তার এই বক্তব্য সরাসরি দেখানো হয়। ওই সাংবাদিকের সঙ্গে তার এই কথোপকথন অনলাইনে ভাইরাল হয়ে গেছে।
জুলাইতে দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি পেজেশকিয়ানের প্রথম সংবাদ সম্মেলন।
নির্বাচনী প্রচারণাকালে তার অন্যতম অঙ্গীকারের মধ্যে ছিল, হিজাব নিয়ে নারীদের ওপর নৈতিকতা পুলিশের চালানো হয়রানির অবসান। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারে কঠোর নিয়ন্ত্রণেও কিছু শিথিলতা আনতে চান তিনি।
দেশের নারীদের ওপর আরোপিত কঠোর পোশাক আইনের প্রতি নমনীয়তার কিছু নমুনা পেজেশকিয়ানের সংবাদ সম্মেলনে দেখা যায়। একাধিক নারী সাংবাদিকের মাথায় স্কার্ফ শিথিলভাবে বাঁধা ছিল। অথচ কয়েক গোছা চুল দেখা গেলেই বিচারের আওতায় নেওয়ার মতো আইন রয়েছে ইরানে।
বিবিসি’র পর্যবেক্ষণ বলছে, আগের আমলের চেয়ে পার্থক্যটি চোখে পড়ার মতো। কেননা, আগে নারী সাংবাদিকরা কঠোর পোশাকবিধি মেনে উপস্থিত হতে বাধ্য ছিলেন।
কিন্তু ইরানে অবস্থিত জাতিসংঘ মিশন দাবি করেছে, নারীরা দেশটিতে এখনও ‘দ্বিতীয় শ্রেণীর’ নাগরিকের জীবন যাপন করছেন।
গত সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘ বলেছে, ‘নারীদেরকে তাদের মৌলিক অধিকার বঞ্চিত করতে দমনমূলক নীতি গ্রহণ করে চলেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।’
তারা আরও জানিয়েছে, ব্যক্তিগত ও জনপরিসর উভয় ক্ষেত্রেই নারীদের পোশাকবিধি নিয়ে নজরদারির আওতা বেড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাধ্যতামূলক হিজাব আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে নারীদের ওপর আগে থেকেই চলে আসা শারীরিক নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি করেছে নিরাপত্তা বাহিনী।’
প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়, ২০২২ সালে ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করায় গ্রেফতারকৃতদের শাস্তি কার্যকরের গতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া নারী অধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের দিক থেকে জোরালো আহ্বান রয়েছে।
ইরানের ইউএন মিশন জানিয়েছে, ‘হিজাব ও সতীত্ব’ আইনের খসড়া অনুমোদনের চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে। ইরানের ‘গার্ডিয়ান কাউন্সিল’ এটা আইনে পরিণত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছে, ‘বাধ্যতামূলক হিজাব আইন লঙ্ঘনের কারণে আগের চেয়ে কঠোর শাস্তির বিধানের প্রস্তাব রয়েছে এই খসড়া আইনে। এর মধ্যে আছে চড়া অর্থদণ্ড, দীর্ঘ কারাদণ্ড, পেশা ও শিক্ষাগত বিধিনিষেধ এবং ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা।’