X
রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
৭ বৈশাখ ১৪৩২

যেভাবে ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন বাংলাদেশ থেকে যাওয়া হিন্দুরা

দিল্লি প্রতিনিধি
১২ মার্চ ২০২৪, ২০:৩৯আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৪, ২১:০২

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত একটি খবরে জানানো হয়েছিল, বাংলাদেশ-পাকিস্তান-আফগানিস্তান থেকে আসা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দিতে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি আলাদা পোর্টাল তৈরি করছে। বলা হয়েছিল, সে পোর্টালের কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে এবং মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই ভারতের নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করার মাধ্যমে ওই পোর্টালটি চালু হয়ে যাবে।

সেই খবরের প্রতিটি শব্দ অক্ষরে অক্ষরে সত্যি প্রমাণ করে সোমবার (১১ মার্চ) অবশেষে ভারত সরকার তাদের নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ‘নোটিফাই’ করার কথা জানিয়েছে এবং এই বিশেষ পোর্টালটি আজ (মঙ্গলবার ১২ মার্চ) থেকে চালুও হয়ে গেছে।

ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের এই প্রক্রিয়াটি হবে ‘সম্পূর্ণ অনলাইন’ এবং সেটি এই পোর্টালের মাধ্যমেই লগইন করে করতে হবে।

ভারত সরকারের ওই বিশেষ পোর্টাল

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যেহেতু ভারতের বেশ কয়েকটি বিরোধী দল শাসিত রাজ্য সরকার হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে তারা কিছুতেই নাগরিকত্ব আইন বলবৎ করবে না, তাই এই রাজ্য সরকারগুলোকে ‘বাইপাস’ করতে বা পাশ কাটাতেই কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রক্রিয়াটিকে ‘সম্পূর্ণ অনলাইন’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, সিএএ-র ঘোর বিরোধী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সোমবার কেন্দ্রের ঘোষণার পরই জানিয়ে দিয়েছিলেন, তার রাজ্য সরকার কিছুতেই এই আইন কার্যকর করবে না। এদিন (মঙ্গলবার) তিনি আরও একধাপ এগিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, কেউ যেন কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি করা ওই পোর্টালে না ঢোকেন। কারণ তাতে নাকি আবেদনকারীর নাগরিকত্ব বাতিল হয়ে যেতে পারে।

এখন পশ্চিমবঙ্গে যদি কেউ তারপরও এই নাগরিকত্ব আইনের সুবিধা নিতে চান, তাকে কিন্তু সেই রাজ্যে কোনও সরকারি দফতরে যেতে হবে না। বরং যে কোনও ল্যাপটপ, পিসি বা এমনকি মোবাইল থেকেও তিনি সংশ্লিষ্ট পোর্টাল বা অ্যাপে লগইন করে ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারই সেই আবেদন প্রসেস করবে, রাজ্য সরকারগুলোর তাতে কোনও ভূমিকাই থাকবে না।

ভারত সরকারের ওই বিশেষ পোর্টাল

এখন প্রশ্ন হলো, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসেছেন, এমন কোনও হিন্দু (বা শিখ/জৈন/পার্সি/বৌদ্ধ/খ্রিষ্টান) ব্যক্তি বা তাদের সন্তান-সন্ততি যদি ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে চান, তাহলে তাদের ঠিক কী পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে?

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর জবাবে যা জানাচ্ছে তা এরকম:

ক) প্রথম ধাপ: যারা এই আইনে নাগরিকত্ব পাওয়ার হকদার তাদের https://indiancitizenshiponline.nic.in এই পোর্টালে লগইন করে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। এছাড়া মোবাইল ফোন থেকেও যাতে আবেদন করা যায়, সেই জন্য CAA-2019 নামে একটি অ্যাপ তৈরিরও কাজ চলছে।         

খ) কী কী নথিপত্র লাগবে? নাগরিকত্ব আইন ২০১৯-র আওতায় যারা আবেদন করবেন তাদের কাছে এই সব নথিপত্রের মধ্যে যেগুলো আছে তা ওই পোর্টালে আপলোড করতে হবে। এগুলো হলো –

(১) বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা আফগানিস্তান সরকারের জারি করা পাসপোর্টের প্রতিলিপি (২) এই সব দেশের কর্তৃপক্ষের জারি করা বার্থ (জন্ম নিবন্ধন) সার্টিফিকেট (৩) এই তিনটি দেশের স্কুল/কলেজ/বোর্ড বা ইউনিভার্সিটি থেকে জারি করা শিক্ষাগত সার্টিফিকেট (৪) ওই সব দেশের কোনও সরকারি কর্তৃপক্ষের জারি করা যে কোনও পরিচয়পত্র (৫) ভারতের ফরেনার্স রেজিস্ট্রেশন অফিসের জারি করা রেসিডেন্সিয়াল পারমিট (৫) ওই তিনটি দেশের কোনও সরকারি কর্তৃপক্ষের জারি করা যে কোনও লাইসেন্স। (৭) ওই সব দেশের যে কোনও ভূমি-সংক্রান্ত বা ভাড়ার দলিল (৮) ওই সব দেশের যে কোনও নথিপত্র, যা থেকে বোঝা যায় আবেদনকারীর পিতা-মাতা/তাদের পিতা-মাতা/আবার তাদের পিতা-মাতার মধ্যে কেউ অন্তত ওই তিনটি দেশের একটির নাগরিক ছিলেন।

সোজা কথায়, এই তিনটি দেশের সরকারি কর্তৃপক্ষের জারি করা যে কোনও ধরনের নথি দিয়েই প্রমাণ করা যাবে যে আবেদনকারী ওই তিনটির কোনও একটি দেশ থেকে ভারতে এসেছেন। তবে সেই নথির মেয়াদ/ভ্যালিডিটি ফুরিয়ে গেলেও কোনও ক্ষতি নেই।

গ) কীভাবে প্রমাণ করা যাবে যে ২০১৪ সালের মধ্যেই তিনি ভারতে এসেছেন? আবেদনকারীকে এটাও দেখাতে হবে যে তিনি ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ভারতে প্রবেশ করেছেন এবং সেটার স্বপক্ষে তাকে কোনও একটা প্রমাণ পেশ করতে হবে। এগুলো প্রমাণ করার জন্য নিচের যে কোনও একটা নথি আপলোড করলেই চলবে।

(১) ভারতে ঢোকার সময়কার ভিসা বা ইমিগ্রেশন স্ট্যাম্পের প্রতিলিপি (২) ভারতের ফরেনার্স রেজিস্ট্রেশন অফিসের (এফআরও) জারি করা সার্টিফিকেট বা রেসিডেন্সিয়াল পারমিট (৩) আদমশুমারির সার্ভে চালানোর সময় জারি করা স্লিপ (৪) ড্রাইভিং লাইসেন্স বা আধার-সহ ভারতীয় কর্তৃপক্ষের জারি করা কোনও লাইসেন্স, সার্টিফিকেট বা পারমিট (৫) ভারতে ইস্যু করা রেশন কার্ড (৬) ভারত সরকার বা আদালতের দেওয়া কোনও সিলমোহরসহ চিঠি (৭) আবেদনকারীর নামে কোনও জমি বা ভাড়া নেওয়ার রেকর্ড, কিংবা ভাড়াটিয়া থাকার চুক্তি (৮) ভারতে ইস্যু করা বার্থ সার্টিফিকেট (যদি জন্ম ভারতে হয়) (৯) প্যান কার্ড, যাতে ইস্যু করার তারিখ দেওয়া আছে (১০) কেন্দ্রীয়, রাজ্য সরকার, কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বা সরকারি কর্তৃপক্ষের জারি করা কোনও নথি (১১) গ্রামে পঞ্চায়েত বা শহরের পৌরসভার কোনও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির জারি করা সার্টিফিকেট (১২) আবেদনকারীর নামে সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংক কিংবা পোস্ট অফিসের হিসাব খাতা (১৩) ভারতীয় কোনও বিমা কোম্পানির জারি করা ইনশিওরেন্স পলিসির দলিল (১৪) আবেদনকারীর নামে বিদ্যুৎ, গ্যাস বা জলের কানেকশন বা বিলের কপি। এবং এরকম আরও বেশ কিছু নথিপত্রও প্রমাণ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।

ঘ) আবেদন করার পর কী হবে? অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর জেলা পর্যায়ের একটি কমিটি সেগুলো যাচাই-বাছাই করবে। তারপর ইমেইল/এসএমএসের মাধ্যমে ওই কমিটি আবেদনকারীকে জানাবে কোন তারিখে তাকে মূল (অরিজিনাল) নথিপত্র সমেত সশরীরে হাজিরা দিতে হবে। এরপর সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবেদনকারীকে (ভারত রাষ্ট্রের প্রতি) ‘আনুগত্যের শপথ’ পড়াবেন এবং সেটির ভিডিও করা হবে। আর যদি নথিপত্রে কোনও খামতি থাকে, তাহলে আবেদনকারীকে সেটা দিতে বলা হবে। আর যদি সব নির্ভুল থাকে, তাহলে জেলা স্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অনলাইনে জানিয়ে দেবেন যে কাগজপত্র সব ঠিকঠাক আছে এবং তিনি শপথের ভিডিও-ও আপলোড করে দেবেন। এই পুরো জিনিসটা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে এমপাওয়ারড প্যানেলের কাছে পাঠানো হবে এবং তারা সব কিছু দেখে আবেদন গ্রহণ করবেন, কিংবা খারিজ করে দেবেন।

অবেদন গৃহীত হলে ওই ব্যক্তিকে ভারতীয় নাগরিকত্বের একটি ‘ডিজিটাল সার্টিফিকেট’ দেওয়া হবে। আর যদি কেউ আবেদনের সময়ই কাগজে সই করা সার্টিফিকেট চান তাহলে তিনি সেটাই পাবেন, যদিও সেটা বিভিন্ন রাজ্যে এমপাওয়ারড প্যানেলের অফিস থেকে সংগ্রহ করতে হবে।

ওই ব্যক্তি যে তারিখে ভারতে প্রবেশ করেছেন, সেই দিন থেকেই তিনি ভারতীয় নাগরিক হয়েছেন বলে গণ্য করা হবে। অর্থাৎ যদি কোনও হিন্দু বা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ধরা যাক ২০১০ সালে পাকাপাকিভাবে ভারতে চলে এসেছেন, তাহলে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সফলভাবে আবেদন করলে তাকে সেই দিন থেকেই ভারতের নাগরিক বলে ধরা হবে। 

আরও পড়ুন- বাংলাদেশ থেকে যাওয়া হিন্দুদের নাগরিকত্ব দিতে নতুন পোর্টাল করছে ভারত

/এফএস/
সম্পর্কিত
ভারত থেকে জেল খেটে ফিরলেন ৭ বাংলাদেশি
ভারত এক ফ্যাসিস্টকে জায়গা দিয়ে নিজেকেও ফ্যাসিস্ট প্রমাণ করেছে: দুদু
হিন্দু নেতা ভবেশ চন্দ্র রায় হত্যা: নিন্দা জানালো ভারত
সর্বশেষ খবর
সারা দেশে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের মহাসমাবেশ আজ
সারা দেশে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের মহাসমাবেশ আজ
নারায়ণগঞ্জে ঝুটবোঝাই চলন্ত ট্রাকে আগুন, চালক আহত
নারায়ণগঞ্জে ঝুটবোঝাই চলন্ত ট্রাকে আগুন, চালক আহত
ক্রুর যাত্রা থামিয়ে অপরাজিত মেসির ইন্টার মায়ামি
ক্রুর যাত্রা থামিয়ে অপরাজিত মেসির ইন্টার মায়ামি
বরগুনা জেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক গ্রেফতার
বরগুনা জেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক গ্রেফতার
সর্বাধিক পঠিত
কপি-পেস্টে চলছে ১৩ পত্রিকা, সম্পাদকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ
কপি-পেস্টে চলছে ১৩ পত্রিকা, সম্পাদকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ
মগবাজার রেললাইনে বাস আটকে যাওয়া সম্পর্কে যা জানা গেলো
মগবাজার রেললাইনে বাস আটকে যাওয়া সম্পর্কে যা জানা গেলো
গাজীপুরে সেই দুই শিশুকে হত্যা করেছেন মা: পুলিশ
গাজীপুরে সেই দুই শিশুকে হত্যা করেছেন মা: পুলিশ
আ.লীগের ঝটিকা মিছিল, বিপাকে পুলিশ
আ.লীগের ঝটিকা মিছিল, বিপাকে পুলিশ
হিন্দু নেতা ভবেশ চন্দ্র রায় হত্যা: নিন্দা জানালো ভারত
হিন্দু নেতা ভবেশ চন্দ্র রায় হত্যা: নিন্দা জানালো ভারত