দলীয় মুখপাত্রদের নামের নতুন তালিকা প্রকাশ করেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি)। মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) রাজ্য ও জাতীয় পর্যায়ের মুখপাত্র হিসেবে আলাদাভাবে মোট ৩৪ নেতাকে এই দায়িত্ব দিয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন দলটি। এরমধ্যে ১২ নেতাকে জাতীয় পর্যায়ের এবং অপর ২২ জনকে রাজ্য পর্যায়ের মুখপাত্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তালিকায় জায়গা পেয়েছেন আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় অভিযুক্ত এক নেতাও। এছাড়া রাজ্য পর্যায়ের মুখপাত্রের তালিকায় জায়গা পেয়েছেন বশিরহাট আসন থেকে নির্বাচিত আইনপ্রণেতা ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী নুসরাত জাহান রুহি। ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই’র প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত বছর ভারতের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠতা টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হলেও কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি’র কাছে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়ে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে আগেরবারের ৩৪ আসন থেকে তৃণমূলের আসন নেমে আসে ২২টিতে। অন্যদিকে ১৮টি আসনে জয় নিয়ে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হয়ে রাজ্যে মমতার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে বিজেপি। মমতার ক্ষমতায় আরোহনের দশ বছর পূর্তির সঙ্গে সঙ্গে আগামী বছর রাজ্যে নতুন নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে মাঠ পর্যায়ে দলকে শক্তিশালী করতে গত সপ্তাহে দলে বড় আকারের পরিবর্তন আনেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। যেসব স্থানে দলীয় কাঠামো দুর্বল হয়েছে বলে মনে করেছেন সেখানেই পরিবর্তন আনেন তিনি। এতে যেমন নতুন কিছু মুখ তৃণমূলে জায়গা পেয়েছেন আবার পুরনো অনেক নেতাই বাদ পড়েছেন। ওই পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার দলীয় মুখপাত্রদের তালিকা প্রকাশ করেছে দলটি।
তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় পর্যায়ের তালিকায় স্থান পাওয়া ১২ নেতার মধ্যে রয়েছেন টিএমসির সিনিয়র নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন, পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, দলীয় আইনপ্রণেতা সৌগত রায় এবং নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসের নাতি ও সাবেক দলীয় আইনপ্রণেতা সৌগত বোস।
আর রাজ্য পর্যায়ে তৃণমূল কংগ্রেসের ২২ মুখপাত্রের তালিকায় স্থান পেয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত জাহান রুহি। গত বছরের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের মনোনয়নে বশিরহাট আসন থেকে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন কারণে আলোচনায় থেকেছেন এই অভিনেত্রী-আইনপ্রণেতা। দলীয় কর্মকাণ্ড, উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরা, বিরোধীদের আক্রমণের পাল্টা জবাব দেওয়াসহ নানাভাবে সবসময়ই সক্রিয় থেকেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মুখপাত্রের তালিকায় স্থান পেয়ে সেসব কাজেরই স্বীকৃতি পেয়েছেন নুসরাত জাহান।
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য পর্যায়ের মুখপাত্রের তালিকায় স্থান পাওয়াদের মধ্যে রয়েছেন কুনাল ঘোষ, ওমপ্রকাশ মিশ্র ও সুব্রত মুখার্জি। এদের মধ্যে সারদা আর্থিক কেলেংকারির ঘটনায় অভিযুক্ত রয়েছেন কুনাল ঘোষ। অবৈধ কর্মকাণ্ডের জন্য ২০১৩ সালে যখন সারদা গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয় ওই সময়ে সারদা মিডিয়ার প্রধান নির্বাহী (সিইও) ছিলেন তিনি। ওই বছরের ২৩ নভেম্বর তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে এর দুই মাস আগে তাকে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বহিষ্কার করা হয় বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানায়। গ্রেফতারের পর কুনাল দাবি করেন তৃণমূলের আরও কয়েক জন নেতাও ওই কেলেংকারিতে জড়িত ছিলেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় সূত্রের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার পিটিআই জানিয়েছে, দলের নেতৃত্ব কোনো সময়েই কুনাল ঘোষের কাছে আনুষ্ঠানিক বহিষ্কারাদেশ পাঠায়নি। আবার তিনি নিজেও এ ধরনের চিঠি পাওয়ার দাবিও করেননি। রাজ্যসভার সাবেক আইনপ্রণেতা কুনাল ২০১৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত কারাগারে ছিলেন। কেলেংকারির সেই মামলায় বর্তমানে জামিনে আছেন তিনি।
মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই তৃণমূল কংগ্রেসের বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে আসছেন কুনাল ঘোষ। এমনকি দলীয় প্রধান মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গেও তাকে একাধিক কর্মসূচিতে দেখা গেছে। মুখপাত্রের তালিকায় স্থান পাওয়ার পর কুনাল ঘোষ পিটিআই’কে বলেন, ‘সংবাদপত্রে দেখেছিলাম যে দল আমাকে বহিষ্কার করেছে। কিন্তু এই বিষয়ে দল থেকে কোনও চিঠি পাইনি। সবসময়ই দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। মুখপাত্র হিসেবে কাজের সুযোগ দেওয়ায় দলীয় নেতা মমতা বন্দোপাধ্যায়কে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’