প্রেক্ষাগৃহে চলছে শাকিব খান অভিনীত ‘বরবাদ’ সিনেমা। ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটি নিয়ে তুমুল আগ্রহ দর্শকদের। ঢালিউড কিং খানের সিনেমা বলে কথা। এমনকি নিজের প্রথম সিনেমার জন্য প্রশংসা কুড়াচ্ছেন নির্মাতা মেহেদী হাসান হৃদয়।
তবে বিপত্তি বেঁধেছে নির্মাতার সুখের স্রোতে। রমরমিয়ে ব্যবসার মুহূর্তে এটির সিনেমাটোগ্রাফির ক্রেডিট নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। সেই বিতর্ক শুরু করেছেন ভারতীয় সিনেমাটোগ্রাফার শৈলেশ আওয়াস্থি।
৫ এপ্রিল (শনিবার)নির্মাতা মেহেদী হাসান হৃদয়ের দেওয়া এক ফেসবুক পোস্টের কমেন্ট বক্সে শৈলেশ আওয়াস্থি দাবি করেছেন, ‘বরবাদ’ সিনেমার প্রকৃত সিনেমাটোগ্রাফার তিনিই। শুধু তাই নয়, সিনেমাটির সৃজনশীল ও ভিজ্যুয়াল নির্মাণে তারই প্রধান ভূমিকা। অথচ চূড়ান্ত ক্রেডিট থেকে তাকে বাদ দিয়ে সিনেমাটোগ্রাফির স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে রাজু রাজকে। শৈলেশ আওয়াস্থি হৃদয়কে উদ্দ্যেশ্য করে মন্তব্য করেছেন, “যখন তোমার কঠোর পরিশ্রমকে উপেক্ষা করা হয় এবং অন্যরা তোমার কাজের কৃতিত্ব নেয়, তখন সেটা হতাশাজনক। ‘বরবাদ’-এর সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে আমার শতভাগ দিয়েছি। তাছাড়া আমি সৃজনশীল বিভিন্ন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সিনেমাটিকে বানাতে সাহায্য করেছি। অথচ সেগুলো আমার দায়িত্ব ছিল না। কিন্তু আমাকে সেই কৃতিত্ব দেওয়া হয়নি, যা দেওয়া হয়েছে অন্যকে।”
তিনি আরও লিখেছেন, ‘রাজু রাজ, যাকে ডিওপি হিসেবে কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে, তিনি সিনেমার সঙ্গে খুব কমই যুক্ত ছিলেন। সত্যি বলতে, এই শিরোনাম (ডিওপি) দাবি করার আগে প্রথমে সিনেমাটোগ্রাফির মৌলিক বিষয়গুলি বুঝতে হবে। আমি মাঠে ছিলাম, শটগুলি আমি সাজিয়েছিলাম, ভিজ্যুয়াল ডিজাইন আমি করেছিলাম। আমার দায়িত্বের বাইরে গিয়েও আমি কাজ করেছিলাম। এটা অহংকার নয়, এটা ন্যায্যতার প্রশ্ন। আমি কেবল আমার দক্ষতা দিয়ে নয়, সততার সাথে এই সিনেমাটিতে কাজ করেছি। পোস্টার, উইকিপিডিয়া এবং আইএমডিবিতে নাম পরিবর্তন করা যেতে পারে, কিন্তু সত্য সর্বদা তার পথ খুঁজে নেয়।’ অন্যদিকে, ৬ এপ্রিল শৈলেশ আওয়াস্তি নিজের ওয়ালে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, “আজিম ভাই এবং শাহরিনকে অভিনন্দন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে ১৬ কোটি বাজেটের একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ নিঃসন্দেহে একটি সাহসী পদক্ষেপ।যখন বেশিরভাগ প্রযোজনা সংস্থা বড় বাজেটের প্রকল্প নিয়ে ঝুঁকি নিতে দ্বিধা করে, তখন রিয়েল এনার্জি প্রোডাকশন তাদের প্রথম প্রযোজনা, ‘বারবাদ’র মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের একটি চলচ্চিত্র উপহার দেওয়ার জন্য এগিয়ে এসেছে। সাহস এবং দূরদৃষ্টির জন্য তারা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। কোন সন্দেহ নেই যে, ‘বরবাদ’ দেশের সেরা বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রগুলির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে। যদি এই প্রযোজনা সংস্থা তার গতি বজায় রাখতে পারে এবং এই ধরণের মানের চলচ্চিত্র উপহার দিতে পারে, তাহলে আমরা হয়তো ঢালিউড শিল্পে একটি নতুন যুগের সূচনা দেখতে পাচ্ছি, যা আমাদের চলচ্চিত্রকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাবে।”
এরপর তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একজন নির্ভীক নারী এবং পথিকৃৎ প্রযোজক শারমিন আখতার সুমির প্রতি শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতা। অসংখ্য চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তিনি সাহস করে দর্শকদের সামনে ‘বরবাদ’র মতো একটি বড় বাজেটের প্রকল্প উপস্থাপন করেছেন। আমি নিশ্চিত যাত্রাটি সহজ ছিল না। তবে আমি আপনাদের আন্তরিকভাবে অনুরোধ করছি, দয়া করে সিনেমার পথ থেকে সরে আসবেন না। আপনাদের মতো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ প্রযোজকদেরই আমাদের শিল্পকে নতুন করে রূপ দেওয়ার এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। বাংলা সিনেমা দীর্ঘজীবী হোক। সকল সিন্ডিকেটের পতন হোক!” জানা গেছে রবিবার (৬ এপ্রিল)দুপুর নাগাদ প্রযোজকের হস্তক্ষেপে বিষয়টি মিটমাট হয়। এরপরই সিনেমাটোগ্রাফার এই পোস্ট দেন তার ওয়ালে। যদিও সেখানে শুধুই প্রযোজকের প্রশংসা করা হয়েছে। কিছুই উল্লেখ ছিলো না নির্মাতা বা নায়কের। যা থেকে স্পষ্ট, সিনেমাটোগ্রাফার প্রযোজকের মন রক্ষার জন্যই বিষয়টি নিয়ে আর সামনে আগাননি।
তবে, এসব প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করলে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি নির্মাতা হৃদয়কে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের রিয়েল এনার্জি প্রোডাকশন এবং ভারতের রিধি সিধি এন্টারটেইনমেন্টের ব্যানারে আজিম হারুন ও শাহরিন আক্তার সুমি প্রযোজনা করেছেন সিনেমা ‘বরবাদ’।
সিনেমার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাকিব খান, কলকাতার ইধিকা পাল, যিশু সেনগুপ্ত।