কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী মিতা হকের আজ চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০২১ সালের এই দিনে (১১ এপ্রিল) তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। পরের বছর (২০২২) থেকে কেরানীগঞ্জের বড় মনোহারিয়ায় শিল্পীর বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ‘মিতা-যুবরাজ ফ্রি হেলথ ক্যাম্প ২০২৫’।
সেই ধারাবাহিকতায় আজও দিনব্যাপী এই ক্যাম্পের আয়োজন করে যৌথভাবে মিতা হক-যুবরাজ দম্পতির পরিবারের সদস্যরা এবং গানের পরিবার সুরতীর্থ।
কণ্ঠশিল্পী মিতা হক ও অভিনেতা খালেদ খান যুবরাজ দম্পতির কন্যা কণ্ঠশিল্পী জয়িতা বলেন, ‘‘মা চলে যাওয়ার পর থেকে প্রতি বছর আমরা তাঁর পরিবার ও তাঁর গানের পরিবার ‘সুরতীর্থ’ এই ক্যাম্পটি আয়োজন করে আসছি। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দিনভর আমরা এলাকার প্রচুর নারী, শিশু ও পুরুষদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পরামর্শ দিয়েছি বিনা মূল্যে। এই চেষ্টা আমরা অব্যাহত রাখতে চাই।’’
বলা দরকার, খালেদ খান যুবরাজের জন্ম ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৮ সাল, মৃত্যু ২০ ডিসেম্বর ২০১৩। ছিলেন বাংলাদেশের একজন অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা। ১৯৭৮ সালে নাগরিক নাট্যদলের ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’ নাটকে কাজ করার মাধ্যমে তার অভিনয় জীবন শুরু। তিনি মঞ্চে ৩০টিরও বেশি নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি নির্দেশনা দিয়েছেন ১০টি নাটকে। শিল্পকলার অভিনয় শাখায় তার অবদানের জন্য তাকে ২০২২ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করা হয়। এর বাইরে তার অভিনীত টিভি নাটকের সংখ্যাও অসংখ্য।
অন্যদিকে, মিতা হক ১৯৬২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার চাচা দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অগ্রপথিক ও রবীন্দ্র গবেষক ওয়াহিদুল হক। মিতা হক প্রথমে তার চাচা ওয়াহিদুল হক এবং পরে ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খান ও সনজীদা খাতুনের কাছে গান শেখেন। ১৯৭৪ সালে তিনি বার্লিন আন্তর্জাতিক যুব ফেস্টিভালে অংশ নেন। ১৯৭৬ সাল থেকে তবলাবাদক মোহাম্মদ হোসেন খানের কাছে সংগীত শেখা শুরু করেন। ১৯৭৭ সাল থেকে আমৃত্যু তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারে সংগীত পরিবেশন করেন। সুরতীর্থ নামে একটি সংগীত প্রশিক্ষণ দল গঠন করে সেখানে পরিচালক ও প্রশিক্ষক হিসেবে আমৃত্যু কাজ করেন মিতা হক। এছাড়া তিনি ছায়ানটের রবীন্দ্রসংগীত বিভাগের প্রধান ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ বেতারের সর্বোচ্চ গ্রেডের তালিকাভুক্ত শিল্পী ছিলেন। ১৯৯০ সালে বিউটি কর্নার থেকে প্রকাশিত হয় তার প্রথম রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম ‘আমার মন মানে না’।
ক্যারিয়ারে প্রায় ২০০টি রবীন্দ্রসংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন মিতা হক। তার এককভাবে মুক্তি পাওয়া মোট ২৪টি অ্যালবাম আছে। এর মধ্যে ১৪টি ভারত থেকে ও ১০টি বাংলাদেশ থেকে। তিনি ২০১৬ সালে শিল্পকলা পদক লাভ করেন। সংগীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০২০ সালে একুশে পদক দেয়।