X
রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
৭ বৈশাখ ১৪৩২
সিনেমা সমালোচনা

অল উই ইমাজিন অ্যাজ লাইট: পায়েল কাপাডিয়ার একটি মাস্টারপিস

জনি হক
জনি হক
১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১:২২আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪৬

আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে নীল-কালচে মেঘ। নেপথ্যে শোনা যায় একটি মেয়ের কণ্ঠ, ‘মেঘে মেঘে আদর পাঠিয়ে দিচ্ছি তোমাকে। যখন বৃষ্টি নামবে, আমার আদর তোমাকে ছুঁয়ে দেবে।’ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের নারী পায়েল কাপাডিয়া পরিচালিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘অল উই ইমাজিন অ্যাজ লাইট’ এই সংলাপের মতোই কাব্যময়। ছবিটির গল্পে শান্ত নদীর মতো বয়ে চলে নারীসুলভ কমনীয়তা। শহুরে কোলাহলে আলাদাভাবে ধরা দেয় মধ্যবিত্ত নারীদের আকুল তৃষ্ণা, কিছু মায়াভরা চাহনি, নিস্তরঙ্গ জীবনে কিছু মায়াময় আশা। এসবের মাঝেই অন্ধকারে আলো খুঁজে যায় তারা।

২০২১ সালে কানের সমান্তরাল বিভাগ ডিরেক্টর’স ফোর্টনাইটে নির্বাচিত পায়েল কাপাডিয়ার ‘অ্যা নাইট অব নোয়িং নাথিং’ সেরা প্রামাণ্যচিত্র হিসেবে গোল্ডেন আই পুরস্কার জিতেছে। সেটির মতোই ‘অল উই ইমাজিন অ্যাজ লাইট’ নির্মাণের পদ্ধতি একই রেখেছেন তিনি। তাই শুরুর কয়েকটি দৃশ্য দেখে মনে হতে পারে প্রামাণ্যচিত্র! ফ্রেমে আসতে থাকে সড়কের একপাশে রাত্রিকালীন কাঁচাবাজারের বেচাকেনা, মালামাল ওঠানামা ও আবর্জনা পরিষ্কার করা। নেপথ্যে ভারতের বিভিন্ন ভাষাভাষি নারী-পুরুষ মুম্বাই শহর নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছেন। তাদের মধ্যে একজন বাংলা ভাষায় বলেন, ‘আমার পেটে বাচ্চা ছিল। কাউকে বলিনি। তো তখন এক ঘরে কাজে লাগলাম। ওই দিদির বাচ্চা ছিল। খুব বদমাইশি করতো, জ্বালাইতো আমাকে। ওই দিদি আমাকে অনেক খাইতে দিতো। ওই সালে আমাকে খুব খাওয়াইছে।’

কাঁচাবাজার, ক্রেতা-বিক্রেতা ও পাশের সড়কে চলাচল করা যানবাহন রেখে ক্যামেরা চলে যায় মুম্বাইয়ের একটি রেলস্টেশনে। প্ল্যাটফর্ম থেকে সেতু দিয়ে ওপরে উঠছে সবাই। এ যেন মুম্বাই এসে ওপরে ওঠার ছোটাছুটির প্রতীকী। ভারতীয় সবার কাছে মুম্বাই হলো ‘স্বপ্নের শহর’। লোকে লোকারণ্য দৃশ্যটির সঙ্গে নেপথ্যে মারাঠি ভাষায় এক নারী বলেন, ‘আমাদের গ্রামের প্রতিটি বাড়ি থেকে অন্তত একজন মুম্বাই শহরে আসে। কারণ মুম্বাইয়ে কাজ ও টাকা আছে। কেইবা এই শহরে এসে ফেরত যেতে চাইবে?’ আরেক নারীর কণ্ঠে মালায়লাম ভাষা, ‘আমার মন ভেঙে গিয়েছিল। কিন্তু এই শহর সেসব বিষয় ভুলিয়ে রাখতে পারে।’

কান উৎসবে পায়েলকে ঘিরে তিন অভিনেত্রী এসব দৃশ্য আর সংলাপের মাধ্যমে গল্পকার ও পরিচালক পায়েল কাপাডিয়া বুঝিয়ে দিয়েছেন, ‘অল উই ইম্যাজিন অ্যাজ লাইট’ চলচ্চিত্রের পটভূমি মুম্বাই শহর এবং এখানকার উচ্চবিত্ত ও কোটিপতিদের কথা মোটেও নেই গল্পে! ছবিটির মূল ভাষা মালায়লাম। এছাড়া ব্যবহার হয়েছে বাংলা, হিন্দি, মারাঠি, গুজরাটি ও ভোজপুরি ভাষা। মুম্বাইয়ে ভারতের বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষাভাষির লোকজনের বসবাসের বিষয়টি নেপথ্য কিছু সংলাপের সুবাদে দর্শকদের বুঝতে বাকি থাকে না। তারাই কিনা এই শহরের হৃদস্পন্দন!

নেপথ্যে আলাপচারিতা চলতে চলতে পর্দায় আসে একটি কমিউটার ট্রেনে নারীদের জন্য বরাদ্দ বগির খণ্ড খণ্ড চিত্র। সময় কাটাতে আড্ডা জমিয়েছেন বয়স্ক তিন জন। তরুণীদের কেউ দাঁড়িয়ে ইয়ারফোন ভাগাভাগি করে গান শুনছেন আর আলাপ করছেন। কেউবা বসে বিস্কুট খাচ্ছেন। এক তরুণী গভীর ঘুমে মগ্ন। নেপথ্যে গুজরাটি ভাষায় এক নারী বলতে থাকেন, ‘কতটা সময় পেরিয়ে গেছে টেরই পাইনি। এই শহর সময় কেড়ে নেয়। এটাই জীবন। এমন ছোটাছুটিতে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়াই ভালো।’

এরপরই পর্দায় আসে অন্যতম মুখ্য চরিত্র প্রভা। একটু আগে যে তরুণীকে ট্রেনের আসনে শুয়ে ঘুমে ডুবে থাকতে দেখা গেছে, তার নাম অনু। তারা একই বাসায় ভাড়া থাকে। কেরালা থেকে আসা দুই জনই মুম্বাই শহরের একটি হাসপাতালের নার্স। বয়সে বড় প্রভা কর্মক্ষেত্রে খুব নিবেদিত ও রাশভারী স্বভাবের। সে বিবাহিতা হলেও স্বামীর সঙ্গে সংসারের খুব একটা সুখস্মৃতি নেই। চাকরির কারণে তার স্বামীকে বিয়ের পরপরই জার্মানি চলে যেতে হয়েছে। তিনি সেখানকার একটি কারখানার শ্রমিক। শুরুতে ফোনে যোগাযোগ থাকলেও পরে তাদের আলাপন নেমে আসে শূন্যের কোটায়। স্বামীর সঙ্গে একেবারেই যোগাযোগ নেই প্রভার। কিন্তু সে অন্য পুরুষে আকৃষ্ট হয় না। তার অগাধ বিশ্বাস, কোনও একদিন স্বামী ফিরে আসবেই। এ কারণে হাসপাতালের একজন চিকিৎসক কবিতা লিখে নতুন সম্পর্কের ইঙ্গিত দিলেও বিনয়ের সঙ্গে ফিরিয়ে দিতে দ্বিধা করে না প্রভা।

বিয়ের আগে প্রভা ও তার স্বামীর পরিচয় ছিল না। মা-বাবা পাত্র ঠিক করে মেয়েকে বাড়ি আসতে বলেছিলেন। ব্যস! এক রাতে ঘুম ঘুম চোখে প্রভার মুখে এই কথা শুনে অনুর মুখ থেকে বেরিয়ে আসে, ‘চেনা-জানা নেই এমন কাউকে কীভাবে বিয়ে করা সম্ভব!’ এই সংলাপের মতোই অনু ছকেবাধা রীতি মেনে চলতে চায় না। সে চাকরি করে ঠিকই, কিন্তু তার মন পড়ে থাকে প্রেমিকের কাছে। অনু হিন্দু, কিন্তু প্রেমিক শিয়াজ কেরালার মুসলিম পরিবারের ছেলে। স্বাভাবিকভাবে এই সম্পর্ক অনুর পরিবারের মেনে নেওয়ার কথা না। যদিও সেই দুশ্চিন্তা নিয়ে পড়ে না থেকে চুটিয়ে জীবন উপভোগ করতে চায় এই তরুণী। কিন্তু বিশাল শহরেও প্রেমিক যুগলের সময় কাটানোর মতো জায়গার বড়ই সংকট। কোনোদিন বাড়ি কিংবা অফিসের গ্যারেজে, আবার কোনোদিন বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় পার্কেই অন্তরঙ্গ সময় কাটায় দু’জনে। একদিন অনুর প্রেমিক জানায়, তার বাসা খালি পাওয়া যাবে। সেজন্য বোরকা কেনে অনু। একই বাসায় থাকলেও তার প্রেমের কথা জানে না প্রভা।

সিনেমার একটি দৃশ্য এদিকে প্রভার ঠিকানায় জার্মানি থেকে একটি পার্সেল আসে। তবে তার স্বামী কিংবা কোনও প্রেরকের নাম নেই তাতে। প্যাকেট খুলে দেখা যায় এটি একটি রাইস কুকার। অনুর ধারণা, এই পার্সেল প্রভার স্বামীরই পাঠানো। তবে অনুর সামনে এটি ব্যবহার করার খুব একটা ইচ্ছে নেই বোঝায় প্রভা। কিন্তু এক রাতে অনু ঘুমানোর পর রাইস কুকারটি পরম আদরে জড়িয়ে ধরে সে।

ছবিটির গল্প মোটামুটি এমন– ভারতের মুম্বাইয়ে একই হাসপাতালে কর্মরত তিন জন নার্স জীবনের মধুরেণ সমাপয়েতের জন্য সংগ্রাম করছে। প্রভা ও অনুকে মোটামুটি জানা গেলো। হাসপাতালে তাদের আরেক সহকর্মী পার্বতী তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তিনি রান্নাঘরে কাজ করেন। পেশায় রাঁধুনি। ব্যক্তিজীবনে বিধবা। স্বামীর জুটমিল থেকে চাকরি চলে যাওয়ার পর সেই ক্ষতিপূরণ হিসেবে মুম্বাইয়ে মাথা গোঁজার একটি ঘর পেয়েছিলেন। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় ঘরের মালিকানার দলিল হারিয়ে যায়। স্বামীর পরলোকগমণের পর পার্বতীর ঘরে নজর পড়ে এক ভূমিদস্যুর। প্রভা পরিচিত একজন আইনজীবীর মাধ্যমে চেষ্টা করলেও পার্বতী ঘরছাড়া হওয়া থেকে নিস্তার পায় না। অগত্যা চাকরি ছেড়ে গ্রামে পিতৃভিটায় চলে যাওয়ার মনস্থির করে মধ্যবয়সী পার্বতী। সেখান থেকে তো আর তাকে তাড়ানো যাবে না!

সাগরপাড়ে পার্বতীর গ্রাম। স্বাভাবিকভাবেই স্থানীয়রা মৎস্যজীবী। পার্বতীকে গ্রামে পৌঁছে দেওয়ার সুযোগে উপকূলীয় এই জায়গায় বেড়াতে যায় প্রভা ও অনু। অনুর কাছ থেকে সবকিছু জেনে শিয়াজ হাজির হয় একই গ্রামে। সমুদ্রতীরে একটি গুহার ভেতর ভালোবাসার গল্পকথন শোনা যায় তাদের। এর আগেই আড়াল থেকে তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্ত চোখে পড়ে প্রভার।

এদিকে বিকেলে জেলেদের জালে জড়িয়ে উদ্ধার হয়েছে এক পুরুষ। তিনি প্রায় মৃত। কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে লোকটির শ্বাস-প্রশ্বাস ফিরিয়ে আনে প্রভা। গ্রামবাসীর সহায়তায় স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয় তাকে। সেখানে লোকটির খোঁজ নিতে যায় প্রভা। তাদের স্বামী-স্ত্রী ভেবে বসেন চিকিৎসকের সাহায্যকারী এক বৃদ্ধা। জ্ঞান ফেরার পর লোকটির সঙ্গে আলাপ করতে থাকে প্রভা। তিনি কি প্রভার স্বামী, যিনি জার্মানিতে কারখানায় কাজ করে ক্লান্ত?

সিনেমার আরেকটি দৃশ্য এ প্রশ্নের উত্তর দর্শকের কাছে! শেষ দৃশ্যে রাতে সমুদ্রতীরে ভেসে বেড়ানো হাওয়ার মাঝে বেড়ার একটি খাবারের দোকানে বসে থাকে প্রভা ও পার্বতী। অনুকে প্রভা আগেই বলে রেখেছে, সিয়াজকে যেন নিয়ে আসে। অনু ও সিয়াজ আসে। সিয়াজকে হাসিমুখে মেনে নেয় প্রভা। চোখ-মুখ দেখেই বোঝা যায়, প্রভার মধ্যে এক ধরনের মানসিক উত্তরণ ঘটেছে। নিজেকে এতদিন শৃঙ্খলে বেঁধে রাখা এই নারী যেন মনের সব বন্ধ দুয়ার খুলে দিয়েছে। পায়েল কাপাডিয়া অনুপ্রেরণা জোগাতে বার্তা দিয়েছেন, শৃঙ্খলের চাপ থেকে প্রথমে মুক্তি দিতে হবে নারীর নিজেকেই। তবেই না মুক্তি মিলবে! গল্পটির বাঁকে বাঁকে সেই বক্তব্যই রাখা আছে।

পুরো ছবি জুড়ে প্রধান তিনটি চরিত্রকে যেসব সংকট আঁকড়ে ধরে থাকে, সেগুলো নিরসনের উপায় তারা নিজেদের মতো করে খুঁজে পায় গল্পের শেষ ভাগে। ছবিটিতে বড় কোনও তারকা নেই। প্রভা চরিত্রে রূপদান করা কানি কুসরুতি ও অনুর ভূমিকায় থাকা দিব্যা প্রভা মূলত মালায়লাম ছবিতে অভিনয় করেন। পার্বতী হিসেবে পর্দায় আসা ছায়া কদম অবশ্য এখন বেশ পরিচিত। আমির খান প্রযোজিত ও কিরণ রাও পরিচালিত ‘লাপাতা লেডিস’ ছবিতে রেলস্টেশনের চা-দোকানির ভূমিকায় দর্শকরা তাকে দেখেছেন। ‘অল উই ইমাজিন অ্যাজ লাইট’-এ কানি, দিব্যা ও ছায়া দারুণ অভিনয় করেছেন। প্রভা, অনু ও পার্বতী চরিত্র তিনটি যেন তাদের জন্যই লেখা হয়েছে! বিশেষ করে ছায়া কদম অনবদ্য। শিয়াজ চরিত্রে হৃধু হারুনের অভিনয়ও ভালো লাগে।

ছবিটির কিছু কিছু দৃশ্যে ও চরিত্রগুলোর চাওয়া-পাওয়ার দিকে তাকালে বাংলাদেশকে খুঁজে পাওয়া যায়! ছাদে শুকাতে দেওয়া কাপড় বৃষ্টি নামতেই তড়িঘড়ি তুলে নেওয়া, হাসপাতালে টেবিল ফ্যান যেদিকে ঘোরে সেদিকে মাথা ঘোরানো, বাথরুমে নারীদের কাপড় কাচা, যানজটের শহরে গাড়ির হর্ন বাজতে থাকা, বৃষ্টিতে খোলা জানালার ফাঁক গলে আসা জলে ভিজে যাওয়া মেঝে মোছা– এমন কিছু দৃশ্য বাঙালিদের যাপিত জীবনের অংশ। মোটা দাগে, সমকালীন মুম্বাইয়ে নারীদের জীবনের বর্ণনা দিয়েছেন নির্মাতা। তবে এতে আমেরিকান ও ইউরোপীয় মুক্ত কমেডি ড্রামা টের পাওয়া যায়।

পায়েল কাপাডিয়া কাব্যিকভাবে একটি সহজ গল্প বলেছেন, যেখানে তিন প্রজন্মের তিন জন নারীর চাওয়ায় নিজেদের মতো করে চলতে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নেই। গল্পটির আরেক বক্তব্য ধরা যায়, নারীরা অন্যদের সহায়তা করার কাজে নিবেদিত থাকলেও সেই অনুযায়ী অর্থ, মর্যাদা ও স্বাধীনতা নেই তাদের। কিন্তু তারা পুরুষ হলে চিত্রটা ভিন্ন হতেও পারতো! মূল গল্পে ঢোকার প্রথম দুটি দৃশ্যে সমাজে নারীর জন্য পুরুষের অনুভূতিহীনতার বার্তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন পায়েল কাপাডিয়া। এতে দেখা যায়, এক বৃদ্ধা হাসপাতালের বিছানায় বসে অসন্তোষ প্রকাশ করে নার্স প্রভাকে জানান, তিনি টিভি দেখার সময় তার প্রয়াত স্বামীর অশরীরী আত্মা বিরক্ত করতে থাকে! এরপর হাসপাতালের কাউন্টারে অনুর কাছ থেকে ২৪-২৫ বছর বয়সী এক তরুণী গর্ভনিরোধক পিলের বোতল চেয়ে নেন, যার তিন সন্তান আছে। 

এ ছবির বেশিরভাগ দৃশ্য রাতের। ফ্রেমে ফ্রেমে নীলচে আবহ চোখে পড়ে। শীতলতার রঙ নীল বলেই হয়তো পরিচালক পায়েল কাপাডিয়া দর্শকদের মনে সেটি ছড়িয়ে রাখতে চেয়েছেন। কোনও দৃশ্য তেমন ঝকঝকে-চকচকে নয়। তবে কয়েকটি অসাধারণ পার্থিব মুহূর্ত আছে। শুরু থেকে ধীরে ধীরে শেষ দৃশ্য পর্যন্ত দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ রেখে হৃদয় জয় করেছেন পায়েল কাপাডিয়া। মুম্বাইয়ে ২৫ দিন ও রত্নাগিরিতে ১৫ দিন শুটিং হয়েছে। ছবিটির আন্তর্জাতিক পরিবেশক জেনাস ফিল্মস ও সাইডশো। গত ২১ সেপ্টেম্বর ভারতে, ২ অক্টোবর ফ্রান্সে ও ২৯ নভেম্বর যুক্তরাজ্যের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ছবিটি।

প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্র দিয়েই গত মে মাসে ৭৭তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের মূল প্রতিযোগিতায় জায়গা করে নেন পায়েল কাপাডিয়া। স্বর্ণপামের জন্য মনোনীত হওয়া প্রথম ভারতীয় নারী ৩৮ বছর বয়সী এই নির্মাতা। তার হাত ধরেই প্রায় ৩০ বছর পর কোনও ভারতীয় ছবি কান উৎসবের মূল প্রতিযোগিতায় জায়গা পেয়েছে। উৎসবের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার গ্রাঁ প্রিঁ জিতেছে ‘অল উই ইম্যাজিন অ্যাজ় লাইট’। ভারত সরকারের অধীনে পরিচালিত পুনের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ায় ২০১৫ সালে শিক্ষার্থীদের ধর্মঘটের প্রেক্ষাপটে ‘অ্যা নাইট অব নোয়িং নাথিং’ বানিয়েছিলেন পায়েল কাপাডিয়া। তিনি ওই ধর্মঘটে অংশ নেন। সেটাই বোধহয় তার জন্য কাল হলো! ধারণা করা হচ্ছে, এজন্যই তার ছবি পাশ কাটিয়ে ভারত থেকে অস্কারে ‘লাপাতা লেডিস’ পাঠানো হয়েছে। ‘অল উই ইমাজিন অ্যাজ লাইট’ দেখা শেষে একটা প্রশ্ন মনে উঁকি দিতে পারে, ভারতের কি ভুল হয়ে গেলো? জনি হক

একনজরে ‘অল উই ইমাজিন অ্যাজ লাইট’

গল্প, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: পায়েল কাপাডিয়া

রেটিং: ৫/৫

অভিনয়: কানি কুসরুতি, দিব্যা প্রভা, ছায়া কদম, হৃধু হারুন, আজিস নেদুমাঙ্গাদ

ধরন: ড্রামা, রোম্যান্স

ভাষা: হিন্দি, মালায়লাম, মারাঠি

দৈর্ঘ্য: ১ ঘণ্টা ৫৮ মিনিট

চিত্রগ্রহণ: রণবীর দাস

শিল্প নির্দেশনা: পীযূষা চালকে, যশস্বী সাভারওয়াল, শামীম খান

সম্পাদনা: ক্লেমোঁ পান্তোঁ

সংগীত: ধৃতিমান দাস

প্রযোজনা: টমাস হাকিম, জুলিয়ান গ্রাফ (ফরাসি প্রতিষ্ঠান: পেটি কেও)

বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান: চক অ্যান্ড চিজ ফিল্মস, অ্যানাদার বার্থ (ভারত), আর্তে ফ্রঁস সিনেমা (ফ্রান্স), বিএএলডিআর ফিল্ম (নেদারল্যান্ডস), লে ফিল্মস ফঁভ (লাক্সেমবার্গ), পুলপা ফিল্মস (ইতালি)

পরিবেশনা: কন্ডর ডিস্ট্রিবিউশন (ফ্রান্স), স্পিরিট মিডিয়া (ভারত), সেপ্টেম্বর ফিল্ম (নেদারল্যান্ডস)

লেখক: সাংবাদিক, গীতিকবি ও সমালোচক

/এমএম/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
সানফ্রানসিসকোতে সংবর্ধিত ড. অণিমা রায়
সানফ্রানসিসকোতে সংবর্ধিত ড. অণিমা রায়
শাশুড়িকে বাংলার ‘বাঘিনী’ আখ্যা দিলেন কারিনা
শাশুড়িকে বাংলার ‘বাঘিনী’ আখ্যা দিলেন কারিনা
দশ অভিনয়-প্রতিভার খোঁজ!
দশ অভিনয়-প্রতিভার খোঁজ!
তবুও কানাডা সফরে সাবিনা...
তবুও কানাডা সফরে সাবিনা...
রাজের ‘ইনসাফ’, নায়িকা ফারিণ
রাজের ‘ইনসাফ’, নায়িকা ফারিণ