বিপ্লবী বিজয় শেষে দেশ আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে। যদিও সিনেমা এখনও আটকে আছে স্তব্ধতায়। ৫ আগস্টের পর উল্লেখযোগ্য কোনও সিনেমা মুক্তি পায়নি প্রেক্ষাগৃহে। অনেকেরই অভিমত, এখন সিনেমা মুক্তির জন্য সঠিক সময় নয়।
তবে এমন অভিমত ছাপিয়ে নতুন বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য প্রথম সিনেমা হিসেবে ১১ অক্টোবর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে যাচ্ছে কুসুম সিকদারের ‘শরতের জবা’। শুধু অভিনয় নয়, এই ছবির গল্প, চিত্রনাট্য, নির্মাণ ও প্রযোজনা একাই করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী এই অভিনেত্রী। যেমন নজির ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রিতে সচরাচর মেলেনি।
মূলত এসব বিষয় নিয়ে প্রাণবন্ত এক আড্ডা হয়েছে বাংলা ট্রিবিউন-এর সেলিব্রিটি শো ‘মামানামা-আউট অব দ্য বক্স’ সুবাদে। জনি হকের প্রযোজনা ও মাহমুদ মানজুরের সঞ্চালনায় অতিথির আসনে বসে এদিন কুসুম সিকদার জানান তার চলচ্চিত্রযাত্রার নানান গল্প।
কথার ফাঁকে কুসুমের প্রতি মোটাদাগে দুটি প্রশ্ন ছিলো। কেন তিনি নির্মাণের মতো কঠিন একটি কাজে পা বাড়ালেন, সঙ্গে অভিনয়-চিত্রনাট্য-প্রযোজনাও। দ্বিতীয় প্রশ্নটি ছিলো, কেন এই অসময়ে সিনেমাটি মুক্তি দিতে যাচ্ছেন? কারণ, চারপাশে এখনও অস্থিরতা।
শুরুতে দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাব শোনা যাক কুসুমের কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘এই যে আপনারা আমার ইন্টারভিউ নিচ্ছেন। আমিও দিচ্ছি। লাইট, ক্যামেরা, মেকআপ, ড্রাইভার; কোনোকিছু বন্ধ আছে? চিকিৎসক, শিক্ষক, পাইলট, বাজার, খাওয়া, গাওয়া- সবই তো চলছে। সবই চলছে সিনেমা কেন বন্ধ থাকবে? সব দোষ কেন আমাদের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির। ফেসবুক খুললে দেখবেন সবাই বিনোদনে আছে। ওটিটি দেখছে। গান শুনছে। হল রিলিজটা শুধু বন্ধ। বলতে পারেন এই অভাববোধ থেকে ছবিটি মুক্তি দিচ্ছি। আমি চাই আবার প্রেক্ষাগৃহে দর্শক ফিরুক।’
কুসুম সিকদার মনে করেন, এই ছবিতে কোনও নামকরা নায়ক নেই, তবে এর গল্পটাই বড় নায়ক। ফলে দর্শকরা গল্পের টানে হলেও ছবিটি দেখতে আসবেন।
বলা দরকার, কুসুম সিকদার টানা ৮ বছর পর সিনেমায় ফিরলেন। তার অভিনীত শেষ ছবি মুক্তি পেয়েছিলো ২০১৬ সর্বশেষ মুক্তি পায় কুসুম অভিনীত গৌতম ঘোষ পরিচালিত আলোচিত সিনেমা ‘শঙ্খচিল’। জানান, এর পর অনেক সিনেমার প্রস্তাব এলেও নানাবিধ কারণে কাজ করা হয়নি। তার ভাষায়, ‘আমি আসলে এডজাস্ট করতে পারিনি। লক্ষ্য করবেন, আমি আমার ব্যাচ (২০০২) থেকেই কাজ কম করে আসছি। তখন যারা মাসের ২৮ দিনই শুটিং করতো, আমি তখন বড়জোর ১২ দিন করতাম। আমি সবসময় শিখতে চাই। কোনও ইউনিটে কাজ করে যদি কিছু শিখতে না পারি, তাহলে কাজটা করার আগ্রহ পাই না। আরেকটা বিষয় হলো, আমি সবার সঙ্গে এডজাস্ট করতে পারি না। হতে পারে এটা আমার ব্যর্থতা। এসব মিলিয়ে আমার কাজের পরিমাণ খুব কম।’
তবে এই কমতি নিয়ে একদমই অনুতপ্ত নন অভিনেত্রী। তিনি মনে করেন, কাজ কম করেও তিনি অনেক ব্যস্ত শিল্পীর চেয়ে বেশি ভালোবাসা পেয়ে এসেছেন দর্শক ও মিডিয়ার কাছে।
এবার প্রথম প্রশ্নে ফেরা যাক। কুসুমের প্রতি প্রশ্ন ছিলো, কেন তিনি নির্মাণে এলেন। তাও আবার সিনেমার মতো বড় ক্যানভাসে। সঙ্গে প্রযোজনাও। বিশেষ করে পরিচালনার কাজটি নিজে না করলে অভিনয় আরও মন দিতে পারতেন কি?
জবাবে কুসুম বলেন, ‘প্রথমত গল্পটি আমার লেখা। চিত্রনাট্যও আমারই লেখা। ফলে এই গল্পটার প্রতি আমার একটা আত্মবিশ্বাস জন্মেছে। আমি প্রতিটি দৃশ্য দেখতে পারছিলাম। তবুও পরিচালনার মতো কঠিন কাজটি করতে চাইনি শুরুতে। দুজন নির্মাতার সঙ্গে বসেছি গল্পটি নিয়ে। কিন্তু ওনাদের সঙ্গে আলাপ আগাতেই টের পাচ্ছিলাম, আমার যে গল্পটা সেটা ওনারা ধরতে পারছেন না। এটা হতেই পারে। ফলে আমি আর গল্পটাকে নিয়ে অন্য নির্মাতার সঙ্গে কম্প্রোমাইজে যেতে চাইনি। সিদ্ধান্ত নিলাম নিজেই সিনেমাটি বানাবো। সঙ্গে সমৃদ্ধ একটি টিম থাকবে। সেভাবেই কাজ করেছি। এটা একটা টিমওয়ার্ক ছিলো। আমার একার কিছু নয়।’
‘মামানামা-আউট অব দ্য বক্স’ সেটে বসে এমন আরও অনেক জীবনের গল্প করেছেন কুসুম সিকদার। যা এরমধ্যে উন্মুক্ত হয়েছে বাংলা ট্রিবিউন-এর ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজে।
বলা দরকার, কুসুমের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান পহরডাঙ্গা পিকচার্সের প্রথম নিবেদন হচ্ছে ‘শরতের জবা’। নড়াইলের কালিয়া উপজেলায় পহরডাঙ্গা ইউনিয়নে থ্রিলার ঘরানার ‘শরতের জবা’র শুটিং হয়েছে।
ছবিটিতে কুসুমের সঙ্গে অভিনয় করেছেন ইয়াশ রোহান, জিতু আহসান, শহিদুল আলম সাচ্চু, নরেশ ভূঁইয়া, মাহমুদুল ইসলাম মিঠু, অশোক ব্যাপারি, হাসনাত রিপন, জাহাঙ্গীরসহ অনেকে। চিত্রগ্রহণ করেছেন খায়ের খন্দকার।
‘শরতের জবা’য় একটি গান আছে। এটি গেয়েছেন আলেয়া বেগম। এর কথা লিখেছেন ও সুর করেছেন ইমন চৌধুরী। সংগীতায়োজনে সন্ধি।
২০১৬ সালে সর্বশেষ চলচ্চিত্রে কাজ করলেও ২০১৮ সালে হানিফ সংকেতের নাটকে অভিনয় করেন কুসুম সিকদার। এর নাম ‘শেষ অশেষের গল্প’। সে হিসেবে টানা ৬ বছর পর অভিনয়ে ফিরলেন অভিনেত্রী।