অনেকেই বলছেন, রাজনৈতিক বিবেচনা কিংবা অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিজের কণ্ঠ জারি রাখার ফলে গত সরকারের আমলে হয়েছেন নিগৃহীত কিংবা সুবিধাবঞ্চিত। তেমনই তিন জন কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা, নির্মাতা আশফাক নিপুণ ও অভিনেত্রী নওশাবা আহমেদ।
প্রথম জন সরাসরি বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে সুবিধাবঞ্চিত হয়েছেন রাষ্ট্রীয় প্রচারযন্ত্র থেকে। গত ১৫ বছর তার কোনও গান প্রচার হয়নি বিটিভি ও বেতারে। এমনকি বিভিন্ন স্টেজ শো করতে গিয়েও পড়েছেন বাধার মুখে। ডাক পাননি সিনেমার জন্যও। অন্যদিকে আশফাক নিপুণ ও কাজী নওশাবা আহমেদ সরাসরি কোনও রাজনৈতিক ব্যানারে কাজ না করলেও তারা বরাবরই ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবাক। দুজনেই নিজের এই কণ্ঠস্বরের কারণে গত সরকারের আমলে নিগ্রহের শিকার হয়েছেন নানা মাত্রায়।
এমন আরও অনেক শিল্পীই রয়েছেন এই তালিকায়। তবে অন্যদের প্রতিনিধি হিসেবে এবার এই তিন জন শিল্পী কাজ করবেন রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয়ে। এই তিন শিল্পীকে যুক্ত করা হয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দফতর-সংস্থা ‘বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট’-এর সদস্য হিসেবে।
এই মর্মে ১৫ সেপ্টেম্বর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আয়েশা সিদ্দিকা জারি করেছেন প্রজ্ঞাপন।
এই তিন জনের বাইরে শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
১৫ সদস্যবিশিষ্ট পুনর্গঠিত এই ট্রাস্টি বোর্ডে আগামী ৩ বছরের জন্য সদস্য হিসেবে আরও দায়িত্ব পালন করবেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম, কবি-প্রাবন্ধিক নাহিদ হাসান নলেজ, লেখক-শিক্ষক তুহিন ওয়াদুদ, নাট্যব্যক্তিত্ব সামিনা লুৎফা, কবি ইমতিয়াজ মাহমুদ ও কথাসাহিত্যিক সাইয়েদ জামিল। আরও থাকছেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, তথ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের দুই যুগ্ম সচিব এবং শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
প্রসঙ্গত, অসচ্ছল ও অসুস্থ শিল্পীদের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি শিল্পকর্মে বিশেষ অবদানের জন্য বৃত্তি দেওয়ার মতো কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ২০২২ সালের ১১ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট। ২০০১ সালে শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট আইন হওয়ার দশ বছর পর ১৭ সদস্যের বোর্ড গঠন করা হয়। এরপর ২০২০ সালের ১৬ মার্চ বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়।
এদিকে শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট-এর নতুন সদস্য হওয়া প্রসঙ্গে কনকচাঁপা, আশফাক নিপুণ ও নওশাবা আহমেদের পক্ষ থেকে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে এই ট্রাস্টের অন্যতম সদস্য কবি ইমতিয়াজ মাহমুদ একটি প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ফেসবুকে। তিনি লিখেছেন, ‘আমি যতদূর জানি, শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টের কাজ বছরে কয়েকটা সভা করা। এটা কোনও চাকরি না। এই ট্রাস্টির আগের এমডি যখন আমাকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের রেফারেন্স দিয়ে এর সদস্য হওয়ার কথা বলেন, আমি তাকে সরাসরি না বলি। এটার সভা হওয়ার একটা নির্দিষ্ট সময়/মেয়াদ আছে। সেটা সম্ভবত অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছিল। ফলে চতুর্থ না যেন পঞ্চমবার যখন আমাকে তিনি এটা জানান যে, দুই-একদিনের মধ্যে কমিটি গঠন না হলে বিপদ হয় যাবে, আর এখন নতুন সদস্য খোঁজার মতো হাতে পর্যাপ্ত সময়ও নাই, তখন আমার আর জোরালোভাবে না বলার সুযোগ ছিল না। বিশেষ করে যখন জানানো হয়, এই সভার পরেই, মানে কমিটির সময়সীমার বিপদ পার হওয়ার পরেই এখান থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করার সুযোগ থাকবে। এবং সেই পদত্যাগের ড্রাফট দরকার হলে ম্যাডাম নিজে তৈরি করে দেবেন, তখন তাঁকে আমি আর অসম্মতি জানাই নাই। তো, যারা আমাকে আজ অভিনন্দন জানাচ্ছেন, তাদের সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি, শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টে আমার সদস্য হওয়াটা আমার তরফ থেকে মূলত আপৎকালীন/সাময়িক। প্রথম সভার পর মানে সময়সীমার বিপদ অতিবাহিত হওয়ার পরপরই এখান থেকে আমি আমার নাম প্রত্যাহার করবো। পরবর্তী এমডি কমিটির সদস্য হওয়ার উপযুক্ত লোক খুঁজে পাওয়ার জন্য তখন হাতে পর্যাপ্ত সময় পাবেন। ধন্যবাদ।’