X
রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
৭ বৈশাখ ১৪৩২

মামুনুর রশীদ: ১৯তম জন্মদিনে অভিনয়ের বাতিঘর!

বিনোদন রিপোর্ট
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০৭আপডেট : ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:৪৫

তার জন্ম হয়েছিল ১৯৪৮ সালে। সেই হিসাবে বয়স ৭৫ পূর্ণ হলো। অথচ আজ (২৯ ফেব্রুয়ারি) তার ১৯তম জন্মদিন! গভীর কোনও রহস্য না, আসলে অধিবর্ষের কারণেই এমন ব্যতিক্রম অবস্থার অবতারণা হয়েছে। চার বছরে একবার আসে তার জন্মদিন। ফলে ৭৫ বছর পেরিয়ে মোটে ১৯তম জন্মদিনে পা রাখলেন কিংবদন্তি।

তিনি মামুনুর রশীদ। দেশের নাট্যাঙ্গনের জীবন্ত কিংবদন্তি। অভিনয়ের বাতিঘর। অভিনয় ছাড়াও লেখা, নির্দেশনা, নেতৃত্ব সব শাখায় তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন। শুধু তাই নয়, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধেও সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন।

জন্মদিন নিয়ে খুব বেশি কিছু অবশ্য বললেন না এই নন্দিত শিল্পী। এটুকু বললেন, ‘বয়স বেড়ে যাওয়া একটা সমস্যা বটে। তরুণ বয়সে অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। কিন্তু বয়স বাড়লে হয়ত কখনও কখনও ক্লান্তি চলে আসে।’

মামুনুর রশীদ তবু শিল্প-সংস্কৃতির কাজে যে অবসর নেই, তা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন তিনি। তার ভাষ্য, ‘আমি এমন একটি ক্ষেত্রে কাজ করি, যেখানে কোনও অবসর নেই। এটা আমি মেনেই নিয়েছি যে, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করে যাবো। এর ফলে তারুণ্যের শক্তিটা এখনও অনুভব করি। মঞ্চ নাটক, টেলিভিশন বা সিনেমায় যখন কাজ করি, মনে হয় আমি তো তরুণই। বয়সের কথাটা ভুলে যাই। সে কারণেই হয়ত বয়স আমাকে পরাজিত করতে পারেনি।’

এদিকে মামুনুর রশীদের জন্মদিন উপলক্ষে বরাবরের মতো উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে তিন দিনব্যাপী। বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) শুরু হয়ে সেটা চলবে ২ মার্চ পর্যন্ত। ‘আলোর আলো নাট্যোৎসব’ শীর্ষক এই আয়োজনে মূলত মামুনুর রশীদ রচিত ও নির্দেশিত নাটকের মঞ্চায়ন হবে। সঙ্গে থাকছে সংগীত, নৃত্য, সেমিনার ও থিয়েটার আড্ডা। উৎসব চলবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে।

মঞ্চে যখন মামুনুর রশীদ বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৫টায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে এ উৎসবের উদ্বোধন করবেন বরেণ্য অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার। একই অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করবেন অনিমা মুক্তি গোমেজ, অনিমা রায়, চঞ্চল চৌধুরী, ফজলুর রহমান বাবু ও রাহুল আনন্দ। বাঁশি বাজাবেন উত্তম চক্রবর্তী। ওয়ার্দা রিহাবের পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করবে ধৃতি নর্তনালয়।

শুক্রবার (১ মার্চ) সকাল ১০টায় শিল্পকলা একাডেমির সেমিনারকক্ষে আয়োজিত হবে ‘একজন দায়বদ্ধ সৃজনকর্মীর নাট্যপরিভ্রমণ’ শীর্ষক আলোচনা। বিকাল সাড়ে ৪টা ও সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে প্রদর্শিত হবে মামুনুর রশীদ রচিত ও নির্দেশিত নাটক ‘রাঢ়াঙ’। ২ মার্চ বেলা সাড়ে ৩টায় একই মিলনায়তনে ‘নাট্যকর্মীদের মুখোমুখি মামুনুর রশীদ’ শীর্ষক থিয়েটার আড্ডা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর সন্ধ্যা ৭টায় প্রদর্শিত হবে নাটক ‘কহে ফেসবুক’।

নেতার ভূমিকায় মামুনুর রশীদ বলা দরকার, মামুনুর রশীদের জন্ম ১৯৪৮ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি, টাঙ্গাইলের কালিহাতির পাইকড়া গ্রামে। তবে বাবার চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জায়গায় থেকেছেন, পড়েছেন। সবশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়েছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি।

অভিনেতা হিসেবে অধিক সফল ও নন্দিত হলেও মামুনুর রশীদের পথচলার শুরুটা লেখালেখির মাধ্যমে। মাত্র ১৯ বছর বয়সেই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান টেলিভিশনের জন্য নাটক লেখা শুরু করেন তিনি। তার লেখায় উঠে আসে গ্রামীণ জীবনের পটভূমি, পরিবার, সামাজিক ইস্যু ও বঞ্চিতদের অধিকারের বিষয়বস্তু।

নাট্যাঙ্গনে যোগ দেওয়ার চার বছরের মাথায় শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। স্বাধীনচেতা, শিল্পমনা মানুষ হয়ে তিনি বসে থাকতে পারেননি। ছুটে গেছেন রণাঙ্গনে; কাজ করেছেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গেও। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে গড়ে তোলেন ‘আরণ্যক’ নাট্যদল। যা বাংলাদেশের নাট্যশিল্পীদের অন্যতম আঁতুড়ঘর হিসেবে খ্যাত। এখনও এই দল নিয়ে কাজ করে চলেছেন তিনি।

মামুনুর রশীদ মঞ্চে তার সৃষ্ট নাটকের মধ্যে রয়েছে গন্ধর্ব নগরী, ওরা কদম আলী, ইবলিশ, এখানে নোঙর, মানুষ, সংক্রান্তি, রাঢ়াং, কহে ফেসবুক ইত্যাদি। মঞ্চ নাটকের পাশাপাশি মামুনুর রশীদ টিভি নাটকেও ব্যস্ত হয়ে পড়েন। নাটক লেখা, নির্দেশনা দেওয়া এবং অভিনয় সবই সমান্তরালে চালিয়েছেন। তার সৃষ্ট টিভি ধারাবাহিকের মধ্যে ‘সুন্দরী’, ‘অলসপুর’ বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

বহু সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন এই কিংবদন্তি। এর মধ্যে ‘কিত্তনখোলা’, ‘রূপকথার গল্প’, ‘মনপুরা’, ‘মৃত্তিকা মায়া’, ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’, ‘নদীজন’, ‘শঙ্খচিল’, ‘খাঁচা’, ‘সুলতানা বিবিয়ানা’, ‘ভুবন মাঝি’, ‘দেশান্তর’, ‘১৯৭১ সেই সব দিন’ উল্লেখযোগ্য।

‘মনপুরা’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ খল চরিত্রের অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন মামুনুর রশীদ। এছাড়া নাট্যকলায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১২ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন এই কিংবদন্তি। ১৯৮২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেলেও স্বৈরশাসনের প্রতিবাদে সেটা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তিনি। নিমগ্ন পাঠক মামুনুর রশীদ

/কেআই/এমএম/
সম্পর্কিত
শিল্পীদের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি ১০ প্রস্তাবনা
শিল্পীদের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি ১০ প্রস্তাবনা
কেন মামুনুর রশীদকে নির্বাসনে পাঠাতে চান সৈয়দ জামিল
কেন মামুনুর রশীদকে নির্বাসনে পাঠাতে চান সৈয়দ জামিল
সংস্কারের বদলে সংঘাত, ইতিপত্র লিখলেন মামুনুর রশীদ
সংস্কারের বদলে সংঘাত, ইতিপত্র লিখলেন মামুনুর রশীদ
‘আমাদের প্রশাসন ও আমলাতন্ত্র উদাসীন’
‘আমাদের প্রশাসন ও আমলাতন্ত্র উদাসীন’
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
দশ অভিনয়-প্রতিভার খোঁজ!
দশ অভিনয়-প্রতিভার খোঁজ!
তবুও কানাডা সফরে সাবিনা...
তবুও কানাডা সফরে সাবিনা...
রাজের ‘ইনসাফ’, নায়িকা ফারিণ
রাজের ‘ইনসাফ’, নায়িকা ফারিণ
নতুন নেতৃত্বে অভিনয়শিল্পী সংঘ
নতুন নেতৃত্বে অভিনয়শিল্পী সংঘ
কয়েদির পোশাকে সিনেমা হলে শতাধিক ভক্ত!
কয়েদির পোশাকে সিনেমা হলে শতাধিক ভক্ত!