X
শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
৬ বৈশাখ ১৪৩২

‘ফিরতে হবে গাজী মাজহারুল আনোয়ারদের কাছেই’

বিনোদন রিপোর্ট
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:৫৩আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:৩৩

এক দিন পরই তার জন্মদিন। ১৯৪৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এসেছিলেন পৃথিবীতে। আর বিদায় নিয়েছেন ২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর। এর ফাঁকে জীবদ্দশায় এমন সব সৃষ্টি উপহার দিয়ে গেছেন, যা গোটা দেশের জন্যই বিস্ময়। দেশের ইতিহাসে সর্বাধিক গান রচনার অনন্য রেকর্ড তার দখলে। সর্বাধিক সফল গানও এসেছে তার কলম থেকেই। কিংবদন্তি সেই গীতিকবির নাম গাজী মাজহারুল আনোয়ার।

তিনি চলে গেলেও তার রেখে যাওয়া গান মিশে আছে মানুষের হৃদয়ে। আর সেসব গানের পেছনের গল্প তারই পরিবারের উদ্যোগে উঠে আসছে বইয়ের পাতায়। এবার ‘অল্প কথার গল্প গান’ (ভাষাচিত্র প্রকাশনী) শিরোনামের এই বইয়ের চতুর্থ খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে আনুষ্ঠানিকভাবে বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে।

সেই সঙ্গে তার সঙ্গে কাটানো দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে নিয়ে একটি বই লিখেছেন তারই স্ত্রী জোহরা গাজী। ‘আগুনের সাথে বসবাস’ (জার্নিম্যান বুকস) নামের বইটির মোড়কও একই আয়োজনে উন্মোচন করা হয়েছে।

সংগীতাঙ্গনের তারকায় ঘেরা এ অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন অনেক কিংবদন্তি। ছিলেন সৈয়দ আবদুল হাদী, মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, শেখ সাদী খান, খুরশিদ আলমের মতো কালজয়ী তারকা।

মোড়ক উন্মোচন পর্ব মোড়ক উন্মোচনের আগে নিজের বক্তব্যে নন্দিত গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান বলেছেন, ‘এত বিপুল সংখ্যক গানের কবিতা তিনি (গাজী মাজহারুল আনোয়ার) রচনা করে গেছেন, চিরদিন অমর থাকবেন। আমরা চলে যাবো, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম আসবে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে এটা চলতেই থাকবে। কামনা করি, যেভাবে আমরা অন্তরে অনুভব করি; যতই শিল্প-সংস্কৃতির অধঃপতন হোক, আবার জেগে উঠবে। খুঁজে নেবে এই শেকড়কে। ফিরতে হবে এই গাজী মাজহারুল আনোয়ারদের কাছেই। যে পথেই যাই না কেন, এই শেকড়ের কাছে ফিরতে হবে। তাকে ভুলে থাকা যাবে না।’

সংগীতশিল্পী খুরশিদ আলম বললেন, ‘এত সুন্দর একটা অনুষ্ঠানে আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। গাজী ভাইয়ের যে সৃষ্টি, তা বোম্বে বা কলকাতার চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। তবে আজ আমি নতুন প্রজন্মের কাছে একটা আর্জি রাখতে চাই, জ্যেষ্ঠ যাদের গান তোমরা গাও, প্রত্যেকটি গানের গীতিকার, সুরকার ও শিল্পীর নাম উল্লেখ করবে।’

অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছেন ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ফেরদৌস আহমেদও। যিনি মূলত সিনেমা অঙ্গনের মানুষ। তিনি বক্তব্যে বলেন, ‘দিঠি (গাজী মাজহারুল আনোয়ারের কন্যা) আমাকে বলেছিল যে, ছোট্ট একটা অনুষ্ঠান। বাবার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন। আমি ভাবলাম, নতুন এমপি, তাই হয়ত আমাকে ছোট ছোট অনুষ্ঠানেই ডাকে! এখানে এসে দেখি যে, এত বড় বড় মানুষ বসে আছেন, তাদের সামনে কথা বলার ধৃষ্টতা আমার নেই। বাংলাদেশে বড় বড় কিংবদন্তি আছেন, যারা নানাভাবে আমাদের শিল্প-সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। কিন্তু তাদের কারও সন্তানকে দেখিনি বাবা-মার কাজকে এভাবে সামনে আনতে। আমার মনে হয়, উপল-দিঠির (গাজীর পুত্র-কন্যা) কাছে আমাদের সবার শেখার আছে। কারণ সম্মান-ভালোবাসার সূচনা পরিবার থেকেই শুরু হয়।’ 

আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে সবার শেষে বক্তব্য রাখেন কিংবদন্তি গায়ক সৈয়দ আবদুল হাদী। তার ভাষ্য ছিল এরকম, ‘সবার শেষে কথা বলার সুবিধা-অসুবিধা দুটোই আছে। সুবিধা হলো, বিশেষ কিছু বলতে হয় না। কারণ সবাই সব কিছু বলে ফেলে। আর অসুবিধা হলো, শেষ সময়ে সবার মধ্যে একটা ধৈর্যচ্যুতি ঘটার সম্ভাবনা দেখা দেয়। কিন্তু আজ অদ্ভুত ব্যাপার, সবাই অত্যন্ত মনোযোগ আর আন্তরিকতার সঙ্গে কথা শুনছেন। এই অনুষ্ঠান আনন্দের বটে। তবে যুগপৎ কিছু বেদনারও বটে। আমার মনে পড়ছে, এই তো কয়েক বছর আগে গাজী এবং আমি এই মঞ্চে একটি অনুষ্ঠানে এসেছিলাম। তখন কি জানতাম, কিছু দিন পর আমাকে কথা বলতে হবে কিন্তু গাজী থাকবে না! গাজী যে আমার এত প্রিয় ও কাছের মানুষ ছিল, তার মৃত্যুর খবর শোনার পর যেন আরও প্রবলভাবে অনুভব করলাম। সেই ষাটের দশক থেকে আমাদের বন্ধুত্ব ছিল।’

দর্শক সারিতে অতিথি ও সাংবাদিক সবশেষে গীতিকবির সহধর্মিণী জোহরা গাজী বললেন, ‘মহান স্বাধীনতার কলমযোদ্ধা, দেশপ্রেমিক এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রে সফল একজন মানুষ গাজী মাজহারুল আনোয়ার। তিনি একটি প্রতিষ্ঠান। সুদীর্ঘ ষাট বছরের কর্মজীবন, ২০ হাজারের বেশি গান লিখেছেন। সংস্কৃতির প্রতিটি অঙ্গনে ছিল তার সফল বিচরণ। নিজের সৃষ্টি দিয়ে তিনি সংস্কৃতি অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। তিনি কর্ম জীবনে যেমন সফল ছিলেন, তেমনি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনেও সফল ছিলেন। সবার প্রতি তিনি যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছেন। তার চরিত্র, ব্যক্তিত্ব, পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধ সবই আমাকে মুগ্ধ করতো।’

মোড়ক উন্মোচনের এ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শুভ্র দেব, ফাহমিদা নবী, মনির খান, ইমন সাহা, শওকত আলী ইমন, পলাশ, আলম আরা মিনু, আঁখি আলমগীর, কৌশিক হোসেন তাপস, কবিসন্তান দিঠি-উপলসহ অনেকে। সবশেষে সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে। গাজী মাজহারুল আনোয়ার (২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩-৪ সেপ্টেম্বর ২০২২)

/কেআই/এমএম/
সম্পর্কিত
মেলায় গাজী মাজহারুল আনোয়ারের নতুন বই
মেলায় গাজী মাজহারুল আনোয়ারের নতুন বই
খুশি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান: ‘আবেদন না করেও পাওয়া যায়!’
স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৪খুশি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান: ‘আবেদন না করেও পাওয়া যায়!’
অনেক কিছুই ইচ্ছে করে, কিন্তু করা যায় না: মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান
গীতিকবির গল্পঅনেক কিছুই ইচ্ছে করে, কিন্তু করা যায় না: মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান
দুই সংগীত কিংবদন্তির আসা-যাওয়ার দিন
দুই সংগীত কিংবদন্তির আসা-যাওয়ার দিন
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
নতুন নেতৃত্বে অভিনয়শিল্পী সংঘ
নতুন নেতৃত্বে অভিনয়শিল্পী সংঘ
কয়েদির পোশাকে সিনেমা হলে শতাধিক ভক্ত!
কয়েদির পোশাকে সিনেমা হলে শতাধিক ভক্ত!
বিয়ে ‘বিতর্ক’ নিয়ে মুখ খুললেন শাবানা!
বিয়ে ‘বিতর্ক’ নিয়ে মুখ খুললেন শাবানা!
ছোটবেলা থেকেই আমি সিয়ামের ফ্যান: নৈঋতা
ছোটবেলা থেকেই আমি সিয়ামের ফ্যান: নৈঋতা
১৯ পদে লড়ছেন ৩৮ জন অভিনয়শিল্পী
১৯ পদে লড়ছেন ৩৮ জন অভিনয়শিল্পী