আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোট বাজেটের কমপক্ষে ১৫ শতাংশ ও জিডিপির কমপক্ষে ৩ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে গণসাক্ষরতা অভিযান। একইসঙ্গে ২০৩০ সালের মধ্যে মোট বাজেটের ২০ শতাংশ শিক্ষায় বরাদ্দ দেওয়ার পরিকল্পনা ও রোড ম্যাপ প্রণয়নের দাবিও করেছে বেসরকারি সংস্থাগুলোর মোর্চা গণসাক্ষরতা অভিযান।
সোমবার (২৪ মার্চ) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে প্রাক-বাজেট প্রেস কনফারেন্সে এসব প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
এছাড়া প্রেস কনফারেন্সে প্রাথমিক পর্যায়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মাসিক উপবৃত্তি ১৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি মাসে পাওয়া উপবৃত্তি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা এবং ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা করার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
সংবাদ সম্মেলনের সূচনা বক্তব্য রাখেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী। প্রেস কনফারেন্সে সুপারিশ উপস্থাপন করেন এডুকেশন ওয়াচের ফোকাল পয়েন্ট মোস্তাফিজুর রহমান। আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, শিক্ষা কী করে যেন সবার মাইন্ডসেট ও অগ্রাধিকারের জায়গা থেকে চলে গেছে। নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে এমনটি দেখা যাচ্ছে। মানবসম্পদ উন্নয়নের সবচেয়ে হাতিয়ার শিক্ষা। কিন্তু এটি কী করে যেন অগ্রাধিকারের তালিকা থেকে ছিটকে পড়েছে। একটি গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশে নবতর স্বপ্ন দেখা হচ্ছে। সেই জায়গায় প্রথম দাবি হবে শিক্ষাকে অগ্রাধিকারের জায়গা থেকে বিচ্যুত না করা।
রাশেদা কে চৌধুরী আরও বলেন, শিক্ষাকে সিংগেল সেক্টর হিসেবে মোট জিডিপির ৩ শতাংশ বরাদ্দ চাচ্ছি আমরা। রূপপূরের সঙ্গে বা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সঙ্গে নিয়ে না। শিক্ষা কিন্তু সামাজিক সেক্টরেরই একটা খাত।
সুপারিশগুলো উপস্থাপন করে এডুকেশন ওয়াচের ফোকাল পয়েন্ট মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ বা মোট জিডিপির এক দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ বা মোট জিডিপির এক দশমিক ৬৯ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মোট বাজেটের কমপক্ষে ১৫ শতাংশ ও জিডিপির কমপক্ষে ৩ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দের দাবি জানান তিনি।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ বলেন, দেশের শিক্ষার মূল যে চরিত্র বা বৈশিষ্ট্য, সেটা হলো— একটি চরম বৈষম্য বা অসাম্য নানা রকমভাবে। এর একটি হলো শিক্ষার তিন ধারায় একধরনের বৈষম্য আছে। আবার প্রতিটি ধারায় আছে আরেক বৈষম্য। যেমন- মূলধারা অর্থাৎ বাংলা মাধ্যমে কিছু বিদ্যালয় আছে অভিজাত বা এলিট, সেগুলো একটু ভালো। বিত্তশালী বা যাদের একটু সুযোগ আছে, তারা সেখানে যান। বাকি সাধারণ সরকারি স্কুল বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল, সেগুলোর মান ততটা নেই। আবার নানা রকমের ইংরেজি মাধ্যম স্কুল আছে। মাদ্রাসায়ও নানা ধারা ও ভালো-মন্দ আছে। অর্থাৎ শিক্ষায় যেগুলোতে গুণমান আছে, সেগুলোর সুবিধা নেন কেবল সুবিধাপ্রাপ্তরা। বাকি বেশিরভাগ সেই গুণমানের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে নানা সংস্কারের কথা হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষা সংস্কারের জন্য কোনও কমিশনও হলো না। আগে যেমন খণ্ডিতভাবে, আংশিকভাবে ও বিচ্ছিন্নভাবে নানা রকম কাজ হতো, এখনও সেই ধারাই চলছে।
সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, শিক্ষার বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বলা হয়। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাদ্দ দেওয়া টাকাই ব্যয় করতে পারে না। এটি আরেক সমস্যা। একদিকে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার, অপরদিকে আবার মন্ত্রণালয় খরচ করতে পারে না। আবার খরচও যা করে, সেগুলোও গুণগত মানসম্মতভাবে খরচ হয় না। সিপিডির গবেষণায় দেখা যায়, ২০২২ সালে বাজেটে যা ঘোষণা হয়েছিল, তার মধ্যে ৭৮ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে। অর্থাৎ ২২ শতাংশ বাস্তবায়নই করতে পারেনি। এই যে নিম্ন বাস্তবায়নমুখী একটি মন্ত্রণালয়, এই গ্যাঁড়াকল থেকে বের হতে হবে।