X
সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
১৫ বৈশাখ ১৪৩২

সাত মাস দেড় শতাধিক শিক্ষকের বেতন বন্ধ

এস এম আববাস
০৯ মার্চ ২০২৫, ১০:০০আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৫, ১০:০০

সারা দেশের ডাবল শিফটের স্কুলের নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের সাত থেকে আট মাস ধরে বেতন বন্ধ রয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের সাম্প্রতিক এক সিদ্ধান্তের জেরে এ অবস্থায় পড়েছেন দেড় শতাধিক শিক্ষক।

২০২১ সালের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী ডাবল শিফট এমপিও স্কুলে দ্বিতীয় শিফটের জন্য আলাদা এমপিও কোড চালুর বিধান রয়েছে। বিদ্যমান এমপিও নীতিমালা বাস্তবায়নে ডাবল শিফটের বিদ্যালয়গুলো আলাদা এমপিও কোড নিতে শুরু করেছে। তবে রাজধানীর নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনও আলাদা এমপিও কোড নেয়নি।

অন্যদিকে, আলাদা এমপিও কোড ছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের আঞ্চলিক অফিসগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের এমপিও বন্ধ করে দিয়েছে।  

জানা গেছে, ডাবল শিফট বিদ্যালয়ে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সুপারিশে নিয়োগ পাওয়া প্রায় দেড়শত শিক্ষক বেতন পাচ্ছেন না। ডাবল শিফট প্রতিষ্ঠানে আলাদা এমপিও কোড না হওয়ায় তাদের বেতন ছাড়েনি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের ঢাকার উপপরিচালক কার্যালয়। আট মাস তাদের বেতন বন্ধ রাখা হয়েছে আলাদা কোড না থাকায়।

অন্যদিকে, ডাবল শিফট বিদ্যালয়ে নতুন করে নিয়োগ পাওয়া প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী প্রধান শিক্ষকদের বেতনও আটকে দিয়েছে ঢাকার আঞ্চলিক অফিস।

হাজারীবাগ সালেহা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. মনিরুল ইসলামের এমপিওভুক্তির আবেদন গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে উচ্চ ও মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের ঢাকা আঞ্চলিক উপ-পরিচালক (ডিডি) অফিসে ঝুলে আছে।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড উচ্চ বিদ্যালয়ের পূর্ববর্তী চাকরি থেকে পদত্যাগ করে সালেহা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন। কিন্তু পদত্যাগের কারণে তার পূর্ববর্তী এমপিও আদেশ বাতিল হওয়ায় জুলাই মাসের বেতন পাননি।

ফলে আট মাস বেতন না পেয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলাম পাঁচ সদস্যের পরিবারের খরচ সমালাতে পারছেন না। স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে পারিবারিক খরচ বহনের জন্য স্কুল তহবিল থেকে মাত্র ১০ হাজার টাকা দিয়েছে।

শেওড়াপাড়া আলিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক কিরণময় দত্ত এবং টঙ্গীর সফিউদ্দিন সরকার অ্যাকাডেমি অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষিকা মাসুদা খাতুনও এমপিও না পাওয়ার কারণে একই রকম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

শুধু মনিরুল, কিরণময় এবং মাসুদাই নন, ঢাকা অঞ্চলের প্রায় ৬৬টি উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েক শত শিক্ষক একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। কারণ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের ঢাকা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (ডিডি) তাদের নতুন এমপিও আদেশের আবেদন অনুমোদন করছেন না।

ভুক্তভোগী শিক্ষকরা জানান, ডাবল শিফট এমপিও স্কুলের জন্য সরকারের এমপিও নীতি, ২০২১-এর বিধান দেখিয়ে তিনি তাদের এমপিও আদেশ ঝুলিয়ে  রেখেছিলেন। গত ফেব্রুয়ারিতে তাদের আবেদনপত্র অনুমোদন করা হলেও কোনও কারণ না দেখিয়ে পরে অনুমোদন বাতিল করা হয়।

এই পরিস্থিতিতে ডাবল শিফট স্কুলের এমপিও-প্রত্যাশী শিক্ষকরা ঢাকা শহরে পরিবার নিয়ে দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছেন।

সহকারী প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি ডিডিকে তার অফিসে দেখা করার সময় আমাদের আর্থিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু, তিনি আমার কথা শোনেননি। আমি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লে তিনি আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং সব শিক্ষককে তার অফিস কক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করেন। একপর্যায়ে তিনি অফিসের কলাপসিবল গেটটি তালাবদ্ধ করে দেন।’

কিরণময় দত্ত ও মাসুদা খাতুন জানান, একাধিকবার চেষ্টা করেও সব নথিপত্র সরবরাহ করে এমপিও অর্ডার না পাওয়ায় তারাও কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।

ঢাকা আঞ্চলিক উপ-পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ডাবল শিফট স্কুলের এমপিও অর্ডার অনুমোদনের কোনও এখতিয়ার তার নেই, কারণ তাদের আলাদা শিফটের জন্য আলাদা এমপিও কোড নেই। সরকারের এমপিও নীতিমালা, ২০২১-এর বিধান অনুসারে, ডাবল শিফট এমপিও স্কুলগুলোতে প্রতিটি শিফটের জন্য শিক্ষকদের নাম উল্লেখ করে পৃথক এমপিও কোড থাকতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে স্কুল কর্তৃপক্ষ আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে এমপিও কোড নিশ্চিত করবে। কিন্তু, এই স্কুল কর্তৃপক্ষ এমপিও আবেদনের সময় পদ্ধতি অনুসরণ করেনি। ফলস্বরূপ, সেই আবেদনগুলো মঞ্জুর করা হয়নি।

গত সাত থেকে আট মাস ধরে ডাবল শিফটের নতুন নিয়োগ পাওয়া সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং এনটিআরসিএ-এর মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা বেতন পাচ্ছেন না, সে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি আঞ্চলিক উপ-পরিচালকরা। তবে শিগগিরই ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে বৈঠক করে সমাধান করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে ঢাকার আঞ্চলিক উপ-পরিচালক অফিস।

এসব বিষয়ের সমাধান কী জানতে চাইলে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আজাদ খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলেই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ কোনও তথ্য থাকলে ভুক্তভোগীরা যেন দ্রুত অধিদফতরে যোগাযোগ করেন। তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা নেবো।’

বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন আটকে থাকার বিষয়ে জেনে ব্যবস্থা নেবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

/এমএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
এমপিওভুক্তির আশ্বাসে নন-এমপিও শিক্ষকদের আন্দোলন স্থগিত
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা
অবশেষে জানুয়ারির বেতন পাচ্ছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগ নেতাদের পুনর্বাসনের অভিযোগ ছাত্রদল নেতা সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে
ছাত্রলীগ নেতাদের পুনর্বাসনের অভিযোগ ছাত্রদল নেতা সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে
পর্যটককে মারধর করে ২৪ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন বিএনপি নেতারা
পর্যটককে মারধর করে ২৪ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন বিএনপি নেতারা
মোহামেডানের প্রথম নাকি আবাহনীর হ্যাটট্রিক শিরোপা?
মোহামেডানের প্রথম নাকি আবাহনীর হ্যাটট্রিক শিরোপা?
জেলের জালে ধরা পড়লো ২৫ কেজি ওজনের বোয়াল
জেলের জালে ধরা পড়লো ২৫ কেজি ওজনের বোয়াল
সর্বাধিক পঠিত
শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন মোদি: আল জাজিরাকে ড. ইউনূস
শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন মোদি: আল জাজিরাকে ড. ইউনূস
‘আমার স্বামীর কোনও দোষ নাই, শুধু আ.লীগ করে বলে মাইরা ফেলাইছে’
‘আমার স্বামীর কোনও দোষ নাই, শুধু আ.লীগ করে বলে মাইরা ফেলাইছে’
ইউআইইউ বন্ধ ঘোষণা
ইউআইইউ বন্ধ ঘোষণা
প্রশাসনে অস্থিরতা কাটছেই না, বাড়ছে ক্ষোভ-অসন্তোষ
প্রশাসনে অস্থিরতা কাটছেই না, বাড়ছে ক্ষোভ-অসন্তোষ
ধর্ষণের অভিযোগে ইমামকে গণপিটুনি, কারাগারে মৃত্যু
ধর্ষণের অভিযোগে ইমামকে গণপিটুনি, কারাগারে মৃত্যু