দেশে গণতন্ত্রের সহনশীলতা এবং স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার প্রতিরোধ নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ)।
জুলাই বিপ্লবের প্রেক্ষিতে বুধবার (১৩ নভেম্বর) এনএসইউ’র সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি), সেন্টার ফর পিস স্টাডিজ (সিপিএস) এবং পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড সোসিওলজি বিভাগের (পিএসএস) যৌথ উদ্যোগে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বর্তমান বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষায় বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ ও উন্নয়নের সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন এনএসইউ উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল হান্নান চৌধুরী। এতে উপস্থিত ছিলেন— অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্টডক্টরাল গবেষক এবং ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের (এইচএআরডিআই) সহযোগী ফেলো ড. মুবাশার হাসান, অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আরিল্ড এঙ্গেলসেন রুড, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিটির সদস্য মুনিম মুবাশ্বির এবং এনএসইউ’র ইংলিশ অ্যান্ড মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজ বিভাগের সিনিয়র লেকচারার মুশাররত শর্মি হোসেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই সঞ্চালক এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও সহযোগী অধ্যাপক ড. বুলবুল সিদ্দিকী বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের পরপরই আমরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এমন অনুষ্ঠানের আয়োজনের চেষ্টা করেছিলাম। এই আয়োজন সেই প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতা।’
ড. মোবাশ্বার হাসান বলেন, ‘সেই সময়ের সরকার আমাদের ওপর ক্রমাগত নিপীড়ন চালিয়েছিল এবং আমি সরাসরি সেই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলাম। হ্যাঁ, সরকার আমাদের দমন করেছিল, কিন্তু মানুষ তবুও সোচ্চার ছিল এবং তারা তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখছিল। গণতান্ত্রিক চেতনা সর্বদা আমাদের সঙ্গে ছিল, যতই কঠোর দমন-পীড়ন হোক না কেন।’
অধ্যাপক আরিল্ড এঙ্গেলসেন রুড বলেন, ‘‘স্বৈরাচার হলো আপনার কণ্ঠস্বর এবং তথ্যপ্রাপ্তির অধিকারকে সীমিত করা। এটি মানুষকে নীরব করার জন্য ব্যবহৃত হয়। মানুষকে নীরব করার যেকোনও প্রচেষ্টা স্বৈরাচারী মনোভাবের প্রতিফলন। অপরদিকে, সেই প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করাই গণতান্ত্রিক মনোভাবের প্রকাশ। বাংলাদেশে স্বৈরাচারকরণের প্রবণতা ছিল, তবে কিছু মাত্রায় প্রতিরোধও দেখা গিয়েছিল। আমরা এই ক্ষুদ্র প্রতিরোধকে ‘দুর্বলদের অস্ত্র’ এর সঙ্গে তুলনা করতে পারি।’’
মুনিম মুবাশ্বির বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। ১৭ ও ১৮ জুলাইয়ের পর বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হয়ে জাতির ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আন্দোলনের সব স্লোগানের মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় ছিল ‘ছাত্র-শিক্ষক-জনতা, গড়ে তুলো একতা।’
এনএসইউ উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল হান্নান চৌধুরী বলেন, ‘একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আমি দেখেছি যে, দেশ ধ্বংসের দিকে এগোচ্ছিল। আমাদের আঞ্চলিক অখণ্ডতা হুমকির মুখে ছিল। জেন-জি এবং তরুণরা শুধু ২০২৪ সালেই নয়, দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছিল। তাদের সঙ্গে ছিল গোটা দেশ—তাদের বাবা-মা, শিক্ষক, ধনী-গরিব, সবাই।’