শিক্ষা জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষার্থীরা স্কুল জীবন শেষ করে শিক্ষার বড় পরিসর কলেজ জীবনে পা রাখে। তাই এই এসএসসি পরীক্ষার ফল নিয়ে দারুণ উদ্দীপনা কাজ করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে। ভালো কলেজ ও পরবর্তীকালে কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়েও এসএসসির ফল বড় ভূমিকা রাখে। এছাড়া এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াটাও শিক্ষা জীবনের প্রথম ধাপের বড় সফলতা। তাই ফল প্রকাশের দিন স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের পদচারণা, ফল নিয়ে অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের উৎকণ্ঠা, ভালো ফল পাওয়ার পর উচ্ছ্বাসের দৃশ্য দেখাটাই স্বাভাবিক।
তবে বর্তমান অনলাইনের যুগে পাল্টে গেছে চিরাচরিত সেই চিত্র। এখন বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই ফল দেখতে আর স্কুলে আসে না। নেই বোর্ডে টানানো রেজাল্টের সামনে কোনও ভিড়। শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে অনলাইনে নিজেই দেখে ফেলে রেজাল্ট।
রবিবার (১২ মে) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে সকাল ১০টায় বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড প্রধানদের সঙ্গে নিয়ে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফল হস্তান্তর করেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
পরে সকাল ১১টায় বিভিন্ন স্কুলের বোর্ডে তা টানানোর জন্য পাঠানো হয় এবং অনলাইনেও প্রকাশ করা হয়। তবে এদিন বিভিন্ন স্কুল ঘুরে দেখা যায়, সাড়ে ১১টা পর্যন্তও বোর্ডে ফল টানানো হয়নি। বোর্ডের ফল টানানো নিয়ে তেমন তাড়াহুড়োও ছিল না স্কুলগুলোতে। এছাড়া ফলাফল দেখতে স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও তেমন ছিল না বললেই চলে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অল্প কিছু শিক্ষার্থী স্কুলে আসলেও তারা বাসা থেকেই রেজাল্ট দেখে এসেছেন। স্কুলে আসার উদ্দেশ্য ঘনিষ্ঠ সহপাঠীদের নিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করা।
বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে মিরপুর বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান ফটকের পাশের দেয়ালে ফলাফল লাগাতে আসেন বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী হানিফ। তিনি ২০১০ সাল থেকে এই স্কুলে চাকরিরত আছেন। হানিফ বলেন, ২০১৭ সালের পর থেকে ফলাফল দেখতে আসা শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমতে থাকে। গত বছর দুয়েক ধরে তো শিক্ষার্থীরা আসছেনই না।
সেনপাড়ায় অবস্থিত ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের দারোয়ান নাইম বলেন, সকাল থেকে একজন ছাত্রও আসে নাই। অনলাইনে সবাই ফল দেখে নেয়।
স্কুলের বোর্ডে ফলাফল দেখতে আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে জানিয়ে মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটের প্রধান শিক্ষক জিনাত ফারহানা বলেন, একটা সময় ছিল স্কুলের বোর্ড ছাড়া রেজাল্ট দেখার কোনও উপায় ছিল না। তখন ফল প্রকাশের আগেই স্কুল প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উপস্থিত থাকতেন। সবার মাঝেই একটা টেনশন ছিল কী রেজাল্ট হয়। ভালো ফলাফল হলে একদিকে যেমন আনন্দ দেখা যেতো, অপরদিকে ফলাফল আশাতীত না হলে মন খারাপ করতেও দেখা যেতো। এখন সেই পরিবেশ নাই। সবাই অনলাইনে রেজাল্ট দেখে ফেলেন। এর মাঝে কিছু কিছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবক আসেন দেখা করতে। তবে স্কুলে আমাদের জুনিয়র শিক্ষার্থীরা ব্যান্ড বাজিয়ে এদিন ফল প্রকাশের একটা আমেজ তৈরি করে রাখে।
অভিভাবকদের অনুমতি নিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হয়। বোর্ডে টানানো রেজাল্ট নিয়ে তেমন আগ্রহী ছিল না তারা। এর অতীত পরিবেশ নিয়েও নেই তেমন ধারণা। শিক্ষার্থীরা জানায়, আমাদের সিনিয়রদেরও রেজাল্টের জন্য আসতে দেখি নাই। স্বাভাবিক দিনের মতোই ক্লাস চলতো। অনলাইনে রেজাল্ট দেখা যায়, তাই আমাদেরও অনেকে স্কুলে আসে না।
মনিরপুর স্কুলের বালক শাখায় আসা আরমান, প্রত্যয় ও রাশীদ জানায়, ফল প্রকাশের দুই মিনিট পরই অ্যাপের মাধ্যমে রেজাল্ট দেখে ফেলেছি। পরে আমরা যারা ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিলাম তারা ফোনে যোগাযোগ করে স্কুলে আসি। স্যার-ম্যামদের সঙ্গে দেখা করলাম। যাদের রেজাল্ট মনমতো হয়নি, তারা হয়তো আজ বের হবে না।
এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২০ লাখ ১৩ হাজার ৫৯৭ জন। পাস করেছে ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ জন। তাদের মধ্যে ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
গত বছরের তুলনায় এবছর পাসের হার ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেড়েছে। এবার পাসের হার ৮৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। এবারও ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের পাসের হার বেশি।