এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে আজ রবিবার (১২ মে)। ভালো ফল পেয়ে উল্লাসে মেতে উঠেছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনে মোট ৬৮১ শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৬৫৫ জন। পাশের হার ৯৬ দশমিক ১৮ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২১৪ শিক্ষার্থী।
জিপিএ-৫ পাওয়া এ স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান তিশা বাংলা ট্রিবিউনকে বলে, ভালো রেজাল্ট করে খুবই আনন্দিত। আমি বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। বিদেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করে দেশের জন্য অবদান রাখতে চাই।’
এক প্রশ্নে জবাবে সে জানায়, বর্তমানে প্রযুক্তি ছাড়া এগিয়ে যাওয়া সম্ভব না। তবে অনেকে প্রযুক্তির অপব্যবহার করছে। এ কারণে কেউ কেউ পিছিয়ে যাচ্ছে।
জিপিএ-৫ পাওয়া আরেক শিক্ষার্থী মোস্তাকিম ইসলাম বলে, আমি ভিডিও গেম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত ছিলাম। টেস্ট পরীক্ষায় ২০তম হয়েছিলাম। পরে মোবাইল ফোন বাদ দিয়ে পড়াশোনায় মগ্ন হয়ে আজ ভালো রেজাল্ট করতে পেরেছি। আগামীতে আমি কৃষি উদ্যোক্তা হয়ে দেশের জন্য কাজ করতে চাই।’
আরেক শিক্ষার্থী ইরফান আহসানের অনুভূতি, আমি জিপিএ-৫ পেয়েছি। এটা আমার বাবা-মা ও শিক্ষকদের উৎসর্গ করতে চাই। তারা আমাদের জন্য অনেক পরিশ্রম করেছেন।’
বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো. মসিউর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এক সময় আমাদের প্রতিষ্ঠানের শতভাগ পাসের হার ছিল। বোর্ডের প্রথম ১০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছিল আমাদের প্রতিষ্ঠান। আগামীতে আরও ভালো ফল অর্জনে আমাদের দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অভিভাবকদের আহ্বান জানিয়ে এই শিক্ষক বলেন, ‘বর্তমানে শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তির অতিরিক্ত অপব্যবহার করছে। যে কারণে তারা পিছিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে আমাদের অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে।’
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বেইলি রোডের ক্যাম্পাসে সকাল থেকেই ভিড় করতে থাকে শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি অভিভাবকরাও আসেন ফলাফল জানতে। পরীক্ষায় প্রত্যাশিত ফল পেয়ে আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে অনেকে। ভালো ফল পেয়ে আনন্দে কাঁদতেও দেখা যায় কাউকে কাউকে। তাদের সঙ্গে আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা।
এসএসসির ফলে উচ্ছ্বসিত রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল কলেজের পরীক্ষার্থীরাও। ভালো ফল পেয়ে সহপাঠিদের সঙ্গে একে অপরকে আনন্দে মেতে উঠতে দেখা যায়।
রবিবার (১২ মে) সকাল ১০টায় বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড প্রধানদের সঙ্গে নিয়ে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফল হস্তান্তর করেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। দুপুর সাড়ে ১২টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ফলাফলের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরবেন শিক্ষামন্ত্রী।
এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসের গড় হার ৮৩ দশমিক শূন্য ৪। ৯টি সাধারণ বোর্ডে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৭৭, মাদ্রাসা বোর্ডে ৭৯ দশমিক ৬৬, কারিগরি বোর্ডে ৮১ দশমিক ৩৮।
মোট ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে সব পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২০ লাখ ১৩ হাজার ৫৯৭ জন। তাদের মধ্যে ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। মোট পাস করেছে ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ জন।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করার নিয়ম রয়েছে।
এবারের এসএসসি, দাখিল, এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র ৯ লাখ ৯২ হাজার ৮৭৮ জন এবং ছাত্রী ১০ লাখ ৩১ হাজার ৩১৪ জন।
৯টি সাধারণ বোর্ডের এসএসসিতে ১৬ লাখ ৬ হাজার ৮৭৯ জন, মাদ্রাসা বোর্ডের দাখিলে ২ লাখ ৯০ হাজার ৯৪০ জন, কারিগরি বোর্ডের এসএসসিতে (ভোকেশনাল) ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৭৩ জন পরীক্ষার্থী ছিল।