শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের (ইইডি) প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই ঠিকাদারদের বিল পরিশোধের অভিযোগ বাড়ছে। প্রধান কার্যালয় থেকে বারবার সতর্ক করার পরও অগ্রিম বিল পরিশোধের ঘটনা থামছে না।
অভিযোগ উঠেছে, যতটা কাজ হয়েছে, তার চেয়ে বেশি এস্টিমেট দেখিয়ে কাজের বিল ছাড় করা হয়েছে। এভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে অগ্রিম টাকা দেওয়া হয়েছে। তারপরও ঠিকমতো কাজের অগ্রগতি হয়নি। অনেক জায়গায় কাজ বন্ধ হয়ে আছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জামালপুর ও কুড়িগ্রামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাভবন নির্মাণ ও পুরোনো ভবন সংস্কারের নামে অগ্রিম বিল পরিশোধ বা অর্থ নয়-ছয়ের অভিযোগ উঠেছে।চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহারাজপুর ডোলপাড়া গার্লস স্কুল এবং গোবরাতলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নির্মাণকাজের নামে অগ্রিম বিল হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহারাজপুরের গোবলাতলা বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ২০১৮ সাল থেকে নির্মাণকাজ চলছে। চার তলা ভবনের ছাদ ঢালাই হয়েছে। আর কোনও কিছুই হয়নি। এখন মাথার ওপর ছাদ হওয়ায় বৃষ্টির মধ্যে কোনও রকমে ভবনে শিক্ষার্থীদের অন্তত দাঁড়ানোর জায়গা হয়েছে। কতদিনে কাজ শেষ হবে জানি না। প্রধান প্রকৌশলীকে বলেছি। কিন্তু ধীরে ধীরে এ পর্যন্ত হয়েছে। জন্ম থেকেই জ্বলছি অবস্থা। কাজ শেষ না হলেও বিল দেওয়া হয়েছে কিনা জানি না। তবে টাকা এসে বসে থাকলেও কাজ করতে পারছে না। ঠিকাদারের নাকি টাকা নেই।
অভিযোগ উঠেছে, জামালপুরের বছিরউদ্দিন ও করিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঁচ বছরেও নির্মাণকাজ শেষ হচ্ছে না। অথচ এই প্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজের বেশিরভাগ বিল ইতোমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে বলে ইইডির প্রধান কার্যালয় থেকে জানা গেছে। নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আবার কেউ কেউ পুরোনো কাজ সম্পন্ন না করলেও তাদের আবার কাজ দিয়ে অগ্রিম বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের জামালপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বছিরুদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের কাজ চলছে। যে পরিমাণ কাজ হয়েছে, সেই পরিমাণ বিল দেওয়া হয়েছে। অগ্রিম বিল পরিশোধ করা হয়নি।
এছাড়া কুড়িগ্রামে ধামশ্রেণি বিদ্যালয়, দলদলিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, জাউনিয়ারচর উচ্চ বিদ্যালয়, বকবান্দা উচ্চ বিদ্যালয় ও নাগেশ্বরী ডিএম বিদ্যালয়ে অবকাঠামো নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। অথচ ওইসব কাজের সিংহভাগ বিল ইতোমধ্যে ঠিকাদারদের পরিশোধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
কাজের অগ্রগতি ও অগ্রিম বিল পরিশোদের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা প্রকৌশল রংপুর সার্কেলের কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. সুলতান মাহমুদ বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কয়েকটির কাজ শেষ হয়েছে। আর কয়েটির কাজ চলমান রয়েছে। অগ্রিম বিল দেওয়া হয়নি। যা কাজ হয়েছে তাই বিল দেওয়া হয়েছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে বেশি কাজ হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিলেট, ফরিদপুর, পটুয়াখালী, কুষ্টিয়া, ঝালকাঠি ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অগ্রিম বিল পরিশোধের নামে বরাদ্দ নয়-ছয়ের ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওইসব জেলার দেড় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাভবন নির্মাণ ও পুরোনো ভবন সংস্কারের নামে অগ্রিম বিল পরিশোধের ঘটনায় জড়িত প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ইইডির সিলেট জোন অফিস থেকে জানা গেছে, সিলেট সদরেরর শাহজালাল বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি অবকাঠামো নির্মাণ কাজের জন্য বিদায়ী অর্থবছরে প্রায় ৬০ লাখ টাকা অগ্রিম পরিশোধ করা হয়েছে।
একই জেলায় ইয়াহিয়া চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি কাজের জন্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা অগ্রিম পরিশোধ করা হয়েছে। দক্ষিণ সুরমার আব্দুল আহাদ উচ্চ বিদ্যালয় ও রেঙ্গা হাজীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে কাজের জন্য প্রায় ৮০ লাখ টাকা এবং জমিরন নেছা একাডেমিতে প্রায় ২০ লাখ টাকা অগ্রিম দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সিলেটের গোয়াইনঘাটের বীর মংগল উচ্চ বিদ্যালয় ও কানাইঘাটের সুরইঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ে কাজের জন্যও অগ্রিম বিল পরিশোধ করার অভিযোগ উঠেছে।
সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার নাজমুল ইসলাম বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। দুই মাস হচ্ছে। কাজের অগ্রগতি ও অগ্রিম দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, অনেকগুলো কাজের বিষয়ে আপনি বলেছেন। পুরো না দেখে তাৎক্ষণিক বলা সম্ভব হবে না।
অভিযোগ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে প্রধান প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন মজুমদারের সঙ্গে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। মোবাইল ফোনে ম্যাসেজ দিলেও তিনি কোনও জবাব দেননি।