বৈশাখ মাস শুরু হতে আরও চার দিন বাকি। দেশজুড়ে বইছে চৈত্রের তাপপ্রবাহ। প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। মানুষের পাশাপাশি হাঁপিয়ে উঠেছে প্রাণীরা। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে থাকা প্রাণীরা পানি ও ছায়ায় বসে একটু স্বস্তি পাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কোনও কোনও খাঁচায় পানি আছে, আবার কোনোটিতে নেই। পানির খোঁজে এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি করছে অনেক প্রাণী। কিছু আবার দলবেঁধে ছায়ায় বসে স্বস্তি পাওয়ার চেষ্টা করছে। সবমিলিয়ে গরমে কাহিল এসব প্রাণী।
বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে শতাধিক পশুপাখি ও প্রাণী রয়েছে। তাপপ্রবাহে অস্বস্তিতে কাটছে এসব প্রাণীর দিন-রাত।
বুধবার (০৯ এপ্রিল) দুপুরে বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে গিয়ে দেখা গেছে, বানর, উল্লুক, চশমাপরা হনুমানের চিৎকার-চেঁচামেচি নেই। গরমে খাঁচার ভেতরে ছোটাছুটি করছে চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, ইমু পাখি, উটপাখি, ভোঁদড়। পানির পাত্রে শরীর ডুবিয়ে বসে আছে অজগর সাপসহ কিছু প্রাণী।
সেবা ফাউন্ডেশনের দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন, গরম থেকে বাঁচতে দিনের বেশিরভাগ সময় পানিতে থাকছে এসব প্রাণী। চিতা বিড়াল, ভালুকসহ মাংসাশী প্রাণী শরীর ভিজিয়ে রাখছে পানিতে। এ ছাড়া গরমে অস্বস্তিতে আছে চিতা বিড়াল, মেছো বিড়াল, ময়ূর, বানর, ভালুক, উল্লুক, চশমাপরা হনুমান, শকুন, মথুরা পাখিসহ অন্যান্য প্রাণী। খাঁচার ভেতরে পাত্রে দেওয়া হয়েছে পানি। সুযোগ পেলেই শরীর ভিজিয়ে নিচ্ছে। এজন্য দ্রুত পাত্র খালি হয়ে যাচ্ছে। গরমে খাদ্য গ্রহণে অনীহা আছে। সদ্য জন্ম নেওয়া চিতা বিড়াল ও চিত্রা হরিণের শাবকরা গরমে খাঁচার এক কোণে বসে থাকছে। গত কয়েকদিন ধরে অনেকটা নিষ্প্রভ এসব প্রাণী।
গত কয়েকদিন ধরে জেলায় তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্র। জেলায় বৃষ্টির দেখা নেই বললেই চলে। বৃষ্টির জন্য চারদিকে হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে মানুষের পাশাপাশি প্রাণীদের মাঝেও অস্বস্তি বিরাজমান।
বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক স্বপন দেব সজল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বর্তমানে এখানে শতাধিক প্রাণী আছে। জেলার বিভিন্ন লোকালয় থেকে উদ্ধার করে সেবা ও সুস্থতার জন্য এদের এখানে রাখা হয়। এর মধ্যে কিছু প্রাণী আছে যারা অধিক তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে না। তীব্র গরমে যাতে প্রাণীদের মধ্যে রোগবালাই ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য প্রতিনিয়ত চৌবাচ্চার পানি পরিবর্তন করা হয়। এগুলো দেখভালের জন্য সেবা ফাউন্ডেশনের লোকজন প্রতিনিয়ত কাজ করছেন।’
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের সহকারী মো. মুজিবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন এলাকায় মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। মৌলভীবাজার জেলায় তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রি পর্যন্ত ওঠানামা করেছে। আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় গরমের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা ফখরুল ইসলাম বলেন, গরমে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। খাঁচায় বন্দি পশুপাখিদের কষ্ট আরও বেশি। যদি বৃষ্টিপাত না হয় তাহলে কারও কষ্টের সীমা থাকবে না।