বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘পৃথিবীর কোনও দেশে যুদ্ধ না হলে শিশুহত্যা হয় না। কিন্তু জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে আমরা দেখেছি সেই পলাতক স্বৈরাচারের নির্বিচার অত্যাচারের কারণে এ দেশে একশর মতো শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এই শিশুগুলোর কোনও অপরাধ ছিল না। এই শিশুগুলোকে হত্যা করা হয়েছে। এই শিশুগুলোর বলিদান কেন? শুধু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। কাজেই আসুন আজকে আমরা যেমন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, কীভাবে আমরা ৩১ দফাকে বাস্তবায়ন করবো। একইভাবে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এবং তার প্রতিটি নেতাকর্মী আজ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে বাংলাদেশে যেকোনও মূল্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। বাংলাদেশে যেকোনও মূল্যে মানুষের ভোটের অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। বাংলাদেশে যেকোনও মূল্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বিকালে দিনাজপুরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখার ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপর্যুক্ত কথাগুলো বলেন তিনি। এর আগে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক মোরশেদ হাসান, প্রশিক্ষক অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন পাভেল, সাত্তার পাটোয়ারী, অ্যাড. শারমিন ফারহানা পুতুল প্রমুখ।
তারেক রহমান বলেন, ‘গতকাল যখন দেখলাম কর্মশালা ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও দিনাজপুরের নাম তখন আমার চোখে কতগুলো দৃশ্যপট ভেসে উঠলো। প্রতিবছর শীতের সময় এই ৩টি জেলাতে আমি যেতাম। অনেকের সঙ্গেই দেখা হতো। আমি দুস্থ, অসহায় মানুষের জন্য গরম কাপড়ের ব্যবস্থা করে সেগুলো নিয়ে যেতাম। নারী-শিশু ও বৃদ্ধ মানুষদের আমরা এসব কাপড় দিতাম, যতগুলো দেওয়া সম্ভব হতো।’
‘বিএনপির নেতাকর্মীদের অনুষ্ঠানে আসার উৎসাহ দেখে আমার কাছে মনে হয়েছে আমি পাশেই আছি। বিএনপির প্রতি মানুষের আস্থা, বিশ্বাস রয়েছে। এটি অর্জন করতে ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে যেতে হয়েছে, অনেকেই শহীদ হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে, অত্যাচারিত হয়েছেন, অন্ধ হয়েছেন। তার বিনিময়ে আজকের এই আস্থা ও বিশ্বাস। বিএনপি ডাকলে শত, হাজার, লক্ষ মানুষ আসে।’
তিনি বলেন, ‘আজ অনেকেই সংস্কারের কথা বলছেন। আমি কারও সমালোচনা করছি না। একটি পার্থক্য আছে, আমরা সংস্কার উপস্থাপন কখন করেছিলাম। শুধু এইবারই নয়, বিএনপি দেশের সংস্কার শুরু করেছিল জিয়ার শুরু থেকে। বাকশাল থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র। খালেদা জিয়ার সময় প্রেসিডেন্সিয়াল ফর্ম থেকে সংসদীয় পদ্ধতি এগুলো তো সংস্কারের অংশ। ধারাবাহিকভাবে আমরা সংস্কার করে আসার চেষ্টা করেছি, উদ্যোগ গ্রহণ করেছি এবং সংস্কার করেছি। সেটি শিক্ষা, সেটি প্রশাসন, সেটি স্বাস্থ্য, কৃষি, সবক্ষেত্রেই বিএনপি কোনও না কোনোভাবে সংস্কারে অবদান রেখেছে।’
৩১ দফার বিষয় সম্পর্কে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিজ্ঞা দৃঢ়, নিয়ত পরিষ্কার। আমরা যা বলেছি, আমরা তাই করবো। আমরা শুরু করবো, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম, পরবর্তী নেতাকর্মীরা সেটাকে চালিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা আগেই বলেছি, সংস্কার এমন একটি বিষয় যেটি চলমান। একটি সময়ের মধ্যে কিছু একটা করে যদি থেমে যায় তাহলে সেটি সংস্কার হতে পারে না।’
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘জনমানুষের যে প্রশ্ন, যে চাওয়া, তার সঙ্গে একটি মহলের চাওয়ার অমিল রয়েছে। একটি মহলের কাছে অন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে, যে রাজনৈতিক দলের ওপর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নির্ভর করে, বিশ্বাস রাখে, আস্থা রাখে, সেরকম একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা এতটুকু বার্তা সকলের কাছে পৌঁছে দিতে চাই। আমরা সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের বিভিন্ন যে দাবিদাওয়া আছে সবকিছুকে একসঙ্গে নিয়ে সংস্কার কার্যক্রম চালাতে চাই। আমরা চাই ঐক্যবদ্ধভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে। গণতন্ত্রে মতপার্থক্য থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা বসবো, আমরা আলোচনা করে সামনে এগিয়ে যাবো। কোনোভাবেই যাতে গণতন্ত্রের উত্তরণ, মানুষের ভোটের অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার বাধাগ্রস্ত না হয়। যদি বাধাগ্রস্ত হয়, সবকিছু ধ্বংস হবে, সবকিছু বাধাগ্রস্ত হবে। বিগত ১৫ বছর জনগণের রাজনৈতিক অধিকার, ভোটের অধিকারকে কেড়ে নেয়া হয়েছিল, ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল।’
‘তার ফলশ্রুতিতে আমরা দেখেছি দেশের বিচারব্যবস্থা, অর্থনীতি, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে। সমাজে বিভিন্ন রকম অধঃপতন শুরু হয়েছে, বিভিন্ন অনাচার শুরু হয়েছে। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে ইফেক্ট করেছে। অনেকটা ডায়াবেটিস রোগীর মতো। আমরা ৩১ দফা পালন করবো, সুযোগ পেলে ৩১ দফার বাস্তবায়ন করবো। একইভাবে যে সংগ্রামে রাজপথে নেমে এসেছিলাম, বিগত ১৫ বছর ধরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। যেই সংগ্রামের জন্য আমাদের বহু নেতাকর্মী গুম-খুনের শিকার হয়েছে। বহু নেতাকর্মী পঙ্গুত্ববরণ করেছে। তাদের এই বলিদানকে বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না।’
জনসম্পৃক্ততা নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের প্রতিজ্ঞা নিতে হবে, আজকের অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই কর্মশালা শেষ হবে না। ৩টি জেলার ২৩০০ প্রতিনিধি প্রত্যেককে এলাকায় গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে গিয়ে প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে ৩১ দফা পৌঁছে দিতে হবে। আমরা যতসংখ্যক মানুষকে ৩১ দফার মধ্যে নিয়ে আসতে পারবো তত বেশি দেশের সংস্কার কার্যক্রমকে চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবো। তত দ্রুত রাষ্ট্র মেরামত, শক্তিশালীভাবে মেরামত করতে সক্ষম হবো। জয়ী হতে হলে জনগণের কাছে যেতে হবে, সংস্কার কার্যক্রমের জন্য জনগণের কাছে যেতে হবে। জনগণ ছাড়া কোনও উপায় আমাদের নেই। নেতৃত্ব ও রাজনীতিকে টিকিয়ে রাখতে হলে জনগণের সঙ্গে থাকা ছাড়া কোন উপায় নেই। জনগণের সাথে থাকুন।’