দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় ভবেশ চন্দ্র রায়ের (৫৫) মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা করেছে পরিবার। মামলায় সুদের টাকার জন্য মানসিক চাপ সৃষ্টির ফলে অসুস্থ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকাল সোয়া ৪টার দিকে ভবেশ চন্দ্র রায়ের ছেলে স্বপন চন্দ্র রায় বাদী হয়ে বিরল থানায় মামলাটি করেন। বিরল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুস সবুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার আসামিরা হলেন- উপজেলার শহরগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের বাসুদেবপুর গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে আতিকুর ইসলাম (৪০), শহরগ্রাম এলাকার আব্দুস সাত্তারের ছেলে রতন ইসলাম (৩০), নওসিংহপাড়া এলাকার আব্দুল মাজেদের ছেলে মুন্না ইসলাম (২৭) ও পাঁচশালা গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে রুবেল হোসেন (২৮)। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও তিন-চার জনকে আসামি করা হয়।
মামলায় বাদী স্বপন রায় উল্লেখ করেছেন, তার বাবা ভবেশ চন্দ্র কৃষিকাজ করতেন এবং বিরল উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহসভাপতি ছিলেন। আতিকুর, রতন, মুন্না ও রুবেল এলাকায় সুদের ব্যবসা করেন। তারা ভবেশ চন্দ্রের পূর্বপরিচিত। আর্থিক সমস্যার কারণে ভবেশ এক বছর আগে আতিকুরের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা সুদের ওপরে নেন। মাসে তিন হাজার ২৫০ টাকা করে সুদ দিয়ে আসছিলেন। গত বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে প্রয়োজনীয় কথা আছে বলে ভবেশকে মোটরসাইকেলে করে নিয়ে যান তারা চার জন। এরপর থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ ছিল। ওই ব্যক্তিরা ভবেশকে ডেকে নিয়ে সুদের টাকার জন্য মানসিক চাপ সৃষ্টি করেন। মানসিক চাপের ফলে অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর রতন মোবাইল ফোনে বিষয়টি স্বপনকে জানান। দিনাজপুর শহরে থাকার কথা বলে স্বপন তার বাবাকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেন। পরে আবার তাকে ফোন দিয়ে বাবার অসুস্থতার কথা বলেন রতন। এরপর ওই ব্যক্তিরা একটি ভ্যানযোগে তার বাবাকে ফুলবাড়ী বাজারে এনে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে পালিয়ে যান। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বাবাকে নিয়ে রাত সোয়া ৯টায় দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ইসিজি করে বাদীর বাবাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এতে বোঝা যায়, আসামিরা ভবেশ চন্দ্রকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছেন।
বিরল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুস সবুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করবে পুলিশ।’
এর আগে পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, গত বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে রতন ও আতিকুরসহ চার জন দুটি মোটরসাইকেলে করে ভবেশের বাড়িতে আসেন। এরপর বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ফুলবাড়ী বাজারে যাওয়ার কথা বলে ভবেশকে তাদের মোটরসাইকেলে তুলে নেন। রাতে তার অসুস্থতার খবর পান স্বজনরা। সেখান থেকে হাসপাতালে নিলে মৃত্যু হয়। এতোদিন ভয়ে মামলা করেননি স্বজনরা।