রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক নারী চিকিৎসককে মারধরের অভিযোগে দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করছেন হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মচারীরা। এতে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও সেবা না পেয়ে ফিরে গেছেন তারা।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন বহির্বিভাগে গড়ে পাঁচ শতাধিক রোগী চিকিৎসা নেন। শনিবার থেকে চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন করায় দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা।
চিকিৎসক-কর্মচারীদের অভিযোগ, চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও পুলিশ মামলা রেকর্ড করেনি। অভিযুক্তকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত তাদের কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।
থানায় দেওয়া ভুক্তভোগী চিকিৎসকের লিখিত অভিযোগ ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা রাধারানী মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আতাউর রহমান বুকে ব্যথা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক সাবরিনা মুসরাত জাহান (৩০) ওই রোগীকে হৃদরোগে আক্রান্ত হিসেবে চিকিৎসাসেবা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। এরপর তিনি অন্য রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত হন। এ সময় সেখানে রোগী আতাউর রহমানের ছেলে তাহমিদ সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তারাগঞ্জের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে আরও চার থেকে পাঁচ জন মিলে চিকিৎসক সাবরিনাকে গালি দেন এবং শরীরে আঘাত করেন। এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে তাহমিদ সরকারসহ অজ্ঞাতনামা চার থেকে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে তারাগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দেন সাবরিনা মুসরাত। এরপর অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে কাল সকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
তবে চিকিৎসককে মারধধের অভিযোগ অস্বীকার করে তাহমিদ সরকার বলেন, ‘আমার বাবা হাসপাতালে ব্যথায় কাতরাচ্ছিল। ওই চিকিৎসককে বাবাকে দেখার জন্য অনুরোধ করছিলাম। তিনি না শুনে উল্টো আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এ নিয়ে তার সঙ্গে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছে। মারধরের কোনও ঘটনা ঘটেনি।’
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নারী চিকিৎসককে মারধরের ঘটনা কোনও অবস্থায় মেনে নেওয়া যায় না। এ ঘটনায় তারাগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পুলিশ মামলা রেকর্ড করছে না এমনকি অভিযুক্তদেরও গ্রেফতার করছে না। সেজন্য মামলা না নেওয়া এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত আমাদের কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা অনির্বাণ মল্লিক বলেন, ‘চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় যতক্ষণ পর্যন্ত আসামিকে গ্রেফতার হবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।’
তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। মামলা না নেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছি আমরা। পুলিশ সুপারের সঙ্গে একাধিকবার কথা হয়েছে। নির্দেশনা পেলে খুব শিগগির এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুবেল রানা বলেন, ‘নারী চিকিৎসককে মারধরের অভিযোগে কর্মবিরতি পালনের কথা শুনেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তারাগঞ্জ উপজেলার সমন্বয়ক শিহাব শারার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওই নারী চিকিৎসককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ মিথ্যা। তাহমিদ সরকারের বাবা অসুস্থ অবস্থায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন। ওই চিকিৎসক তাকে চিকিৎসা না দিয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলেন। তখন তার বাবাকে দেখতে চিকিৎসককে বারবার অনুরোধ করেন তাহমিদ। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছিল তাদের। মারধরের ঘটনা ঘটেনি। সেখানে আমাদের আরও লোকজন ছিল। পরে শুনেছি, ওই চিকিৎসক অন্তঃসত্ত্বা। সবার সামনে কথা কাটাকাটির বিষয়টি তার ইগোতে লাগায় মারধরের অভিযোগ তুলে এখন কর্মবিরতি পালন করছেন তারা। তবে তাদেরও বোঝা উচিত, অসুস্থ বাবার সঙ্গে চিকিৎসকের এই আচরণ যেকোনও সন্তানকে আঘাত করে। এটি বড় কোনও ঘটনা নয় যে, কর্মবিরতি পালন করতে হবে।’