বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলমকে রংপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে জাতীয় পার্টির নেতারা প্রতিরোধের যে ঘোষণা দিয়েছেন, সেটি গ্রহণ করে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন সারজিস আলম। তিনি বলেছেন, ‘শিগগিরই রংপুর বিভাগে ছাত্র-জনতার একটি মহাসমাবেশ করা হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুই ছাত্র উপদেষ্টাসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পুরো প্ল্যাটফর্ম রংপুরের ভূমিকে প্রকম্পিত করে দেখিয়ে দেবো, যেখানে ফ্যাসিস্টের দোসরদের ডানা-পাখনা গজানোর চেষ্টা হয়, সেগুলো আমরা রাজপথে গুঁড়িয়ে দিতে পারি।’
শনিবার (২৬ অক্টোবর) বিকালে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘রাষ্ট্র পুনর্গঠনে তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
সারজিস আলম বলেন, ‘গত ১৬ বছরে, বিশেষ করে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার সরকারকে যারা বৈধতা দিয়েছিল, তারা সবাই ওই ফ্যাসিস্টের দোসর। জাতীয় পার্টি যদি সংসদে আওয়ামী লীগকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা না করতো, তাহলে আওয়ামী লীগ ন্যূনতম যে বৈধতা পেয়েছিল, সেটা কী পেতো। এই জাতীয় পার্টির বন্ধুগণ, এই সুবিধাবাদীরা, নিজেরা বিরোধীদলীয় ভূমিকায় এসে একটা গাড়ি পাওয়ার জন্য, মন্ত্রিপাড়ায় একটা বাড়ি পাওয়ার জন্য, কিছু বেতন পাওয়ার জন্য, এমপির সিটটি পাওয়ার জন্য, টেন্ডারবাজি, সিন্ডিকেট ও চাঁদাবাজি করার জন্য। এখন এই ভণ্ডরা ভালো সাজতেছে। দেশকে এই অবস্থায় আনার জন্য এদের প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘গত ১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য বিএনপি-জামায়াতের ওপর কী নিষ্ঠুর নির্যাতন করেছে। বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছে। তখন কোথায় ছিল তথাকথিত বিরোধী দল। খুব শিগগিরই রংপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন মহাসমাবেশ করবে। সেখানে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহসহ আমরা সবাই উপস্থিত থাকবো।’
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বেরোবির ছাত্র উপদেষ্টা ইলিয়াছ প্রামাণিক ও প্রক্টর ফেরদৌস রহমান প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সংলাপ করছেন। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ। এ নিয়ে তারা দুজন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তারা জাতীয় পার্টিকে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের দোসর ও মেরুদণ্ডহীন ফ্যাসিস্টের দালাল হিসেবে উল্লেখ করেন। ওই পোস্টের পর জাপার নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। গত ১৪ অক্টোবর রংপুর শহরে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে এক সভায় হাসনাত ও সারজিসকে রংপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
এর ধারাবাহিকতায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম রংপুরে আসায় লাঠি নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে নগরের সেন্ট্রাল রোডের দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিল বের করে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পায়রা চত্বরে সমাবেশ করা হয়। এ সময় মিছিল থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলমের বিপক্ষে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন জাপার নেতাকর্মীরা।