সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন কুড়িগ্রামের তিন ব্যক্তি, এমনটাই দাবি নিহতের পরিবারের। এদের মধ্যে দুজন নির্মাণশ্রমিক এবং অপরজন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
শিক্ষার্থী না হলেও কোটাবিরোধী আন্দোলনে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন তারা। মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) পর্যন্ত কুড়িগ্রামের বাসিন্দা এই তিন জনের মৃত্যুর খবর তাদের পরিবারের তরফে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
নিহতরা হলেন নুর আলম (২২), গোলাম রব্বানী (১৬) এবং রায়হানুল ইসলাম (৩৫)। এদের মধ্যে নুর আলম ও গোলাম রব্বানী ঢাকায় নির্মাণশ্রমিকের কাজ করতেন।
নিহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নুর আলম গত শনিবার সকালে গাজীপুরের চৌরাস্তায় এবং গোলাম রব্বানী একই দিন বিকালে ঢাকার রামপুরা টেলিভিশন সেন্টারের সামনে সংঘর্ষে নিহত হন। তারও আগে গত শুক্রবার রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় জুমার নামাজ শেষে লিংক রোডে ভাড়া বাসায় ফেরার পথে রায়হানুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তিনি ছয় মাস আগে চাকরিতে যোগদান করেন।
ভুক্তভোগীদের পরিবারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উলিপুর পৌর এলাকার মালিপাড়ার বাসিন্দা রায়হানুল ইসলাম ওই গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে। নিহতের পরিবারে স্ত্রী ও চার মাস বয়সী শিশুসন্তান রয়েছে।
নির্মাণশ্রমিক নুর আলমের বাড়ি কুড়িগ্রাম সদরের ভোগডাঙা ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আমির হোসেন-নুর বানু দম্পতির ছেলে। বাবা-মা ও স্ত্রীকে নিয়ে তিনি গাজীপুরের চৌরাস্তা এলাকার তেলিপাড়া মহল্লায় ভাড়া থাকতেন। বাবা ভ্যানচালক, মা পোশাকশ্রমিক। ১০ মাস আগে বিয়ে করেন নুর আলম। স্ত্রী ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
আরেক নির্মাণশ্রমিক গোলাম রব্বানী নাগেশ্বরীর কেদার ইউনিয়নের পশ্চিম খামার গ্রামের হতদরিদ্র দিনমজুর সাইদুল হকের ছেলে। পরিবারের অভাব মেটাতে কিশোর বয়সেই রোজগারের ভার নিয়ে ঢাকায় নির্মাণশ্রমিকের কাজে গিয়েছিল। রাজনীতি কিংবা আন্দোলনে অংশ না নিলেও আন্দোলনের বলি হয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছে সেও। অভাব মেটাতে ঢাকায় গিয়ে ফিরেছে লাশ হয়ে। তার পরিবারেও বুকফাটা কান্না।
সংঘর্ষে মারা যাওয়ার পর নিহতদের মরদেহ নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। নিহত নুর আলমের মা নুর বানু বলেন, ‘আমার ছেড়ায় (ছেলে) কামে গেছিল। ফেরার সময় মাথায় গুলি লাগে। সে কোনও রাজনীতি করে না, আন্দোলনেও যায় নাই। কারে বিচার দিমু? আল্লার মাল আল্লায় নিছে। তার কাছেই বিচার দিলাম।’