মানবশরীরে অস্ত্রোপচারের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি রোবোটিক সার্জারি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশে এখনও চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু হয়নি। দেশে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এই অস্ত্রোপচার চালু এবং সুফলসহ নানা দিক নিয়ে কথা বলতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন রংপুর কমিউনিটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সার্জারি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. জাভেদ আখতার।
রবিবার (৩০ জুন) দুপুরে রংপুর কমিউনিটি মেডিক্যাল কলেজ অডিটরিয়ামে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। রোবোটিক সার্জারির বিষয়ে ভারত থেকে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে সনদ পেয়েছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে রোবোটিক সার্জারির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে ডা. জাভেদ আখতার বলেন, ‘রোবোটিক সার্জারি হলো রোবটের মাধ্যমে অস্ত্রোপচার। মূল কাজটি করেন একজন সার্জন। তিনি মনিটরের মাধ্যমে দেখে সব নির্দেশ দেন। সার্জনের হাত হিসেবে দায়িত্বটি পালন করে রোবট। রোবট বললেই যেমন একটা দৃশ্য আমাদের চোখে ভেসে ওঠে, ব্যাপারটা তেমন নয়। এটা একটা যন্ত্র, যার ভেতরে নির্দেশ পেয়ে সেই নির্দিষ্ট কাজ করার সিস্টেম সেট করা আছে। আমাদের দেশে এখন ল্যাপারোস্কপি হয় অনেক হাসপাতালেই। এ প্রক্রিয়ায় রোগীর শরীরে কয়েকটি ছিদ্র করে যন্ত্র প্রবেশ করিয়ে কাজটি সম্পন্ন হয়। আর রোবোটিক অস্ত্রোপচারে একটিমাত্র ছিদ্র হবে। যত বড় অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনই হোক, এই নিয়মে মাত্র একটি ছিদ্র দিয়ে তা করা হবে। মোট কথা এটার মাধ্যমে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে অস্ত্রোপচার করা হয়।’
এর মাধ্যমে যেকোনও অস্ত্রোপচার, যেটা ল্যাপারোস্কপিতে করা সম্ভব, সেটাও করা যাবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এখন ল্যাপারোস্কপিতে প্রায় সব ধরনের অস্ত্রোপচার করা হয়। এটিরও অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। তবে রোবোটিক সার্জারির সুবিধা হলো এটাতে জটিলতা কম। রোগীর রক্তপাতও কম হয়। এতে রোগীর সব ধরনের উপকার হয়। কয়েকটি ভালো দিক আছে। প্রথমত, চিকিৎসক ও রোগীর জন্য সময় কম প্রয়োজন হয়। রোগী দ্রুত সুস্থ হন। সেলাই শুকানোর জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। রোগীর ব্যথা কম হয়। শরীরে দাগ থাকে না। রোবোটিক সার্জারি একটি নন-টাচ (ছোঁয়াবিহীন) কৌশল, তাই সংক্রমণের ঝুঁকি একেবারেই নেই, যেটা সাধারণ অস্ত্রোপচারে কখনও কখনও ঘটে। এতে রোগী ভুক্তভোগী হন। অনেক সময় সেলাই শুকায় না বা অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতি থেকে সংক্রমণ ঘটে। রোবোটিকে এসব হয় না।’
তবে এটি ব্যয়বহুল চিকিৎসা পদ্ধতি উল্লেখ করে ডা. জাভেদ আখতার আরও বলেন, ‘রোবোটিক সার্জারির জন্য ভারতে ১৫০টি রোবট আছে। এমনকি নেপালেও আছে। চিকিৎসাসেবায় শতকরা ৯৩ শতাংশ রোবট ব্যবহার হয় আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। এখন বাংলাদেশকেও রোবোটিক সার্জারির দিকে যেতেই হবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই সার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। আগামী ৫ জুলাই রংপুর নগরীর আরডিআরএস মিলনায়তনে রোবোটিক সার্জারির ওপর ইন্টারন্যাশনাল সেমিনারের আয়োজন করেছি আমরা।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হৃদয় রঞ্জন রায়, রংপুর কমিউনিটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সার্জারি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আয়েশা নাসরিন সুরভী, সহকারী অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান ও সহকারী অধ্যাপক ডা. আহসানুর আপেল।