কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়ে বিচার না পেয়ে বিষপানে গৃহবধূর ‘আত্মহত্যার’ ঘটনায় গ্রেফতার প্রধান আসামি জয়নাল আবেদীন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। রবিবার (২ জুন) কুড়িগ্রামের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (রাজিবপুর আমলি) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় সে। বিকালে আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) হুমায়ুন কবির এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আদালত সূত্র জানায়, সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত জয়নাল আবেদীন ও আলম মিয়াকে রবিবার আদালতে নেওয়া হয়। এর মধ্যে জয়নাল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু তালেব মিয়া আসামির জবানবন্দি নথিভুক্ত করেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
জিআরও হুমায়ুন বলেন, ‘স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর বিকালে আসামিদের কুড়িগ্রাম কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
এর আগে চর রাজিবপুর উপজেলায় পাওনা টাকা আদায়ের নামে দিনের পর দিন সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন এক গৃহবধূ। এ ঘটনায় গৃহবধূ স্বামীসহ মামলা করতে গেলেও থানায় ঢুকতে না পেরে ফিরে যান তারা। স্থানীয় মাতব্বরদের কাছে বিচার চেয়ে না পেয়ে ক্ষোভে বিষপান করেন দম্পতি। পরে গৃহবধূর মৃত্যু হয়। পুরো বিষয়টিকে মর্মান্তিক ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন উল্লেখ করে ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
গৃহবধূর মৃত্যুর আগে দেওয়া জবানবন্দির অডিও রেকর্ড এবং স্বামী ও পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাড়ি মেরামত করার জন্য ধার নেওয়া ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে না পারায় গৃহবধূকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করে স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল। ধর্ষণের ভিডিও করে গৃহবধূকে ব্ল্যাকমেইল শুরু করে। একপর্যায়ে জয়নাল তার অপর সহযোগী শুক্কুর, আলম ও সোলেমানকে নিয়ে গৃহবধূকে দিনের পর দিন সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। দুই মাস ধরে এই পাশবিক নির্যাতন চালাতে থাকে তারা। পরে বাধ্য হয়ে ওই গৃহবধূ স্বামীকে সবকিছু জানান। স্থানীয় মাতব্বরদের কাছে বিচার না পেয়ে পরে স্বামী-স্ত্রী থানায় যান।
কিন্তু জয়নালের সহযোগী রবিউল নামে এক পুলিশ কনস্টেবল তাদের বিচারের আশ্বাস দিয়ে ফিরিয়ে দেন। একই দিন সন্ধ্যায় জয়নাল, শুক্কুর এবং কনস্টেবল রবিউল ও থানার গাড়িচালক মাজহারুলসহ স্থানীয় মাতব্বররা মিলে সালিশ বৈঠক বসান। সালিশে বিচার না পেয়ে পরদিন (২৪ মে) গ্রামবাসীর সামনে প্রকাশ্যে বিষপান করেন দম্পতি। একাধিক হাসপাতাল ঘুরে চার দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বাড়ি ফিরে গৃহবধূ মারা যান। স্বামী এখনও অসুস্থ অবস্থায় আছেন।
এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে নড়েচড়ে বসে পুলিশ। বিষপানের সাত দিন পর নিহতের মামা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে চার জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত জয়নাল ও তার এক সহযোগীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।