রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেন পর পর তিনবার এই জেলার সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন। এতে এই নেতা পরাজয়ের হ্যাটট্রিক করলেন।
এবার রংপুর সদর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আট হাজার ৯৬৭ ভোট পেয়ে তিনি পঞ্চম হয়েছেন। তার পরাজয়ে মহানগর আওয়ামী লীগসহ জেলার তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে প্রচণ্ড হতাশা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, বুধবার (২৯ মে) অনুষ্ঠিত রংপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আনারস প্রতীকের ইকবাল হোসেন ২৮ হাজার ২৬৭ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাব্বির হোসেন কাপ পিরিচ প্রতীকে পেয়েছেন ১৩ হাজার ৬৩৭ ভোট। আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুর রহমান ঘোড়া প্রতীকে পেয়েছেন ১১ হাজার ৪৫৯ ভোট।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাসুদ নবী মুন্না লাঙ্গল প্রতীকে ৯ হাজার ৭২৮ ভোট পেয়ে চতুর্থ হয়েছেন। মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেন আট হাজার
৯৬৭ ভোট পঞ্চম হয়েছেন।
অন্যদিকে বিএনপির সদর উপজেলা যুগ্ম আহ্বায়ক (সদ্য দল থেকে বহিষ্কৃত) আব্দুল কাইয়ুম ২৩৫ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন। শুধু তাই নয়, এই উপজেলা নির্বাচনে ডা. দেলোয়ার হোসেন, ছাত্রলীগ জেলা সভাপতি সাব্বির আহামেদসহ পাঁচ
হাই প্রোফাইল নেতা অংশ নিলেও তারা কেউই জয়ী হতে পারেননি। পাঁচ নেতার অন্যরা হলেন- আওয়ামী লীগ নেতা ফিরোজ কবীর চৌধুরী , জাহাঙ্গীর আলম বকশী ও আমিনুর রহমান।
এদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক উপজেলা চেয়ারম্যান পদে পর পর তিনবার পরাজিত হয়ে হ্যাটট্রিক করার ঘটনা নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। পাশাপাশি জেলা পর্যায়ে শীর্ষ নেতার শোচনীয় পরাজয় সাধারণ মানুষের মাঝে বিরূপ বার্তা দেবে বলে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন।
এই উপজেলায় এর আগে পর পর দুইবার বিপুল ভোটে জয়লাভ করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন নাসিমা জামান ববি। কিন্তু কিছুদিন আগে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি হওয়ার জন্য তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ
করেছিলেন।
নাসিমা জামান ববি বলেন, ২০১৪ সালে রংপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকলেও রংপুরের সব স্তরের নেতাকর্মী এবং জেলা আওয়ামী লীগ সম্মিলিতভাবে আমাকে চেয়ারম্যান পদে সমর্থন দিয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ডা. দেলোয়ার হোসেন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আমার কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন। এরপর ২০১৯ সালে আবারও আমাকে আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীক দিয়ে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছিলেন। সেই নির্বাচনেও দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে (তখন তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ছিলেননা) চেয়ারম্যান পদে আমার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সেবারও শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করেন।
এই এমপি বলেন, পর পর দুইবার পরাজিত হওয়ার পরও এবারের নির্বাচনে তিনি আবারও চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজয়ের হ্যাটট্রিক করলেন। যা আমাদের দলের জন্য লজ্জার। যিনি দলের নির্দেশ মানেন না, সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক নেই- তার পরাজয়ের হ্যাটট্রিক করা মানেই দলকে ছোট করা বলে আমি মনে করি।
এই বিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এবার দল কাউকে মনোনয়ন দেয়নি। এর আগেও তিনি দুইবার পরাজিত হয়েছিলেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে হলে এলাকায় জনপ্রিয়তা এবং নিজের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে হয়। এবার যিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন তিনি জনপ্রিয় বলেই বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। ডা. দেলোয়ার মানুষের বিশেষ করে ভোটারদের আস্থা অর্জন করতে না পারায় পঞ্চম হয়েছেন। দলের নেতাকর্মীরা তার পরাজয়ে হতাশ হয়েছেন এটা স্বাভাবিক।
অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহামেদ বলেন, সদর উপজেলা জেলা আওয়ামী লীগের অধীন। এখানে পাঁচ জন হাইপ্রোফাইল নেতা একসঙ্গে প্রার্থী হওয়া ঠিক হয়নি। এ বিষয়ে দেখার দায়িত্ব ছিল জেলার বর্তমান আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কদের- কিন্তু তারা তা করেননি। জেলা আওয়ামী লীগের বারোটা বেজে গেছে। দলীয় কার্যালয়ে এখন কোনও নেতাকর্মী যায় না বিশেষ দিন ছাড়া। ডা. দেলোয়ার হোসেন জনবান্ধব হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে পরাজিত প্রার্থী ডা. দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে বেশ কয়েকবার তার মোবাইল নম্বরে কল করা হলেও রিসিভ করেননি।