বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর খুরশিদ আলম বলেছেন, ‘এবার বাজেট হচ্ছে ৮ লক্ষ কোটি টাকার। বাজেট তো আর এমনি এমনি হয় না। মেগা প্রজেক্ট হচ্ছে। পদ্মা সেতু করেছি আমরা। অপপ্রচারকে আপনারা কেউ পাত্তা দেবেন না। আপনারা ডাটাবেজ নিয়ে কথা বলবেন। রেমিট্যান্স আবার বাড়ছে। যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে তাদের মাধ্যমে বিভ্রান্ত হবেন না। কোথায় আমাদের সমস্যা? তবে উদীয়মান অর্থনীতির নানা চ্যালেঞ্জ থাকে। এটা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। শ্রীলঙ্কা কোথায় গিয়েছিল? আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সিঙ্গাপুরের চেয়ে পাঁচ গুণ বড় আমাদের অর্থনীতি, নেপালের থেকে সাত গুণ বড়, ভুটানের চেয়েও বড়। আমরা দীর্ঘ পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের কোনও সমস্যা নাই। খেলাপি ঋণের বিষয়ে আমরা চেষ্টা করছি।’
গ্রাহকদের ব্যাংকিং বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শনিবার (১৮ মে) দুপুরে রংপুর বিভাগে গ্রাহক সচেতনতা সপ্তাহ-২০২৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। পঞ্চগড়ের চেম্বার ভবন মিলনায়তনে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন তিনি।
এ সময় ডেপুটি গভর্নর বলেন, ‘বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষেধ। কে বললো ভাই? বাংলাদেশ ব্যাংকে তথ্য দেওয়ার জন্য তিন জন মুখপাত্র নিয়োগ দিয়েছি। আপনার তো তথ্যের দরকার। তথ্যের দরকার হলে তথ্যের জন্য ১০০ বার যাবেন। প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানে একজন করে মুখপাত্র থাকে। সবার তো কথা বলার দরকার নাই। তিন জন মুখপাত্র আছে। তাদের কাছে যাবেন। সেখানে বসার যায়গা আছে। চায়ের ব্যবস্থা আছে। তারা যদি আপনাকে সেটিসফাই (সন্তুষ্ট) না করতে পারে আমরা চার জন ডেপুটি গভর্নর আছি- আমরা উত্তর দেবো। সমস্যা কোথায়? তাও বলা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের অবাধ প্রবেশ নিষেধ।’
তিনি বলেন, ‘অবাধ বলতে কী? অবাধে কোথায় যায়? আপনার একটা প্রাইভেট কোম্পানি কি আরেকটি কোম্পানিকে অবাধে কোনও কিছু দেবে? জার্নালিস্টকে দেবে যতই বন্ধু হন? অ্যাবসার্ড (অবাস্তব)। পৃথিবীর কোনও দেশে নাই। তাহলে আপনি বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে আপনারা অবাধে যেতে চান। আমিতো যেতে নিষেধ করিনি। আপনি তো যান না। আমার লোকজন আপনার জন্য রেডি হয়ে আছে। যদি কোনও কর্মকর্তার কাছে একাই যেতে চান, যান। ধরুন আমার কাছে একাই আসতে চান, আসুন। যেটা সিক্রেসি আইনে কাভার করে না। যতদূর খোলামেলা বলা যায় তারা বলে দেবে। কিন্তু আপনি রাষ্ট্রীয় সিক্রেসির তথ্য চাইবেন সেটা তো পারমিট করে না কেউ।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে খুরশিদ আলম বলেন, ‘আলটিমেটটলি (মূলত) আপনার উদ্দেশ্য দেশটার মঙ্গল আমাদেরও তাই। দেশটা হলো সবার। বঙ্গবন্ধু এটাই বলেছিলেন। এ দেশের মেহনতি মানুষের মুক্তি। সেজন্য প্রধানমন্ত্রীকে দেখেন, আমি ১৭টা ডিপার্টমেন্ট চালাতে হিমশিম খাই। আর প্রধানমন্ত্রী দেশ-বিদেশ সামলাচ্ছেন। কি পরিমাণ পরিশ্রম করছেন তিনি ভাবতে পারেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যাংকের ম্যানেজার পোস্টিং দিয়ে বসে আছি। সে কী করছে না করছে আমরা সুপারভাইজ করছি না। এটা চলবে না। এ বিষয়ে কোনও ছাড় দেওয়া হবে না। ব্যবহারে সফট কিন্তু নিজেকে কঠোর করতে হবে। এটা সেন্ট্রাল ব্যাংকের মেসেজ।’
ব্যাংকারদের উদ্দেশে ডেপুটি গভর্নর বলেন, ‘অর্থনীতি দিয়ে দেশটাকে এগিয়ে নিতে হবে আমাদের। সার্ভিস চার্জ কাটার আগে গ্রাহকদের মেসেজ দিন। আপনারা টিম পাঠাবেন। ব্যাংক ঋণ যদি ঠিক না থাকে তাহলে সমস্যা। অর্থনীতির ব্লাড হলো ফাইন্যান্স সেক্টর। সুতরাং আপনাদেরকে সরকারের ট্যাক্স যেমন আদায় করতে হবে গ্রাহক থেকে আবার তারা যেন হ্যারাস না হন। তারা যাতে অসন্তুষ্ট না হন। বাংলাদেশ এখন অনেক দেশের কাছে রোল মোডেল হিসেবে দাঁড়িয়েছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। পেছনে তাকানোর সময় নেই। মানুষের আয় বেড়েছে। অনেকে না জেনে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কর্মসূচিকে সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছে ব্যাংক এশিয়া পিএলসি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক নূরুল আমিন ও রুহুল আমিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্টের পরিচালক লিজা ফাহমিদা ও শায়েমা ইসলাম, ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাফিউজ্জামান।