প্রায় সাড়ে চার বছর পর বুধবার (২ আগস্ট) রংপুর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিভাগীয় মহাসমাবেশে যোগ দিতে আসছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে জেলাটি। সর্বত্র সাজ সাজ রব। সড়ক-মহাসড়ক ব্যানার, ফেস্টুন এবং তোরণে ছেয়ে গেছে। গত কয়েক বছরে এই অঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন হওয়ায় মানুষের চাওয়া-পাওয়ায় যোগ হয়েছে একগুচ্ছ দাবি। প্রধানমন্ত্রী তাদের দাবিগুলো পূরণ করবেন এই অপেক্ষায় রয়েছেন রংপুরবাসী।
জেলা প্রশাসন ও দলীয় সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকার পক্ষে জনসমর্থন চাইতে এই মহাসমাবেশের আয়োজন করেছে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। জেলা স্কুলের মাঠে নৌকার আদলে তৈরি করা হয়েছে সমাবেশের মঞ্চ। সকাল থেকে শুরু হবে সমাবেশ। এতে স্থানীয় ও দলের সিনিয়র নেতারা বক্তব্য দেবেন। দুপুর ২টায় শুরু হবে মূল অনুষ্ঠান। বিকাল ৩টায় সমাবেশে বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে দুপুর দেড়টায় হেলিকপ্টারযোগে রংপুরে পৌঁছাবেন এবং বিকাল সাড়ে ৫টায় ঢাকার উদ্দেশে বিভাগীয় শহর ত্যাগ করার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।
জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভা ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন দলের নেতাকর্মীরা। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত যেকোনো সমাবেশের চেয়ে বড় জমায়েত করতে চায় দলটি। যে কারণে পুরো নগরী সমাবেশস্থলে পরিণত করার কথা রয়েছে। কয়েক লাখ মানুষের জমায়েতের আশা করছেন তারা।
একগুচ্ছ দাবি
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে জেলার সাধারণ মানুষের মাঝে নতুন আশা জেগেছে। শেখ হাসিনার কাছে একগুচ্ছ দাবি তাদের। ইতোমধ্যে দাবি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগতম জানিয়ে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের মিছিল করেছে সোমবার। এতে উপস্থিত ছিলেন রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করা, নগরীর যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার নির্মাণ, নগরীর পাশ দিয়ে বাইপাস সড়ক নির্মাণ, তিনটি আন্তনগর ট্রেন চালু, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, উন্নয়ন বৈষম্য দূরীকরণে মেগা প্রকল্প গ্রহণ, শ্যামা সুন্দরী খাল খননে প্রকল্প গ্রহণ, মোগলহাট শুল্ক স্থলবন্দর বাস্তবায়ন ও নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী প্রকল্প গ্রহণ।
সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘এই অঞ্চলের মানুষের জন্য উন্নয়ন বরাদ্দ কম আসে। তেমন মেগা প্রকল্প নেই। তাই আমরা চাই, রংপুর বিভাগকে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আরও বেশি উন্নয়নের ঘোষণা আসুক। বিশেষ করে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, ভাঙনরোধে প্রকল্প গ্রহণ, রংপুরে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, ওয়াসা গঠন, সিটি করপোরেশনের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ এবং বৈষম্য দূরীকরণে মেগা প্রকল্প গ্রহণের দাবি আমাদের। এসব দাবি বাস্তবায়ন হলে দুঃখ-দুর্দশা ও বৈষম্য দূর হবে এই অঞ্চলের মানুষের।’
সমাবেশস্থল পরিদর্শন ওবায়দুল কাদেরের
মঙ্গলবার দুপুরে সমাবেশস্থল পরিদর্শনে এসে সব প্রস্তুতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নিজেই রংপুরের উন্নয়নের রূপরেখা ঘোষণা করবেন। কারণ রংপুরের উন্নয়নের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন তিনি।’
আওয়ামী লীগের গত সাড়ে ১৪ বছরের শাসনামলে বিভাগের আট জেলার প্রতিটি উপজেলায় অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মহাসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী রংপুরের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারসহ পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। প্রায় ১২৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং রংপুর সিটি করপোরেশনের অধীনে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হবে।’
উন্নয়নের কথা বলছেন জেলার নেতারা
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজু বলেন, ‘২০০৮ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার রংপুরে অনেক উন্নয়ন করেছে। আরও উন্নয়ন প্রকল্পের আশা করছি আমরা।’
মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলে গত কয়েক বছরে রংপুর সিটি করপোরেশন গঠন, রংপুর মেট্রোপলিটন, পীরগঞ্জে মেরিন একাডেমি স্থাপন, ঢাকার সঙ্গে রংপুরের ছয় লেনের মহাসড়কসহ বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার হাসপাতালসহ বেশ কিছু প্রকল্প উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। এসব উন্নয়নের পাশাপাশি তিস্তা অববাহিকার লাখ লাখ মানুষের দুর্দশা লাঘবে তিস্তা মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর সফর থেকে নতুন করে উন্নয়নের ঘোষণা আশা করছেন জেলাবাসী।’
মহাসমাবেশের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বুধবার সকাল থেকে বিভাগের জেলা ও উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা সমাবেশে আসবেন। কয়েক লাখ মানুষ সমাবেশে যোগ দেবেন।’
তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের রংপুর বিভাগের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, প্রধানমন্ত্রী এবার তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়ে যাবেন। এটি বহুল প্রতিক্ষিত দাবি আমাদের।’
আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রংপুরে আগমন উপলক্ষে ঘরে ঘরে আনন্দের বন্যা বইছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে রংপুরের প্রতিটা মানুষ প্রধানমন্ত্রীর আসার অপেক্ষায় আছেন। প্রধানমন্ত্রীর আগমনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আমরা আশা করছি, সব শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেবেন। শুধু জেলা স্কুল মাঠ নয়, গোটা শহর মানুষের উপচে পড়া ভিড়ে জনসমুদ্রে পরিণত হবে।’
জনসভায় আসতে ৮ রুটে বিশেষ ট্রেন
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের ৫৮টি উপজেলার প্রায় প্রতিটি থেকে প্রায় তিন-চার হাজার মানুষ যোগ দেবেন জনসভায়। বিভাগের সব জেলা-উপজেলা থেকে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আটটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ট্রেনগুলো দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন জেলা থেকে বুধবার রংপুর আসবে। সেইসঙ্গে দিনাজপুর থেকে ৩১৬টি বাস, কয়েকশ মাইক্রোবাস এবং প্রায় ৩০ হাজার মোটরসাইকেল নিয়ে লক্ষাধিক নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দেবেন বলে জানা গেছে।
রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ‘রংপুর বিভাগের প্রতিটি জেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যোগাযোগ করেছেন। বুধবার আটটি ট্রেন তারা ব্যবহার করবেন। অন্যান্য ট্রেনের সময়সূচিতে যেন কোনও ব্যাঘাত না ঘটে, সেভাবেই সাজানো হয়েছে। ট্রেনের ভাড়া দলের স্থানীয় নেতারা পরিশোধ করবেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবশেষ রংপুরে এসেছিলেন ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর। এ সময় তিনি রংপুরের দুটি উপজেলায় নির্বাচনি জনসভা করেন। সাড়ে চার বছর পর তিনি রংপুরে আসছেন। এর আগে ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি রংপুর জিলা স্কুল মাঠে মহাজোটের জনসভায় রংপুরের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজ কাঁধে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।