গার্মেন্ট কারখানা খুলে যাওয়ায় রংপুর থেকে রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিনই যাচ্ছেন শত শত মানুষ। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় তারা যে যেভাবে পারছেন ঢাকায় যাচ্ছেন। ট্রাকে করে অভিনব পদ্ধতিতে তারা যাচ্ছেন ঢাকায়। ট্রাকের ভেতরে ৩০-৪০ জন নারী-পুরুষ বসিয়ে দিয়ে চারদিকে পলিথিন দিয়ে শক্ত রশি দিয়ে বেঁধে দেওয়া হচ্ছে, যাতে বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে ভেতরে পণ্য রয়েছে। এভাবেই রংপুর থেকে শত শত মানুষ ঢাকায় যাচ্ছেন।
ট্রাকে করে ঢাকায় যাওয়া বেশিরভাগই গার্মেন্ট শ্রমিক। তারা গাজীপুর, চন্দ্রা, সাভার, আশুলিয়ার বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন।
সরেজমিন পায়রাবন্দ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে শতাধিক নারী-পুরুষ জটলা করে দাঁড়িয়ে আছেন। তারা সবাই গার্মেন্ট কারখানায় কাজ করেন। তাদের বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ, কাউনিয়া, বদরগঞ্জ, গঙ্গাচড়া উপজেলাসহ কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন স্থানে। সবাই ঢাকায় যাওয়ার জন্য গাড়ির অপেক্ষায়। করোনা পরিস্থিতির কারণে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় তারা অপেক্ষা করছেন পণ্যবাহী ট্রাক বা অন্য যানবাহনের।
পায়রাবন্দে বেগম রোকেয়ার বাড়ি যাওয়ার প্রবেশ পথে বিশাল তোরণের সামান্য দূরে একটি ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সেখানে থাকা ট্রাকের দালালরা বললেন মালামাল লোড করা হচ্ছে। অন্যদিকে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দুই যুবক বললেন মালামাল নয়, মানুষ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ট্রাকে করে। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তড়িঘড়ি করে ট্রাকটি পায়রাবন্দের দিকে চলে যায়। কিছুদূরে গিয়ে ট্রাকটি থামায় ড্রাইভার। এরপর ট্রাকের ওপর পলিথিন দিয়ে ঢেকে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। ট্রাকের কাছে যেতেই মানুষের কথা বলার শব্দ ভেসে আসে। এরপর ট্রাকের ওপর উঠে পলিথিনের কিছু অংশ খুলে দেখা যায় ভেতরে ৩০-৩৫ জন বসে আছেন।
এভাবে কেন যাচ্ছেন জানতে চাইলে তারা বলেন, গার্মেন্ট কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। এদিকে সরকার ঘরে থাকতে বললেও ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ ফোন করে তাদের দ্রুত কাজে যোগ দিতে বলেছেন। দুই দিনের মধ্যে না আসলে চাকরি থাকবে না। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এভাবে যাচ্ছেন। কারণ চাকরি না থাকলে পরিবার-পরিজন নিয়ে কী করে খাবো?
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ থেকে আসা গার্মেন্টকর্মী আমিনা বেগম বলেন, ‘কাজে যোগ দিতে কর্তৃপক্ষ ফোন করছে। আর সরকার বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে। কী করবো? তাই জীবন বাজি রেখে যাচ্ছি। জানি না যেতে পারবো কিনা।’
একই কথা জানালেন গঙ্গাচড়া থেকে আসা মমতাজ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমরা দালালদের মাধ্যমে জনপ্রতি ১২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা দিয়েছি। আমাদের গাজীপুরে নামিয়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।’
ট্রাকচালক সালাহ উদ্দিন মিয়া বলেন, ‘এমনি ট্রাকে করে মানুষ নিয়ে গেলে পুলিশ ট্রাক আটকাবে। তাই বাধ্য হয়ে সবাইকে বসিয়ে ট্রাকের ওপর পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। তারপরেও ঘাটে ঘাটে পুলিশকে টাকা দিতে হবে।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানালেন, এভাবেই মঙ্গলবার সকাল থেকে চারটি ট্রাকে করে দুই শতাধিক গার্মেন্ট শ্রমিক ও মানুষ গেছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে মিঠাপুকুর থানার ওসি জাফর আলী বিশ্বাস বলেন, ‘এভাবে তো মানুষ নিয়ে যাওয়া অমানবিক। আমরা বিষয়টি দেখছি।’
