X
বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
১০ বৈশাখ ১৪৩২

গোলাভরা ধান থাকলেও ঈদ আনন্দ নেই কৃষকের

হালিম আল রাজি, হিলি
২৮ মে ২০১৯, ১১:৫৫আপডেট : ২৮ মে ২০১৯, ১২:০৯

মাঠ থেকে ধান কাটছেন কৃষকরা বোরো ধানের বাম্পার ফলন সত্ত্বেও দাম পায়নি কৃষক। উৎপাদন খরচও উঠছে না তাদের। অনেকেই ঋণ পরিশোধ করতে গরু-ছাগল বিক্রি করছেন। এরই মধ্যে দুয়ারে কড়া নাড়ছে ঈদ। কিন্তু দিনাজপুরের হিলির কৃষক পরিবারে নেই উৎসবের আমেজ। চরম অর্থকষ্টে দিন কাটছে তাদের। ধানের দামের প্রভাব পড়েছে হিলির ঈদ বাজারেও। ঈদের কয়েকদিন বাকি থাকলেও জমেনি কেনাকাটা।

কৃষকরা জানিয়েছেন, অর্থাভাবে বেশিরভাগ পরিবারেই এখনও নতুন জামাকাপড় কেনা হয়নি। কেউ কেউ বিভিন্ন দোকানের ঋণ শোধ করতে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। টাকা না থাকায় হিলির কৃষক পরিবারের বেশিরভাগই এবার বঞ্চিত হবেন ঈদ আনন্দ থেকে।

হিলির রাঙ্গামাটি গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘লাভের আশায় এবার ২ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছিলাম। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও পোকামাকড়ের তেমন কোনও উপদ্রুপ না থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। বিঘা প্রতি  ১৮-২০ মণ ধান পেয়েছি। ফলন ভালো হলেও ধান চাষ করে কোনও লাভ হচ্ছে না। কারণ ধানের দাম নেই। ধান উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৮০০ টাকার মতো। বর্তমানে প্রতিমণ ধান বিক্রি করতে হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকায়। ফলে প্রতিমণ ধানে ২০০-৩০০ টাকার মতো লোকশান গুনতে হচ্ছে।’

মাঠ থেকে ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছেন কৃষক তিনি আরও বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন করতে আমাদের খরচ হচ্ছে ১১-১২ হাজার টাকা। বিঘাপ্রতি ধান বিক্রি হচ্ছে ৮-৯ হাজার টাকার। এতে বিঘাপ্রতি ৩-৪ হাজার টাকা করে লোকশান হচ্ছে। তারপরও কেউ ধান নিতে চাচ্ছেন না। ফলে আমরা ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছি। আমরা ধান চাষ করে সর্বস্বান্ত হচ্ছি। মাত্র কয়েকদিন পরেই ঈদ। ঈদের আগে ধান ঘরে আসায় খুশি হয়েছিলাম। এখন তো সেই ধান গলার কাটা হয়ে গেছে।’

শুধু জাহাঙ্গীর নয়, ঈদের আনন্দ মলিন হতে বসেছে হাকিমপুর উপজেলার একাধিক কৃষক পরিবারে। লোকসানের মুখে পড়ে কৃষিকাজে আস্থা হারাচ্ছেন এ অঞ্চলের হাজার হাজার কৃষক। লোকসান থেকে বাঁচতে সরকারের কাছে ধানের ন্যায্যমূল্যের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হিলির জালালপুর গ্রামের কৃষক সুজন হোসেন ও স্বপন হোসেন বলেন, এ বছর ঋণ করে ধান আবাদ করে লোকসান গুনতে হয়েছে। আগামীতে তারা ধানের আবাদ করবেন না। এই লোকসান কীভাবে পোষাবেন তাও জানেন না।  দেনা-পাওনা পরিশোধ করতে বাধ্য হয়ে গরু-ছাগল বিক্রি করছেন। ঈদে পরিবারের সবাই নতুন কাপড় পরে আনন্দ করে। এবার সেই আনন্দও তাদের নেই।

অন্যান্য বছরে এসময় উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে ক্রেতাদের ব্যাপক সমাগম থাকে, জমজমাট কেনাবেচা হয়। এ বছরের দৃশ্য খানিকটা ভিন্ন। বর্ণিল সাজে দোকানগুলো সাজানো হয়েছে, ক্রেতা আকর্ষণের জন্য রয়েছে র‌্যাফেল ড্র। তারপরও ক্রেতাদের উপস্থিতি খুবই কম।

ক্রেতা শূন্য দোকান

শুধু ঈদ বলেই নয়, মাঠে ধান কাটা, মাড়াই শুরু হলে স্থানীয় বাজারগুলোয় বিকিকিনি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। কিন্তু এ বছর ঈদেও জমে উঠেনি বাজার। ঈদের বাজারে এখনও ক্রেতা শূন্য।

হিলি বাজারের ললো ফ্যাশন জোনের মালিক জয়ন্ত চক্রবর্তী বলেন, ‘প্রতিবছর ঈদ মৌসুমে, কৃষকদের ধান কাটা শুরু হলেই বাজারে ব্যাপক ক্রেতাদের সমাগম ঘটে। সেসময় আমাদের বিক্রিও ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। প্রতিবছর এমন সময় ক্রেতাদের চাপে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। কিন্তু এবছর চিত্র পুরোপুরি উল্টো। ঈদের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকলেও আশানরূপ ক্রেতা নেই মার্কেটে। ধানের দাম কম থাকায় কেনাকাটায় তেমন আগ্রহ নেই কৃষকদের। যার কারণে বাজারে ক্রেতা কম।

তিনি আরও বলেন,  ‘প্রতিবছর ঈদে ব্যবসা করে মহাজনদের দেনা-পাওনা মেটাই। এবার মহাজনদের পাওনা শোধ করা সম্ভব হবে না।’

 

 

/এসটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এস আলমের ৪০৭ কোটি টাকার ১৫৯ একর জমি জব্দ
এস আলমের ৪০৭ কোটি টাকার ১৫৯ একর জমি জব্দ
আনারস খেলে এত উপকার পাওয়া যায় জানতেন?
আনারস খেলে এত উপকার পাওয়া যায় জানতেন?
নাফ নদ থেকে দুই জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি 
নাফ নদ থেকে দুই জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি 
বিএফডিসি’র সক্ষমতা বাড়াতে সরকার বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে: তথ্য উপদেষ্টা
বিএফডিসি’র সক্ষমতা বাড়াতে সরকার বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে: তথ্য উপদেষ্টা
সর্বাধিক পঠিত
কাশ্মীরে হামলা: সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করলেন মোদি
কাশ্মীরে হামলা: সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করলেন মোদি
‘সংসদ ভবনে পালিয়ে ছিলেন শিরীন শারমিন-পলকসহ ১২ জন’
‘সংসদ ভবনে পালিয়ে ছিলেন শিরীন শারমিন-পলকসহ ১২ জন’
লাহোরের খরুচে বোলিংয়ের রাতে সর্বোচ্চ উইকেট রিশাদের
লাহোরের খরুচে বোলিংয়ের রাতে সর্বোচ্চ উইকেট রিশাদের
কাশ্মীর ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদিকে প্রধান উপদেষ্টার বার্তা
কাশ্মীর ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদিকে প্রধান উপদেষ্টার বার্তা
কারাগারে পাঠানো আওয়ামীপন্থি সেই ৬১ আইনজীবীর হাইকোর্টে জামিন
কারাগারে পাঠানো আওয়ামীপন্থি সেই ৬১ আইনজীবীর হাইকোর্টে জামিন